দেশের বিভন্ন জেলায় গতকাল বজ্রপাতে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নরসিংদী, পাবনা, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, নেত্রকোণা ও সুনামগঞ্জ থেকে এই মৃত্যুর খবর এসেছে। খবর বিডিনিউজের।
নরসিংদীর রায়পুরা, মনোহরদী ও শিবপুর উপজেলায় বজ্রপাতে নারী ও শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মাঠে কাজ করার সময় পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বজ্রপাতে ২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৩ জন। শরীয়তপুরে গোসাইরহাটে টিউবওয়েল থেকে পানি আনতে গিয়ে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। চাঁদপুর সদর উপজেলার আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে একজন মারা গেছেন। নেত্রকোণার মদন উপজেলায় হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। এদিকে টানা কয়েক দিনের অস্বস্তিকর গরমের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় তীব্র কালবৈশাখী বয়ে গেছে; ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ঝরেছে বৃষ্টিও। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে শুরু হওয়া এ ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০১ কিলোমিটার।
বজ্রপাত থেকে বাঁচতে করণীয় : বাসস জানায়, বজ্রপাত একটি আকস্মিক ঘটনা, যা প্রতিরোধ করা অত্যন্ত কঠিন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে গড়ে প্রায় ২৫০ জনের মত মানুষ মারা যান। দেশে সাধারণত এপ্রিল থেকে মে মাসে সর্বোচ্চ হলে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গ্রামের বিস্তীর্ণ ক্ষেত ও হাওর অঞ্চলে। বজ্রপাতে প্রায় দিনই মানুষ ছাড়াও প্রচুর গবাদি পশু মারা যাচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যা বিচার করে ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
মৃত্যু ও হতাহত হওয়া এড়াতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এক্ষেত্রে করণীয়গুলো হলো– বজ্রঝড় সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করতে হবে। অতি জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরে বাইরে যাওয়া নিরাপদ, এটি বজ্রঝড় বা বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দেবে। বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলামাঠে যদি থাকেন তাহলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে। বজ্রপাতের আশংকা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ভবনের ছাদে বা উঁচু ভূমিতে যাওয়া উচিত হবে না। বজ্রপাতের সময় যে কোন ধরণের খেলাধুলা থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে, ঘরের ভেতরে অবস্থান করতে হবে। খালি জায়গায় যদি উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ধাতব পদার্থ বা মোবাইল টাওয়ার থাকে, তার কাছাকাছি থাকবেন না। বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে থাকা বিপজ্জনক । বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে না যাওয়াই উচিত হবে। সমুদ্রে বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। যদি কেউ গাড়ির ভেতর অবস্থান করেন, তাহলে গাড়ির ধাতব অংশের সাথে শরীরের সংযোগ রাখা যাবে না।
বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে ধরার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। কারণ আহত কিংবা মৃত ব্যক্তির শরীরে বিদ্যুৎ থাকে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তির শ্বাস–প্রশ্বাস এবং হৃৎস্পন্দন দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। কয়েক মিনিটের মধ্যে কৃত্রিম শ্বাস–প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে পারলে বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। বেশি দেরি হলে আহত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে। বজ্রপাতে আহত হলেও কিছু কিছু মানুষের হৃদপিন্ড বন্ধ হয়ে তাৎক্ষণিকভাবেই মারা যায়। আবার কারো–কারো হৃদপিন্ড একটু বন্ধ হয়ে আবার চালু হয়। তাদের যদি হাসপাতালে আনা যায়, তখন বাঁচানো সম্ভব হতে পারে।
যদি আহত ব্যক্তির হৃৎপিন্ড সচল থাকে তাহলে তাকে সাথে সাথে সিপিআর দিতে হবে। সেজন্য সিপিআর সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। সিপিআর দিয়ে হৃদপিন্ড সচল রাখতে হবে। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স বা কোন গাড়ি ডেকে দ্রুত আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হবে।