কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে বর্তমানে বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের স্থান ৫৮তম। সেটি ৩০তম স্থানে আনার স্বপ্নের কথা বললেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরকে আপনারা অন্যরকম দেখবেন।
গতকাল রোববার বিকালে চট্টগ্রাম বন্দর কলেজ সংলগ্ন শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে বন্দর উপদেষ্টা কমিটির ১৪তম সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন। ১৫ মাস পর অনুষ্ঠিত হলো উপদেষ্টা কমিটির সভা। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি তিন মাসে একবার করে সভার আয়োজন করার কথা। কমিটির সর্বশেষ সভা হয়েছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে।
নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিংয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) রিভাইস করা হচ্ছে। কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ের ক্ষেত্রে যে ধরনের ইকুইপমেন্ট দরকার, সেগুলো আমরা সংগ্রহ করছি। বন্দর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর চালু রাখতে গেলে আমাদের এই ড্রেজিংটা চালু রাখতে হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর এখন পর্যন্ত চালু আছে এবং তা কিন্তু দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা ২০১৯ সালে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে ৬৪তম স্থানে ছিলাম। এই ২০২০ সালে ৫৮তম স্থানে এসেছি। আজকের (গতকাল) যে চট্টগ্রাম বন্দরের উপদেষ্টা কমিটির সভা হলো, সেখানে বন্দরের সমস্যা ও এগিয়ে যাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া বন্দরের যত অংশীজন আছেন তারা তাদের সমস্যার কথা বলেছেন। তাদের সমস্যা এবং উত্থাপিত প্রস্তাবনাগুলো লিপিবদ্ধ হয়েছে। বন্দর সে প্রস্তাব অবশ্যই গ্রহণ করবে। আপনারা নিশ্চয় জানেন, চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী অনেক ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন। বর্তমানে বন্দরের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। কঙবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি এবং মীরসরাই পর্যন্ত চলে গেছে। বে টার্মিনালের ব্যাপারেও আলোচনা চলছে। পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি) আমরা ২০২১ সালে চালু করতে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের সক্ষমতা বাড়ছে। নতুন নতুন বেসরকারি ইয়ার্ড হচ্ছে। বিনিয়োগ বাড়ছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আসছে। চট্টগ্রাম বন্দর এখন স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির যে লাইফ লাইন বলা হয়, সেটারও কিন্তু ব্যত্যয় ঘটেনি।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামবাসীর প্রতি আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। চট্টগ্রামে বেশ কিছু ডেডিকেটেড রাস্তা আছে। চট্টগ্রাম বন্দর এসব রাস্তা উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের একটি স্টেডিয়ামও আছে। সেই স্টেডিয়ামের উন্নয়ন করে এখানকার যুব সমাজের খেলার জন্য জায়গা করা যায় কিনা কিংবা আন্তর্জাতিক মানের করা যায় কিনা, সে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের গণমাধ্যমের বন্ধুদের আমি ধন্যবাদ জানাই, তারা মার্চ থেকে শুরু বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে কোনো নেগেটিভ সংবাদ পরিবেশন করেননি। একটি নেতিবাচক সংবাদ কিন্তু মানুষকে হতাশাগ্রস্ত করে দেয়। পদ্মা সেতুর একেকটি স্প্যান যখন বসানো হয়, তখন দুদিন পর্যন্ত মানুষ অপেক্ষা করত। মানুষ এখন আশাবাদী। তারা ইতিবাচক সংবাদ আশা করে। একজন বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের একজন কর্মচারী স্বাক্ষর জাল করেছে। আমাদের কথা হলো আগে জাল স্বাক্ষর করে নিয়োগ হয়ে যেত। এখন জাল স্বাক্ষর করে কেউ পার পাচ্ছে না। ধরা পড়ছে। পরিবর্তনটা আসলে এখানেই। প্রধামন্ত্রী সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য কঠিন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। মুজিববর্ষের অঙ্গীকার তার নেতৃত্বে আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করব।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় বন্দরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বেসরকারি কন্টেনার ডিপো বা অফডক সরানো, অফডকের বিভিন্ন সেবার বিল কমানো, বন্দরের নিলাম ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ধ্বংস কার্যক্রম জোরদার করা, যানজট, বন্দরের বিশেষায়িত হাসপাতাল, টোল রোড, বন্দরের স্টেক হোল্ডার ও বাণিজ্য সংগঠনের প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও ওয়াসিকা আয়েশা খান, চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম, সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি একেএম আকতার হোসেন, বিকডা সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান, বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন, বাফা পরিচালক খায়রুল আলম সুজন প্রমুখ।
জুম অ্যাপে সভায় অংশ নেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএর মো. হাতেম, রেজাউল করিম ও পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক রফিক আহমেদ।