তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের অবৈধ ইটভাটাসমূহ যেন সচল থাকতে না পারে সেজন্য চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসককে এক সপ্তাহের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। আদালতের আদেশ প্রতিপালনে রাঙামাটিতে অনুমোদন ছাড়া গড়ে ওঠা ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসন বন্ধ করে দিলেও মাসখানেকের মধ্যে আবারও চালু হয়েছে জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার তিনটি অনুমোদনবিহীন ইটভাটা। বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরীণ আক্তারের নেতৃত্ব উপজেলার তিনটি ইটভাটায় (এমএমসি, কেবিএম ও ফাইভ স্টার) অভিযান চালিয়ে তিন ভাটা মালিককে আড়াই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে পানি ছিটিয়ে কয়েক হাজার কাঁচা ইট ধ্বংস করে ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। টাঙানো হয় ভাটা বন্ধের নোটিশও।
তবে সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাঘাইছড়ি উপজেলায় তিনটি ইটভাটা এমএমসি, কেবিএম ও ফাইভ স্টার সচল করেছেন ভাটা মালিকরা। বন্ধ করার এক মাসের মধ্যেই সচল হয়ে গেছে ভাটাগুলো।
ইটভাটাগুলোয় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইউএনও শিরীণ আক্তারের কাছে ইটভাটা তিনটি পুনরায় সচল হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি দেখছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলার লাইসেন্সবিহীন ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে ২০২২ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করে। রিট আবেদনটি দায়েরের শুনানি শেষে আদালত বিবাদীদের প্রতি রুল জারি করে এবং অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এবং আদালতে তাদের কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো প্রতিবেদন দাখিল না করায় চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি রিট শুনানিতে আবারও পার্বত্য তিন জেলার অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। আদালতের নির্দেশনার পর আবারও তড়িঘড়ি করে ইটভাটা বন্ধের কার্যক্রম শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন।
ন্যাচার অ্যান্ড বায়োডাইভার্সিটি অব সিএইচটির সংগঠক রিকোর্স চাকমা আজাদীকে বলেন, আদালতের আদেশের পর কদিন স্থানীয় প্রশাসন তড়িঘড়ি কর ভাটাগুলো বন্ধের কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে আবার চালু হচ্ছে ভাটাগুলো। ভাটা বন্ধের পর সেটি পুনরায় চালু হচ্ছে কিভাবে? এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে সারা বছরই ভাটা সচল হবে আর বন্ধ করা হবে। প্রশাসন প্রাণ–প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় আন্তরিক হবেন বলে আমরা আশা করি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, এ বিষয়ে আমাকে আইনগত মতামত দেখে দিতে হবে। এ বিষয়ে আপনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে ফোন করতে পারেন, যেহেতু মোবাইল কোর্টগুলো তিনি দেখেন।
রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) পাঠান মো. সাইদুজ্জামান বলেন, বন্ধ করে দেওয়া ইটভাটা চালুর কোনো সুযোগ নেই। সেটা বন্ধ থাকার কথা। আমরা এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।
পরিবেশ অধিদপ্তর রাঙামাটি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. মুমিনুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, দেশের নাগরিক হিসেবে মহামান্য হাই কোর্টের আদেশ আমাদের কারোই অমান্য করার সুযোগ নেই। মহামান্য হাই কোর্টের আদেশ প্রতিপালন হিসেবে বাঘাইছড়ির তিনটি ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছে বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু সম্প্রতি ইটভাটা তিনটি চালুর খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আমরা চার্জশিট দেওয়ার সময় আইন অমান্য করে ভাটা চালু করা মালিকদের বিষয়ে আলোকপাত করব।