বন্ধ হয়ে যাওয়া আমিন জুট মিল পরিচালনার পাশাপাশি নগরের জহুর হকার্স মার্কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ করে হকার পুনর্বাসনে আগ্রহী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তবে উচ্চ ভাড়ার জন্য আমিন জুট মিল পরিচালনা এবং বর্তমান ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহই জহুর হকার্স মার্কেটে বহুতল ভবন নির্মাণে বাধা হয়ে আছে। এরপরও আলোচনার মাধ্যমে এ দুই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দপুরে টাইগারপাস অস্থায়ী নগর ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেন মেয়র।
ডা. শাহাদাত বলেন, পলিথিন বন্ধের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু জনগণকে তো আমার পলিথিনের বিকল্প দিতে হবে। এর বিকল্প হতে পারে পাটের ব্যাগ। কিন্তু আমাদের আমিন জুট মিল চালু নেই। সেখানে দুই হাজারের ওপর শ্রমিক ছিল। তাদের কর্মসংস্থান নেই, এখন বেকার। পাশাপাশি আমার পাট জাতীয় কোনো জিনিস বের হচ্ছে না। আমাকে আনতে হবে সেই নারায়ণগঞ্জ কিংবা ঢাকা থেকে। সুতরাং আমার চট্টগ্রামে একটা পাটশিল্প থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, আমিন জুট মিল যদি থাকত এবং সেই জুট ব্যাগ যদি বের হত, তাহলে কালকেই আমি গিয়ে গিয়ে অভিযান চালিয়ে সমস্ত পলিথিন বের করে ফেলতাম। জনগণকে হাতে দেওয়ার মত তো আমার কিছু নেই। কাজেই আমি মনে করি–সরকার যদি উদ্যোগ নেয়, আমরা সিটি কর্পোরেশন সেটা টেক ওভার করতে পারব। ইতোমধ্যে আমি পাট মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম। সচিবের সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে। উনি সিটি করপোরেশনকে দিতে চান। কিন্তু এত ভাড়া বলেছেন, সেটা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট ছাড়া নেয়াটা দুরূহ।
মেয়র সরকার ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, যদি তারা উদ্যোগ নেয় এবং বলে যে ভাড়াটা ৫০ লাখ চাচ্ছে, সিটি কর্পোরেশনকে এটা দিলাম। তারা ভাড়াটা ১০ লাখ দিবে। আমরা দিতে পারব। আমরা তো পাশাপাশি কিছু কর্মসংস্থানও করছি।
তিনি বলেন, আমিন জুট মিলে মেশিনগুলো আছে কিন্তু। যদি আবার শুরু করি সেগুলো রিমডেলিং করতে ১৫–২০ কোটি টাকা লাগবে। আমি নিজে সরেজমিন গিয়েছি। এ ধরনের উদ্যোগ সরকারি পর্যায়ে উৎসাহিত করলে বেশি পরিমাণে আমরা করতে পারব।
তিনি বলেন, আমিন জুট মিল চালুর বিষয়ে আমি আগ্রহী। তবে বেশি ভাড়া হলে আমরা পারব না। কম ভাড়া হলে আমরা নেব। যেহেতু কর্মসংস্থান হবে তাই ভাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার আমাদের হাতে দায়িত্ব দিতে পারে। এটি পেলে আমরা পাটপণ্য সহজে মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে পারব। বিকল্প দিতে পারলে জনগণ অবশ্যই পাট পণ্য ব্যবহার করবে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল আমিন জুট মিলও। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বন্ধ থাকা পাটকলটি পরিদর্শন করেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন।
জহুর হকার্স মার্কেট প্রসঙ্গে ডা. শাহাদাত বলেন, ২০০ গণ্ডা জায়গার উপর জহুর হকার্স মার্কেট গড়ে উঠেছে। মাত্র ৭০০–৮০০ ব্যবসায়ী এটা দখল করে আছে। অথচ এখানে বহুতল, ২০ তলা ভবন হতে পারে। তখন তিন থেকে পাঁচ হাজার হকারকে সেখানে পুনর্বাসন করা যাবে। এই যে নিউ মার্কেট থেকে লালদীঘি পর্যন্ত যত হকার তাদের সেখানে পুনর্বাসন করা যাবে। আমি তাদের ( জহুর হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীদের) ডেকেছি, বলেছি এখন একটা থাকলে প্রয়োজনে দুইটা দোকান দিব, তারপরও বহুতল ভবন গড়ে তুলি। তারা বলে, এটার তো আমরাই মালিক, আমাদের লিখে দিছে, আমরা ছাড়া কেউ বসতে পারবে না। অথচ এটা ডিসি থেকে লিজ নেয়া।
তিনি বলেন, অতীতে দায়িত্ব পালন করা মেয়রদের আমলে জিইসি মোড়ে সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে লিজ দেয়া হয়েছে জানিয়ে বলেন, প্রতি স্কয়ার ফিট মাত্র ২ টাকায় ৯০ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ১০ কোটি টাকা বিজয় টিভিকে দিয়ে দিছে। স্বাধীন একটা এনজিওকে চার কোটি টাকা দিয়ে দিছে, এর মধ্যে দুই কোটি টাকা দিছে বাকি দুই কোটি টাকা দেয়নি। যাদের কাছ থেকে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সটির জায়গা নেয়া হয়েছে তাদের অনেকের টাকাও দেয়নি।
চসিকের বৃহৎ আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রকল্পে ইতোমধ্যে ৫৬২ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। দায়িত্ব নেয়ার পর ঠিকাদারদের সঙ্গে মিটিং করেছিলাম। তাদের বলেছি, কাজের অগ্রগতি এবং মান রিপোর্ট আকারে দেন। এই যে অগ্রগতি রিপোর্ট চাওয়ার পর তারা কোথায় উধাও হয়ে গেছে। পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ারকে রিপোর্ট দিতে বললাম। রিপোর্টে যা দেখলাম, অত্যন্ত খারাপ অবস্থা। কোনো কোয়ালিটি ছিল না, টাকাগুলো বোধহয় হস্তগত করার চিন্তা করেছে। যেসব ঠিকাদারের কাজের মাম মিনিমাম ভাল দেখেছি তাদের বিল দেয়া শুরু করেছি।