বছরে ৭ ফুট করে নামছে পানির স্তর

চট্রগ্রাম নগর ভূগর্ভস্থ পানি তোলা এর জন্য দায়ী, বিষয়টি উদ্বেগজনক : বিশেষজ্ঞ ওয়াসার সিস্টেম লস কমানো গেলে ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমত

হাসান আকবর | বুধবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীতে পানির স্তর দ্রুত নামছে। ১০ বছরের ব্যবধানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অন্তত ৭০ ফুট বা সাত তলা দালানের সমান কমে গেছে। এতে করে নগরীর অনেক এলাকায় স্থাপিত গভীর নলকূপগুলো আর পানি পাচ্ছে না। প্রতি বছর গড়ে ৭ ফুট পানি কমে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে যাওয়ার জন্য মাটির নিচের পানি তোলাকে দায়ী করা হচ্ছে।

সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৭০ লাখ মানুষের এই নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা অন্তত ৫৫ কোটি লিটার। ওয়াসা প্রায় ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে। কিন্তু এর একটি বড় অংশ সিস্টেম লসের কারণে ওয়াসার প্রকৃত গ্রাহকদের কাছে পৌঁছায় না। ওয়াসার স্বীকৃত সিস্টেম লস হচ্ছে ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ দৈনিক প্রায় ১৪ কোটি লিটার পানি সিস্টেম লসে চলে যায়। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট রয়েছে। পতেঙ্গাসহ বিস্তৃত এলাকা অনেক বছর ধরে ওয়াসার পানি থেকে বঞ্চিত। বর্তমানে ওয়াসার আবাসিক সংযোগ রয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার। বাণিজ্যিক গ্রাহক সাড়ে ৬ হাজারের মতো। সিস্টেম লস ঠেকানো গেলে ওয়াসার রাজস্ব আয় বাড়ত বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, এতে ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমে যেত। প্রকৃত গ্রাহকদের পানির সংকট ঘুচত।

পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় নগরীর বিভিন্ন এলাকার বহুতল ভবন এবং বাণিজ্যিক বহু প্রতিষ্ঠানকে ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করতে হচ্ছে। নগরীতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ৪ হাজার ২০০টি অনুমোদিত ডিপ টিউবওয়েল রয়েছে। অননুমোদিত টিউবওয়েলের সংখ্যাও কম নয়। এসব ডিপ টিউবওয়েল দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ লিটার পানি মাটির নিচ থেকে তুলে আনা হচ্ছে, যা ভূগর্ভস্থ পানির স্তরকে দ্রুত নিচের দিকে নামাচ্ছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একটি সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াসার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, ২০১৪ সালে নগরীর ১০টি পৃথক এলাকায় পানির স্তর পরীক্ষা করা হয়েছিল। ওই সময় ওই এলাকাগুলোতে পানির স্তর ছিল গড়ে ২৪২ ফুট নিচে। সাম্প্রতিক একই এলাকাগুলোতে পানির স্তর নেমেছে ৩১০ ফুট নিচে। বর্তমানে প্রতি বছর পানির স্তর গড়ে ৭ ফুট নেমে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক ডিপ টিউবওয়েল অকেজো হয়ে গেছে। পানি পাচ্ছে না। এসব টিউবওয়েলকে আরো গভীরে পানির সন্ধান করতে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো বলেছে, ভূগর্ভস্থ পানির অন্যতম উৎস হচ্ছে বৃষ্টির পানি। কিন্তু পুরো নগরী যেভাবে কংক্রিটে ঢেকে ফেলা হয়েছে তাতে বৃষ্টির পানি আর মাটির নাগাল পাচ্ছে না। মাটির পরিবর্তে বৃষ্টির পানি নালা ও খাল হয়ে সাগরে গিয়ে পড়ছে।

ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেলে শুধু পানিরই অভাব হয় না, একইভাবে বড় পরিসরে ভূমি ধসে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে বলে জানান নগর বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার সাজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভূগর্ভস্থ পানিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অথচ আমাদের দেশে এসব নিয়ে যেন কারো মাথাব্যথা নেই। নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান আজাদীকে বলেন, পরিকল্পিত নগরায়নের কোনো বিকল্প নেই। যার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে বাড়িঘর কিংবা অবকাঠামো নির্মাণ করলে পরিকল্পিত নগর গড়ার স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে। ইটপাথরের যথেচ্ছ ব্যবহার ভূগর্ভস্থ পানির স্তরকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মাটির নিচের পানির গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ আমরা প্রকৃতির সেই রিজার্ভারই প্রতিনিয়ত নষ্ট করছি; যা আমাদের পরিবেশ এবং প্রতিবেশকে হুমকির মুখে ফেলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুইজারল্যান্ড পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়ির সব বেইলি ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ, ঘটছে দুর্ঘটনা