বিমানবন্দর সড়কের ভয়াবহ রকমের যানজট সামলাতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। ড্রাইভারদের গেটে অপেক্ষা করে গেট পাস সংগ্রহের সিস্টেমকে আজ থেকে অনলাইন করা হচ্ছে। গাড়ির চালকেরা মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে আগেভাগে গেট পাস নিয়ে সরাসরি বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে। পাসের জন্য কারো সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাওয়ায় সময় এবং আর্থিক সাশ্রয় হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে দৈনিক ৫ থেকে ৬ হাজার গাড়ি প্রবেশ করে। এসব গাড়ির প্রতিটিকেই গেট পাস সংগ্রহ করে বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করতে হয়। এই গেট পাস সংগ্রহের জন্য গাড়ির চালক বা সহকারীকে আগে নির্দিষ্ট অফিসে গিয়ে গেট পাস সংগ্রহ করতে হতো। যা গেটে প্রদর্শন করার পরই কেবল ওই গাড়িকে বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেয়া হতো।
বন্দরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কেরানিদের কাছ থেকে গেট পাস সংগ্রহ করতে দীর্ঘ জটলা লেগে যায়। ওই সময় গাড়ি রাস্তা দখল করে অবস্থান করে। আবার অনেকেই গাড়ি একটু দূরে রাস্তার পাশে রেখে গেট পাস সংগ্রহ করে নেন। ওইসব গাড়িও বিমানবন্দর সড়কে যানজট সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দেয়। বিমানবন্দর সড়কের ভয়াবহ যানজটের জন্য বন্দরের গাড়িই অনেকাংশেই দায়ী বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে যে, শত শত গাড়ির ধকল সামলাতে গিয়ে বিমানবন্দর সড়কের অবস্থা নাজুক হয়ে উঠে। প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি সড়কটিতে যানজট লেগে থাকে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার আগে যানজটের কবলে পড়ে বিমানযাত্রীদের ফ্লাইট মিস করার ঘটনা অনেকটা প্রাত্যহিক হয়ে উঠেছিল। বন্দরকেন্দ্রিক যানজটের কারণে হালিশহর, সল্টগোলা ক্রসিং, ইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং, পতেঙ্গাসহ বিস্তৃত এলাকার লাখো মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছিলো।
ম্যানুয়েলি গেট পাস সংগ্রহের প্রচলিত সিস্টেমের কারণে শুধু যানজটই নয়, একইসাথে চালক সহকারীদের বাড়তি টাকা খরচের একটি বিষয়ও দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হয়ে আসছে। বন্দরের গেট পাসের নির্ধারিত টাকার চেয়ে কেরানিরা বেশি টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। আবার কখনো কখনো গেট পাসের নির্দিষ্ট ফি’ খুচরো দিতে না পারলে বড় নোটের বাকি টাকার পুরোটাই কেরানিরা রেখে দিতেন বলেও অভিযোগ করা হয়। ৫৭ টাকা গেট পাসের ফি’র বিপরীতে একশ’ টাকার নোট দেয়া হলে বাকি টাকা ফেরত না দেয়ার ব্যাপারটি ছিল একেবারে স্বাভাবিক। বিষয়টি নিয়ে চালক সহকারীদের মাঝে ক্ষোভও রয়েছে।
যানজট, সময় এবং আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাপক চিন্তাভাবনা করার পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গেট পাস অনলাইন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই প্রেক্ষিতে আজ সকাল থেকে বন্দরে অনলাইনে গেট পাস ইস্যু করার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান অত্যাধুনিক এই সিস্টেমের উদ্বোধন করবেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
নতুন সিস্টেমে কোন গাড়ির চালক বা সহকারীকে আর গেট পাসের জন্য বন্দরের নির্দিষ্ট অফিসে যেতে হবে না। তাদের মোবাইলে দেয়া অ্যাপসের মাধ্যমে গেট পাস সংগ্রহ করবে। গেট পাসের নির্দিষ্ট ফি বিকাশে পরিশোধ করা যাবে। এতে বন্দরের নির্ধারিত ফি’ই পরিশোধ করতে হবে। কোন বাড়তি টাকা বা খুচরো টাকার ব্যাপার থাকবে না। মোবাইলে উক্ত গাড়ির গেট পাস ইস্যু হবে। যা দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট গাড়িটি বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে।
অনলাইনে গেট পাস ইস্যুর ফলে চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক যানজট বহুলাংশে কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, বন্দরের গেট পাসের এই আধুনিকায়ন বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচলের স্থবিরতা কিছুটা হলেও কমাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনলাইনে গেট পাস ইস্যুর কথাটি স্বীকার করে বলেন, এতে বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি আজ সকাল ১০টায় বন্দরের ৪ নম্বর গেটে এই কার্যক্রম উদ্বোধন হবে বলেও জানিয়েছেন।