বদলি জেল খাটা সেই মিনুকে মুক্তির নির্দেশ

তিন আইনজীবীকে হাই কোর্টে তলব

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৮ জুন, ২০২১ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি কুলসুম আক্তারের বদলে কারাভোগ করা মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সাথে প্রকৃত আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা এবং মিনুর কারাভোগ করার ঘটনায় তিন আইনজীবী ও এক ক্লার্ককে তলব করেছেন হাইকোর্ট। এ তিন আইনজীবী হলেন- চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম এ নাসের, নুরুল আনোয়ার ও বিবেকানন্দ চৌধুরী। গতকাল সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে মিনুর পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ। এর আগে গত ৩১ মার্চ অপরাধ না করে মিনুর কারাভোগ করার ঘটনাটি জনস্বার্থে উচ্চ আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি আজাদীকে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীর জায়গায় আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে মিনু কারাভোগ করে আসছেন। গত ৩১ মার্চ জনস্বার্থে বিষয়টি আমি উচ্চ আদালতের নজরে দেই। সোমবার এ বিষয়ে শুনানি করে মিনুকে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেন আদালত। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান তারিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, এ সংক্রান্ত কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘটনার পূর্বাপর ঃ
২০০৬ সালের জুলাই মাসে নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন রহমতগঞ্জের একটি বাসায় মোবাইল ফোনে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টস কর্মী কোহিনূর আক্তারকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর তার লাশ রহমতগঞ্জের একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হলেও পরে সেটি হত্যা মামলায় (মামলা নম্বর ০৯(৭)০৬) রুপ নেয়। পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই বছরের ২৬ অক্টোবর কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীকে গ্রেপ্তার করে। ৩১ অক্টোবর রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এক বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুলসুমী জামিনে বের হয়ে আসেন।
বিডিনিউজ জানায় তার জামিন পাওয়ার প্রায় আট বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত এই মামলার রায় দেয়। রায়ে কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ের দিন অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এরপর ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুমী ‘সেজে’ মিনু আক্তার ‘স্বেচ্ছায়’ সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাকে তখন বলা হয়েছিল, কারাগারে তাকে বেশি দিন থাকতে হবে না। ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল কুলসুমী রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেন। ৩০ এপ্রিল হাই কোর্ট আপিল গ্রহণ করে। পরবর্তীতে দণ্ডিত এই নারী জামিন আবেদন করলে চলতি বছর ১১ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট তা বাতিল করে দেয়।
এদিকে গত ২১ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর চতুর্থ দায়রা জজ আদালতকে চিঠি দিয়ে জানায়, কারাগারে থাকা নারী দণ্ডিত কুলসুমী নন। পরদিন কারাগারে থাকা মিনু আক্তারকে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে তিনি জবানবন্দি দেন। ওই সময় আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন জবানবন্দিতে মিনু আক্তার বলেছিলেন, ‘মর্জিনা নামের এক নারী তাকে চাল, ডাল দেবে বলে জেলে ঢুকায়। সে প্রকৃত আসামি কুলসুম আক্তারকে চেনেন না।’ একই সঙ্গে আদালত কারাগারের নিবন্ধন দেখে হাজতি আসামি কুলসুমী ও সাজাভোগকারীর মধ্যে অমিল খুঁজে পান। তখন আদালত কারাগারের নিবন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট কিছু নথি হাই কোর্টে কুলসুমীর করা আপিলের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য পাঠায়।
এই ঘটনা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে আইনজীবী মো. শিশির মনির তা আপিল সংশ্লিষ্ট হাই কোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন। পরে ১ এপ্রিল এই বিষয়ে শুনানির পর ৫ এপ্রিল আদেশের জন্য রাখে। কিন্তু আদেশের আগে ওই বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তন হলে তা হাই কোর্টের এই বেঞ্চে (যে বেঞ্চ থেকে গতকাল আদেশ হল) উপস্থাপন করা হয়। টানা দুইদিন শুনানির পর সোমবার আদেশ দিল উচ্চ আদালত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসানের দায়িত্ব গ্রহণ
পরবর্তী নিবন্ধমেহমান ঘরে ঢুকতেই আচমকা হামলা