বছরের পালাবদল ও অর্জন-প্রত্যাশার প্রবহণ

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ১ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বকবি রবিঠাকুরের ‘এখনো গেল না আঁধার’ কবিতার কয়েকটি অসাধারণ পংক্তি উপস্থাপনে দেশবাসীর সাথে একাত্ম হয়ে সমস্বরে উচ্চারণ করতে চাই ‘এখনো গেল না আঁধার, এখনো রহিল বাধা।/ এখনো মরণ-ব্রত জীবনে হল না সাধা। কবে যে দুঃখজ্বালা হবে রে বিজয়মালা,/ ঝলিবে অরুণরাগে নিশীথরাতের কাঁদা/ বিশ্ববাসীসহ দেশের সমগ্র জনগণ সম্যক অবগত আছেন; মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার অদম্য অগ্রগতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে বিশ্বপরিমণ্ডলে সুমহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। বিদায়ী ইংরেজি বর্ষ ২০২১ অব্যাহত অভিযাত্রায় অর্জনের গৌরবে নিরন্তর উঁচুমাত্রিকতায় অত্যুজ্জ্বল ছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনকের আদর্শিক অবিচল চেতনায় পরিপূর্ণ ঋদ্ধ হয়ে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে প্রতিষ্ঠিত করা দেশের অনেকের জন্যই গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাগ-নাগিনীর বিষাক্ত বিচরণ-ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত দেশকে অস্থিতিশীল করে অগ্রগতির ধারাকে রুদ্ধ করার লক্ষ্যে নানামুখি কদর্য অন্তরায় তৈরি করে চলছে। কদাচার-অনাচার-অরাজকতার মাধ্যমে দেশকে অনগ্রসরতার নষ্টচক্রে নিপতিত করার যারপরনাই অপচেষ্টা থেমে নেই। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মহাবিজয়ের মহানায়কের জন্মশতবর্ষকে বিশ্বইতিহাসের স্বর্ণালী অধ্যায়ে পরিপূর্ণ প্রতিস্থাপন করতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সফল ও স্বার্থক হয়েছে। বিজয়ী বাঙালি এরই আলোকে বিগত বছরের অর্জনের কীর্তিগাঁথা ও স্বপ্নের আলোকিত বছরের প্রত্যাশায় নতুন ব্রতে উজ্জীবিত হয়েছে।
দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সমুদ্র বন্দরের অবদান অনস্বীকার্য। সমুদ্রপথে কনটেইনারে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ৯৮ শতাংশ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আমদানি-রপ্তানি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অর্জনে বর্তমান সরকারের গৃহীত মেঘা প্রকল্পের মধ্যে প্রণিধানযোগ্য হচ্ছে; পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি), গভীর সমুদ্র বন্দর, পতেঙ্গা-হালিশহর উপকূলে বে-টার্মিনাল নির্মাণ ইত্যাদি। এছাড়াও স্বয়ংক্রিয় কনটেইনার অপারেশন পদ্ধতি সিটিএসএস, বন্দরে নিরাপদে জাহাজ যাতায়াত ও বহিঃনোঙ্গরে অবস্থানকালে জাহাজগুলোকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার জন্য আধুনিক ভিটিএমআইএস চালু এবং সামগ্রিক কার্যক্রম ডিজিটাল করার ফলে বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের দ্বিতীয় প্রধান বন্দর মোংলার সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশের আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আরও বন্দরের প্রয়োজনীয়তায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পায়রা বন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বর্তমান সরকার। অতি দ্রুতগতিতে এই বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে আগামী ২০২৩ সাল নাগাদ পায়রা বন্দর একটি পরিপূর্ণ বন্দর হিসেবে কাজ করতে পারবে। তৈরি পোশাক খাতসহ সকল বৈদেশিক বাণিজ্যে আন্তর্জাতিকভাবে সুদৃঢ় করতে হলে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ব্যয় ও সময় হ্রাস খুবই তাৎপর্যপূর্ণ অনুষঙ্গ। ব্যবসায়ীদের মতে দেশে গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনই হচ্ছে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের একমাত্র পন্থা। এর যথার্থ অনুধাবন ও দেশের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন যা চলমান মেঘা প্রকল্প সমূহের অন্যতম।
কৃষির আধুনিকায়ন, নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং সার উৎপাদন-আমদানিতে সরকারি ভর্তুকি দেওয়ার ফলে দেশ কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। বিশ্বে ধান, সবজি ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে চার বার সারের দাম কমানো, ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক হিসাব খোলা, সেচের পানির ভুর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের ব্যাংক হিসাবে জমাদান ও ১ কোটি ৮২ লাখ কৃষককের মাঝে উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণের মতো যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে কৃষিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। শিল্পায়নের অপরিহার্য উপাদান বিদ্যুৎ-গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধিতে সরকারের সবিশেষ প্রাধান্য আরোপের ফলশ্রুতিতে দেশ এখন ২৫ হাজার ২৩৫ মেঘাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা দেশগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য রামপাল, পায়রা, বাঁশখালী ও মাতারবাড়িতে আরও ৭ হাজার ৮০০ মেঘাওয়াট এবং ২ হাজার ৪০০ মেঘাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে।
