বন্ধ করুন যুদ্ধ আর অস্ত্রের খেলা

বিশ্ব নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

| বুধবার , ১৮ অক্টোবর, ২০২৩ at ১০:১১ পূর্বাহ্ণ

যুদ্ধ আর অস্ত্রের খেলা বন্ধ করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আবারও আহ্বান রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমি একজন নারী নেতা, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে না, আমি একজন মা হিসাবে বিশ্ব নেতাদের কাছে অনুরোধ করব, বন্ধ করেন এই যুদ্ধ, বন্ধ করেন এই অস্ত্রের খেলা, এই অস্ত্রের প্রতিযোগিতা।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার ধানমন্ডিতে জয়িতা টাওয়ার উদ্বোধন শেষে গণভবনে এক আলোচনা সভায় সরকারপ্রধানের এ আহ্বান আসে। শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের অতিমারী, রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ, সেই যুদ্ধের কারণে স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশন, সমস্ত আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের চাল উৎপাদন যথেষ্ট। আমাদের লাগে দুই কোটি মেট্রিক টন, সেখানে উৎপাদিত হয় চার কোটি মেট্রিক টন। কিন্তু আমাদের গম আনতে হয়, চিনি আনতে হয়, ভোজ্যতেল আনতে হয়, জ্বালানি তেল আনতে হয়, গ্যাস আনতে হয়, ডাল আনতে হয়। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। জাহাজের ভাড়া বেড়ে গেছে, যে কারণে আজকের মূল্যস্ফীতি। খবর বিডিনিউজের।

এই সংকট সামাল দিতে দেশের নারীদেরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি আহ্বান করব আমার বোনদেরকে, যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, গাছ লাগান, তরিতরকারি যে যা পারেন। কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে। মূল্যস্ফীতি এবং খাদ্যমন্দা বাংলাদেশে যেন আসতে না পারে। আমরা নিজেদের উপার্জন নিজেরা করব, নিজের পায়ে দাঁড়াব। কারও কাছে হাত পেতে চলব না। মাথা উঁচু করে চলব। নারীরা যদি কাজ করে, উপার্জন করে, তবে কারও মুখাপেক্ষী হতে হবে না। কেউ আর দূর দূর করতে পারবে না, আন্দোলন করে অধিকার আদায় করতে হবে না। অধিকারটা নিজের কাজের মধ্য দিয়ে, জ্ঞানের মধ্য দিয়ে অর্জন করব। তিনি বলেন, আজকে পৃথিবী জুড়ে এক যুদ্ধের দামামা আমরা দেখতে পাই। কিছুদিন আগে ইউক্রেনরাশিয়ার যুদ্ধ, এখন আবার ইসরায়েলপ্যালেস্টাইন যুদ্ধ। প্যালেস্টাইনের তো অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে ফেলেছে, সেখানে এই যে যুদ্ধ, এই যুদ্ধ আমরা চাই না।

শক্তিধর দেশগুলোকে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে কষ্ট পায় আমাদের মেয়েরা এবং শিশুরা। যুদ্ধের সময় আমার বাবাকে বন্দি করা হয়, আমরাও বন্দি ছিলাম।

নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে বলেই দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, আর এখন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতা দখল করে এবং তাদের যে বন্দুকের নল দিয়ে ক্ষমতা দখল, তাদের যে সন্ত্রাসী চেহারা, আজকে তো সারা দেশ দেখছে, কীভাবে মেয়েদের ওপর অত্যাচার করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আজকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। ওই লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, অর্থ আত্মসাৎকারী, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, অস্ত্র চোরাকারবারি, এরাই দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। আজকে আওয়ামী লীগ আছে বলেই দেশে গণতন্ত্র আছে, মানুষের অধিকার নিশ্চিত আছে, অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। নারীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে প্রতিটি জায়গায় মেয়েদের অধিকার সুনিশ্চিত করতে পেরেছি। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয়েছে, কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে। কাজেই আমাদের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে।

নারী উদ্যোক্তাদের জয়িতা ব্র্যান্ডের আওতায় নানামুখী ব্যবসা উদ্যোগে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এদিন ঢাকার ধানমন্ডিতে ১২ তলা জয়িতা টাওয়ার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি জামদানি গ্যালারি এবং জয়িতা মার্কেট প্লেসও উদ্বোধন করেন। পরে আলোচনা সভায় তিনি বলেন, একজন নারীর জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সব থেকে বড় কথা। এই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে পারলেই মেয়েদের কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। জয়িতা টাওয়ার করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাই যে, গ্রামগঞ্জের মেয়েরা ঘরে বসে যা উৎপাদন করবে, এখন তো অনলাইনেই কেনাবেচা করতে পারে। জয়িতা টাওয়ারে যাতে মেয়েরা তাদের উৎপাদিত জিনিস প্রদর্শন করতে পারে, নিজেরা উদ্যোক্তা হতে পারে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের প্রবাসীদের মেধাবী ও প্রতিবন্ধী সন্তানরা পাচ্ছে ভাতা
পরবর্তী নিবন্ধমুহাম্মদ আবদুল রউফ