বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলের ৫ কিলোমিটার গভীর সমুদ্রে কর্ড জাল (শক্তিশালী) ফিশিং ট্রলারের ধাক্কায় বাঁশখালীর চাম্বল বাংলা বাজার এলাকার মো. ছগীরের মালিকানাধীন এফবি মায়ের দোয়া ফিশিং বোট তলিয়ে গিয়ে ৩৪ মাঝিমাল্লা নিখোঁজ রয়েছে। তার মধ্যে ৩ জন জেলে আজ রবিবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে চাম্বল বাংলা বাজার ঘাটে অপর ফিশিং বোটের সহযোগিতায় ফিরে এলে রাত ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অপর ৩১ জেলের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ফলে নিখোঁজ জেলে পরিবারে চলছে কান্নার রোল।
সাগর থেকে ফিরে আসা জেলে ও বোট মালিক সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকাল ৮টার দিকে বাঁশখালীর চাম্বল বাংলা বাজার এলাকার মো. ছগীরের মালিকানাধীন এফবি মায়ের দোয়া ফিশিং বোটটি ৩৪ জন জেলে ও মাঝিমাল্লা নিয়ে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলের ৫ কিলোমিটার গভীর সমুদ্রে জাল পোতার সময় অপর একটি কর্ডজাল বসানো ফিশিং ট্রলার এসে ধাক্কা দিলে এফবি মায়ের দোয়া ফিশিং বোটটি ৩৪ জন জেলে ও মাঝিমাল্লা নিয়ে তলিয়ে যায়।
জেলেদের বেশ কয়েকজন এ সময় সাঁতার কেটে চারপাশে থাকা অপর বোটে ওঠার চেষ্টা করলে ফিশিং বোটের ইঞ্জিন রুমে থাকা ৪/৫ জন জেলেসহ বোটটি ডুবে যায়।
সকাল ১১টার দিকে অপর বোটের মাধ্যমে এ খবর বাঁশখালীর চাম্বল বাংলা বাজার ঘাটে এফবি মায়ের দোয়া ফিশিং-এর মালিক মো. ছগীরের কাছে পৌঁছালে তিনি আরো কয়েকটি বোট ও জেলে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে গেলে আজ রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নুরনবী (৪৫), দেলোয়ার (৩২)ও মহিউদ্দিন(৩৪)কে নিয়ে একটি বোট কুলে ফিরে আসে।
শত শত জেলে পরিবারের সদস্যরা তখন নিখোঁজ জেলেদের জন্য সেখানে ভিড় জমায়।
এ সময় সাগর থেকে ফিরে আসা জেলে নুরনবী, দেলোয়ার ও মহিউদ্দিন জানান, সকাল ৮টার দিকে তাদের ফিশিং বোটটিকে একটি শক্তিশালী কর্ড জাল(শক্তিশালী) ফিশিং ট্রলার ধাক্কা দিলে তাদের বোটটি তলিয়ে যায়।
এ সময় তাদের সাথে থাকা জেলে ও মাঝিমাল্লাদের সাঁতার কেটে সাগরে থাকা বিভিন্ন ফিশিং বোটে উঠার চেষ্টা করতে দেখা যায় বলে জানান তারা।
তবে তাদের ফিশিং বোটের ইঞ্জিন রুমে থাকা ৪/৫ জন জেলে ভিতর থেকে বের হতে পারেনি বলেও জানান তারা।
তিন জেলে সাগর থেকে ফিরে এসে চাম্বলবাজারে বোট মালিক সমিতির অফিসে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে এ সব তথ্য দেওয়ার পর তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে পশ্চিম চাম্বল বোট মালিক সমিতির সভাপতি হেফাজাতুল ইসলাম বলেন, “বোট ডুবির খবর পেয়ে আমরা প্রশাসনকে অবহিত করি এবং নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে সাগরে বোট পাঠিয়ে সন্ধান করার ব্যবস্থা করি। তিন জেলে ফিরে এসেছে। বাকি জেলেদের সন্ধানে আমরা বিভিন্ন উপজেলার জেলেদের এবং প্রশাসন ও কোস্টগার্ডের সাথে যোগাযোগ করছি।
সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা জানায়, কর্ড জাল( শক্তিশালী) ফিশিং ট্রলারগুলো সাগরের জেলেদের নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। সেই সব ফিশিং ট্রলারগুলোতে ৪০/৪৫ জন জেলে থাকা এবং সেগুলো লম্বা ও শক্তিশালী হওয়ায় তারা অন্য ফিশিং বোটগুলোকে ধাক্কা দিয়ে মাছ ছিনিয়ে নিলেও কেউ এসবের প্রতিবাদ করতে পারে না। এ ঘটনাও তারই একটি।
অপর একটি সূত্রে জানা যায়, এফবি মায়ের দোয়া যেখানে জাল পুঁতে সেখানে জাল পুঁততে বারণ করে কর্ড জাল (শক্তিশালী) ফিশিং ট্রলারে থাকা জেলেরা। সেটা না শোনাতে তাদের ফিশিং বোট ধাক্কা দিয়ে তলিয়ে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, “সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য মতে ৩ জেলে কুলে ফিরে এসেছে। চার জেলে নিখোঁজ রয়েছে। বাকি অপর জেলেরা বিভিন্ন বোটে উঠেছে তবে এখনও ফিরে আসেনি। তাদের সন্ধানে এখনও বোট সেখানে রয়েছে।” বাঁশখালী থেকে সাগরের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে প্রায় ৭ ঘণ্টা সময় লাগে বলে জানান তিনি।