স্টোর রেন্ট দ্বিগুণ করার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেনার জট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ভাড়া বাড়ানোর পর থেকে কন্টেনার খালাস ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। স্টোর রেন্ট দ্বিগুণ করার সুফল মিলতে শুরু করায় বন্দর কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় রেন্ট স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রমজানকে কেন্দ্র করে পণ্য আমদানি বেড়ে গেলেও খালাস কমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেনারের পরিমাণ বাড়তে থাকে। প্রতিদিন জাহাজ থেকে শত শত কন্টেনার খালাস হলেও তা বন্দর থেকে খালাস না হওয়ায় জট বাড়ে। বন্দরের ইয়ার্ডে ৪৯ হাজার টিইইউএস কন্টেনার রাখার জায়গা রয়েছে। ইয়ার্ডগুলোতে ৪০ হাজার টিইইউএসের বেশি কন্টেনার জমে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ৮ মার্চ থেকে কন্টেনারের ভাড়া দ্বিগুণ করে। জাহাজ থেকে নামানোর পর ১১তম দিনের মধ্যে কন্টেনার খালাস না করলে ১২তম দিন থেকে ভাড়া দ্বিগুণ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। স্বাভাবিক অবস্থার ৬ ডলারের ভাড়া ১২ ডলার, ১২ ডলারের ভাড়া ২৪ ডলার হওয়ায় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের অনেকেই কন্টেনার খালাসের ওপর জোর দেন। এই ঘোষণা কার্যকর করার পর থেকে কন্টেনার খালাসে গতি আসে। এতে করে বন্দরের অভ্যন্তরে দেখা দেওয়া জট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার কন্টেনার খালাস হয়। কন্টেনার ভাড়া দ্বিগুণ করার আগের ছয় দিনে বন্দর থেকে কন্টেনার খালাস হয় ২২ হাজার ২৫৪ টিইইউএস। ভাড়া দ্বিগুণ করার পর গত ৬ দিনে কন্টেনার খালাস হয় ২৫ হাজার ১১৮ টিইইউএস। ভাড়া দ্বিগুণ করায় ছয় দিনে কন্টেনার খালাস বেড়েছে ২ হাজার ৮৬৪ টিইইউএস। ভাড়ার বিষয়টি বন্দরের কন্টেনার জট সামলানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান।
চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে গতকাল ৪৯ হাজার টিইইউএসের স্থলে ৩৩ হাজার ১৩৬ টিইইউএস কন্টেনার ছিল।
বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, স্টোর রেন্ট বাড়ানোর পর থেকে কন্টেনার খালাস বেড়েছে। প্রতিদিন এর পরিমাণ বাড়ছে। বন্দরের অভ্যন্তরে জট সামলানোর ক্ষেত্রে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বন্দর থেকে কন্টেনার খালাসের এই ধারা অব্যাহত থাকলে আর জটের আশঙ্কা থাকবে না।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রপ্তানি বাড়ার সাথে সাথে কন্টেনারে পণ্য আমদানি বাড়ছে। বিভিন্ন সংকটের কারণে পণ্য খালাস ব্যাহত হয়। এতে কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সংকটও রয়েছে। এই অবস্থায় ভাড়া দ্বিগুণ করা ঠিক হয়নি। বাড়তি এই অর্থের যোগান সাধারণ মানুষকেই দিতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, বন্দরে কন্টেনার পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। এই অবস্থায় স্টোর রেন্ট দ্বিগুণ করা ঠিক হচ্ছে না। বাড়তি স্টোর রেন্ট নেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।