আমাদের শিশুরা এক প্রকার বন্দী পরিবেশে থেকে বড় হচ্ছে। আমাদের শিশুদেরকে আমরা উন্মুক্ত মাঠ, খোলামেলা জায়গা দিতে পারছি না যতটুকু তাদের প্রয়োজন। স্কুল থেকে বাসা বাসা থেকে স্কুল। অনেক অভিভাবক আছেন সারাদিন রাত পড়ার টেবিলে বসিয়ে রাখে। শিশুর মন-মানসিকতা সম্পর্কে একটু ধারণা রাখা উচিত।
অনেকে সাধারণত এ হিসাবটুকুও বুঝতে চাই না। আমরা অনেক জিনিসপত্র খোলামেলা জায়গায় রাখি কারণ জিনিসগুলো ভালো রাখার জন্য। একজন শিশু বেড়ে ওঠার জন্য, সুস্থ থাকার জন্য সুন্দর খোলামেলা পরিবেশ আর মানসিক সাপোর্ট প্রয়োজন। আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ, তবে কিভাবে আমরা আমাদের এই ভবিষ্যৎদের সুন্দর একটি পরিবেশে বড় হতে দেবো তা অভিভাবকদের দায়িত্বে পড়ে।
একটু হিসেব করলে দেখা যায় শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৫ হাজার মানুষের বসবাস এই শহরগুলোর প্রতিএকজন মানুষের জন্য ৯ বর্গকিলোমিটার খোলা জায়গার প্রয়োজন আছে। আমাদের আছে মাত্র ১ বর্গকিলোমিটার। তারমধ্যে চিপা গলি, দোকানপাট, বিভিন্ন ফ্যাক্টরি। অর্থাৎ আমাদের শিশুরা সুষ্ঠু পরিবেশে পরিপুষ্ট আবহাওয়ায় বেড়ে উঠছে না। বাংলাদেশের মতো একটা রাষ্ট্রে এইটা কখনো শহর পর্যায়ে সম্ভবও না।
আমাদের শিশুদের আমরা প্রাইভেট স্কুলগুলোতে দেই ভালো লেখাপড়ার জন্য। তবে একটি জরিপে দেখা গেছে ঢাকা মহানগরীর ৬৪% স্কুলেই খেলাধুলা নিয়ে তেমন কোনো ক্লাস হয় না। এমনও স্কুল আছে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। খোলা বারান্দা নেই, নেই আলো বাতাস। এমন কি বেশীরভাগ স্কুলে ক্যাম্পাসও নেই। দেখা যায় আবাসিক অলিগলি গুলোতে স্কুলের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখছে। স্কুল তো সব স্কুলই। স্কুলের ভেতরে গেলে বুঝা যায় একটি বাসার কয়েকটা ফ্লোরে স্কুল খুলে বসে এবং একটি বেঞ্চে প্রায় ৩ থেকে ৪ জন ছাত্র গাদাগাদি করে ক্লাস করে। আবার অনেক স্কুলে এক এক ক্লাসে ২জন থেকে ৪/৫ জনের উপরে ছাত্র-ছাত্রী নেই।
আমরা যতই নীতিকথা বলিনা কেন এই সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে অবশেষে আমরা বাচ্চাদের জন্য বিনোদন হিসেবে বেছে নিচ্ছি বিভিন্ন গেইম। তারা প্লে স্টোর বা পিসিতে গেইম ডাউনলোড করে কনসোল ব্যবহার করে খেলাধুলা করে। শিশুরা সারাটাদিন ল্যাপটপ, পিসি, ফোনের সামনে থেকে রোবটের মতন রূপ ধারণ করছে। সারাদিন যে কেউ একটা কাজের উপর নির্ভরশীল হতে পারেনা। হাফিয়ে ওঠে। যদিও এই ইলেক্ট্রনিঙ ডিভাইসগুলো তাদের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। তবুও লেখাপড়া ছাড়াও একটা শিশু যখন দিন বা রাতের বেশীরভাগ সময় এই ডিভাইসগুলোর সাথে সময় কাটাচ্ছে তখন সে মানসিক ভাবে অস্থির হয়ে পড়ছে।
মন -মেজাজের পরিবর্তন হচ্ছে। সারাক্ষণ পড়ালেখা আর ডিভাইসগুলো মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে। কোন কাজে মন বসেনা। মন ফুরফুরে থাকেনা, কারো সাথে মিশতে চাইনা। মা-বাবার সাথে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলেও ডিভাইসগুলোতে ডুবে থাকে। তাদের কোন দিকে খেয়াল থাকে না। মূলকথা আমাদের চারপাশে সবুজ অরণ্য কম, খোলা মাঠ যথেষ্ট থাকলেও শিশুদের খেলাধুলা, ঘোরাঘুরির জন্য উপযোগী নয়। অন্তত সপ্তাহে বা পনের দিনে একবার বাইরে ঘোরাঘুরি বা বিনোদনের জন্য নিয়ে যাওয়া উচিত। এতে অনেকটা শিশুর মন-মানসিক উৎফুল্ল থাকবে।