এটি সর্বজনবিদিত; যে কোন জাতিরাষ্ট্রের টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন মূল্যায়নে দক্ষ জনগোষ্ঠী প্রমিত নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তাঁর নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার উদ্দেশ্যে সূচনালগ্ন থেকেই মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রয়োগিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সুপরিকল্পিত কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নিরলস মেধা-নিষ্ঠার সমন্বয়ে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি-ধর্মীয়-নৈতিক শিক্ষাকে একীভূত করে আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক গুণগত শিক্ষার মানদণ্ডকেই মানবসম্পদ উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু রূপে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২১ সূত্রমতে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন এজেন্ডার মূল লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়ন। লক্ষ্য পূরণে সরকার ২০২০-২১ অর্থবছরে আর্থ-সামাজিক খাতে ২৩.৭৫ শতাংশ হারে বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নের বিভিন্ন খাত তথা শিক্ষা ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, নারী ও শিশু, সমাজকল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া উন্নয়ন, সংস্কৃতি, শ্রম ও কর্মসংস্থান ইত্যাদি খাতে পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য-পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতে সরকারের নেয়া অগ্রাধিকারভিত্তিক বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফলে দেশে প্রজনন ও মৃত্যু হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, নবজাতক শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ সংক্রান্ত সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যখাত সংক্রান্ত এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে নিরলস কর্ম সম্পাদন করে যাচ্ছে। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির প্রণয়ন বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জন। বর্তমানে প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। হৃদরোগ, কিডনি, লিভার, ক্যান্সার, নিউরো, চক্ষু, বার্ণ, নাক-কান-গলাসহ বিশেষায়িত ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় ন্যূনতম একটি করে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সব হাসপাতালে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাতসহ সামাজিক খাতসমূহে অধিক বিনিয়োগের অপরিহার্যতায় সরকার সংশ্লিষ্ট খাতে বাজেট বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করেছে। খাতগুলোকে পূর্ণতাদান ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কার্যকরণে ২০২০-২১ অর্থবছরে মানবসম্পদ উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল মোট বাজেটের প্রায় ২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বিপরীতে ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৭ কোটি (মোট বাজেটের ২৫.৮১ শতাংশ)।
ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় দেশ। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমার তলদেশে যে সম্পদ রয়েছে তা টেকসই উন্নয়নের জন্য সঠিক পরিকল্পনা মাফিক ব্যবহার করা গেলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর আড়াই লাখ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব হবে। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে চলা বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের অবসান ঘটিয়ে এক যুগান্তকারী রায়ে দেশের মোট আয়তনের প্রায় কাছাকাছি ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারেরও অধিক সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশ তার পূর্ণ অধিকার ও সার্বভৌমত্ব লাভে দেশের সুনীল অর্থনীতির অপার সম্ভাবনাকে অনেক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। উক্ত সাফল্যগাঁথায় সমুদ্র সম্পদকে যথাযথ আহরণ-ব্যবহার-রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিমান করার অপরিমেয় সম্ভবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। সমুদ্র অর্থনীতি (ব্লু-ইকোনমি) সংশ্লিষ্ট গবেষণা ও সম্পদ আবিষ্কার-আহরণ-প্রয়োজনীয় ব্যবহার এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এই অবদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সমুদ্র জয়ের ফলে বঙ্গোপসাগরে ভারতের থাকা ১০টি গ্যাস ব্লকের মধ্যে ৮টি এবং মিয়ানমারের অধীনে থাকা ১৩টির মালিকানা পেয়েছে বাংলাদেশ। