সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেবেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। আজ রোববার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে। গতকাল শনিবার দেওয়া নতুন কর্মসূচিতে সড়ক অবরোধের ‘বাংলা ব্লকেড’ থেকে সরলেও সারা দেশে ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট অব্যাহত থাকার ঘোষণা এসেছে। এদিন বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন হাসনাত আব্দুল্লাহ। এদিকে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সময় রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জল কামান ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা হয়েছে। পুলিশের একটি সাঁজোয়া যানের (এপিপি) চালক কনস্টেবল খলিলুর রহমান গত শুক্রবার এই মামলা করেন। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আগামীকাল (আজ) আমাদের কর্মসূচি থাকবে, জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের লক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরারবর স্মারকলিপি প্রদান এবং গণপদযাত্রা। এই গণপদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণপদযাত্রা করে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন।
আন্দোলনকারীদের এক দফা দাবি হলো, সকল গ্রেডে সকল প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকারের উচিত ছিল আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা। তা না করে সরকার আন্দোলন দমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দাবি আদায় না হলে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
ধর্মঘট চলবে : সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করে যে ছাত্র ধর্মঘট ঘোষণা করেছি, তা চালু থাকবে। শিক্ষকরা আন্দোলন শেষে ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরব না।
সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, শিক্ষকরা যখন আন্দোলন করে ক্লাস–পরীক্ষাসহ সব দাপ্তরিক কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে গিয়ে বসে যায়নি। তারা শিক্ষকদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছে। এখন সময় এসেছে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে পাশে থাকার।
মামলা প্রত্যাহারের দাবি : ১২ জুলাই শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি চলাকালীন পুলিশের যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা এবং মারধরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীদের আসামি করে শাহবাগ থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পরিবহন বিভাগের গাড়িচালক খলিলুর রহমান।
মামলাটির কথা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলনকে বাধা দিতে ‘মিথ্যা’ মামলাটি দেওয়া হয়েছে। শাহবাগে দায়িত্বরত পুলিশরাও কোনো মারধরের বর্ণনা দেয়নি। এ সময় শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে দেওয়া রমনা জোনের এডিসি শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম একটি সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করেন। যেখানে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে এডিসি বলেন, শিক্ষার্থীরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেছিল। তবে বলার পর তারা আমাদের কথা শুনে শান্তিপূর্ণভাবে ফিরে গেছে। আপনারা দেখেছেন, আমরা চেষ্টা করেছি যেন কোনো শিক্ষার্থীর গায়ে আঘাত না লাগে। আমাদের সাঁজোয়া যান ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছে। এখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, অজ্ঞাতনামা মামলা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারা আন্দোলনে সমন্বয় করছে, সবার পরিচয় আছে। আমাদেরকেই মামলা দিন।
এদিকে দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গণসংযোগ ও বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারীরা। সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আজকে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারীরা অফলাইনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজ ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। কুমিল্লা জেলা পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টার বৈঠক করেন।
সরকারি চাকরিতে কোটার বিরোধিতা করে গত কয়েকদিন থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। হাই কোর্টের রায়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ক্রমে ছড়িয়ে যায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচির পাশাপাশি শাহবাগে সড়ক অবরোধ করতে থাকে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের এক পর্যায়ে তারা গত সপ্তাহে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে। রোব ও সোমবার সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ‘বাংলা ব্লকেড’ পালন করে একদিন বিরতি দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরের দুই দিন আবার সকাল–সন্ধ্যা অবরোধ করে। শুক্রবার নিজেদের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। কোটার বিরোধিতায় চার দফা দাবিতে শুরু হওয়া এ আন্দোলন এখন এক দফায় এসে ঠেকেছে।