বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির নাম রাখা ছিল ‘নিভার’। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় নিভার আঘাত হানার সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়া অফিস থেকেও কোনো সতর্কতা সংকেত দেওয়া হয়নি।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় নিভার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হলেও অনেক দূরে রয়েছে। আমাদের এখানে আঘাত হানার সম্ভাবনা খুবই কম। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে কোনো সংকেত দেওয়া হয়নি। সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় নিভার ভারতের অন্ধপ্রদেশের দিকে আঘাত হানতে পারে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার স্থানীয় পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সাথে শেষ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। উত্তর/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১২-১৬ কি.মি. বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থাানরত ঘূর্ণিঝড় ‘নিভার’ পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৭০০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কঙবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬৪৫ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫৮৫ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৫৮০ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি. মি. যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কঙবাজার, মংলা এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরবর্তী নির্দেশনা সাবধানতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থাানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার সমূহকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) বলছে, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরো শক্তিশালী হয়ে সোমবার রাতেই ঘূর্ণিঝড় ‘নিভারে’ পরিণত হয়েছে। এটি আরো শক্তিশালী হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল (আজ বুধবার) ভোর বা পরশু সকাল নাগাদ ভারতের পুদুচেরি ও চেন্নাই শহরের নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। নিভারের প্রভাবে ইতোমধ্যেই দেশের দক্ষিণাঞ্চল অর্থাৎ খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক স্থানের আকাশে মেঘের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। যার ফলে শীতের অনুভূতি কমে গেছে। ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ অন্যত্র অল্প কিছু স্থানে আকস্মিক হালকা বা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিসহ দুয়েক স্থানে আগামী ২/৩ দিন হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।