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বঙ্গোপসাগরের তলদেশে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মজুত রয়েছে। যার মাধ্যমে আগামীদিনের জ্বালানি-রাজনীতি ও অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ গণমাধ্যম সূত্রে চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রকাশিত বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর জরিপে জানা যায়, করোনার পূর্বে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০.৫ শতাংশ। করোনাকালে এই হার বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। কিন্তু ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) প্রকাশিত “এক্সট্রিম পোভার্টি দ্যা চ্যালেঞ্জেস অব ইনক্লুশন ইন বাংলাদেশ : শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, করোনাভাইরাস পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ফলশ্রুতিতে ২০২১ দেশে দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশে। বাংলাদেশে অর্থনীতির ক্ষেত্রে অর্জিত বিশেষ সাফল্য দারিদ্র্য নিরসনে ব্যাপকভাবে সহায়ক হয়েছে। বাংলাদেশে দারিদ্র্য নিরসনে সাফল্যের কারণ হিসেবে গবেষকরা সরকারের কিছু উপাদানের বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেছেন। সেগুলো হচ্ছে- বৃহৎ অর্থনৈতিক নীতিমালা, বিশ্বায়নের ফলে উন্মুক্ত নীতিমালা অনুসরণ, দারিদ্র্যবান্ধব প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ, বনিয়াদি শিক্ষা, প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সাফল্য, সবুজ বিপ্লব, কৃষি উপকরণ বিতরণে দারিদ্র্যবান্ধব সংস্কার, গ্রামীণ শ্রম বাজারে পরিবর্তন ও পোশাক শিল্পে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ইত্যাদি।
দেশের যোগাযোগ খাতে বৃহৎ অবকাঠামো বিকাশের ক্ষেত্রে স্বপ্নের পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের মতো বৃহৎ অবকাঠামোগুলোর ব্যবহার উপযোগী দৃশ্যমানতা উন্নয়নের সমুদয় সোনালী মাইলফলক ২০২২ সালের প্রত্যাশাকে অভিনন্দিত করবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প শেষ হলে দেশের পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার লাভ করবে। যানজটমুক্ত উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে সবগুলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসের নির্মাণ সম্পন্ন করা জরুরি। দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ কাম ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নীতি-নৈতিকতায় তারুণ্যের সম্ভাবনাকে উন্মোচিত করে ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ সংহারে ধার্মিকতা-অসাম্প্রদায়িকতা-মনুষ্যত্ব-মানবিকতার প্রজ্বলন ঘটাবেই- নিঃসন্দেহে তা বলা যায়। অন্যান্য ধর্মান্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এই ধরনের আধুনিক-কূপমণ্ডুকতামুক্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা আগামী দিনের প্রত্যাশাকে সমুজ্জ্বল করবে।
প্রত্যাশার পরিশিষ্ট দৃশ্যমান করার উদ্দেশ্যে দ্রুততার সাথে ২১০০ ডেল্টা প্ল্যানের প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন, রাজধানি ও বাণিজ্যিক রাজধানি চট্টগ্রামসহ প্রত্যেকটি নগর-শহর ও গ্রামীণ জনপদের জলাবদ্ধতা মুক্তকরণ, রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষ-প্রাণহানির মতো ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মীমাংসায় দলগুলোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, ত্যাগী-সৎ-যোগ্য ব্যক্তিত্বদের কোণঠাসা-অবমূল্যায়নের বিপরীতে যথার্থ মূল্যায়ন সাপেক্ষে পদ-পদবী-পদক ইত্যাদি নিশ্চিতকরণে নৈর্ব্যক্তিক-বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি-মূল্যস্ফীতি-দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ লাঘবে বিদ্যমান সকল সঙ্কট চিহ্নিত ও পরিত্রাণের উপায় নির্ধারণ, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সন্ত্রাস-দুর্নীতি-অনিয়ম দূরীকরণে দল-সরকার-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল প্রতিষ্ঠানের আত্মশুদ্ধিকরণ, ছদ্মবেশে পরাজিত শক্তির আত্মীকরণ রোধে অনুপ্রবেশকারী-ষড়যন্ত্রকারী-নরপশুতুল্য হিংস্র কুচক্রীদের সকল অপকৌশল ব্যর্থ করে দিয়ে যথার্থ অর্থেই দেশকে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনার প্রকৃত পরিশুদ্ধ কর্মপন্থা অনুসন্ধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ নতুন বছরের ইতিবাচক সকল উদ্যোগকে অধিকতর উদ্যমী ও নির্ভীক রূপ পরিগ্রহে সময়োপযোগী সহায়ক করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে
পরবর্তী নিবন্ধআজ চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্রের ২৯ বছর পূর্তি উৎসব