বঙ্গবন্ধুর হত্যার সাথে জড়িত ষড়যন্ত্রকারীরা আজ ঘৃণিত

সরিৎ চৌধুরী সাজু | শুক্রবার , ১৮ আগস্ট, ২০২৩ at ৯:২৬ পূর্বাহ্ণ

হেনরী কিসিঞ্জারের ঢাকা সফরের পর পরই ‘ক্যু প্ল্যানিং সেল’এর সঙ্গে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের যোগাযোগ হয়। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রাক্তন কর্মকর্তা রজার্স মরিস ‘হেনরী কিসিঞ্জার ও মার্কিন ফরেন পলিসি’ নামক একটি তথ্যবহুল বই লিখেছেন। এটিতে তারই প্রমাণ উল্লেখ আছে। তিনি ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের কিসিঞ্জারের স্টাফ এসিন্ট্যান্ট হিসেবে কয়েক বছর কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের প্রথমার্ধে অর্থাৎ কিসিঞ্জার ঢাকা সফরের পর কিসিঞ্জারের বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ট এক সাহায্যকারীর ইন্টারভিউ গ্রহণ করেন। ইন্টারভিউ গ্রহণের সময় আশ্চর্য বিষয় এই যে, কিসিঞ্জার বিদেশী নীতি সমালোচক হিসাবে নয়, তিনি বললেন যে, কিসিঞ্জারারের আমলে মার্কিন বিদেশ নীতিতে তিনজন ‘ফরেন এনেমি’ র তালিকাভুক্ত নাম এবং কিসিঞ্জারের কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তিত্ব, তাঁরা হলেনআলেন্দে, থিউ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কেন ঘৃণিত? এর উত্তরে কিসিঞ্জার নিজেই বলেছেন; ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের পর পরই তদানিন্তন পাকিস্তানের মার্কিন রাষ্টদূত যোশেফ ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করনে। যোশেফ ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় মার্কিন নীতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং বলেন যে, পাকিস্তানের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাকে যুক্তরাষ্ট্র কোনো ক্রমে সমর্থন দেবে না।কিসিঞ্জার আরো মনে করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবিত থাকলে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন। কথাটি যথার্থ প্রমাণ ছিল। বাংলাদেশই প্রথম রাষ্ট্র যে মার্কিন প্রভাব উপেক্ষা করে অস্থায়ী বিপ্লবী ভিয়েতনাম সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করে। এই সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর ধারণা যে ছিল না তা নয়। তাছাড়া জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ভাষণে বলেছিলেন, ‘পৃথিবী আজ দু’ভাগে বিভক্ত, শোষক আর শোষিত, আমি শোষিতের পক্ষে’। সেই ভাষণের পর পরেই ফিদেল কাস্ট্রো তাঁকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানিয়ে ছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘আজ থেকে একটি বুলেট অহরহ তোমার পিছু নেবে’। ফিদেল কাস্ট্রো ছাড়াও ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ষড়যন্ত্র সর্ম্পকে বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্ন ভাবে সর্তক করে দেবার চেষ্টা করেছিলেন। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সাথে সাথে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, ব্যক্তি আক্রোশের ডুগডুুগি বাজানো হয়। অথচ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার শুধু নয় সারা বিশ্বে জাতির জনকের বিশাল ব্যক্তিত্ব এবং নেতৃত্ব সকল দেশেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। এমন একজন মহানায়ক সপরিবারে হত্যার নেপথ্যে নিপুণ ও বিশাল পটভূমিকায় জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্র ছিল। ষড়যন্ত্রকারীরা আর ঘৃণিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকেমনে তাঁকে ভুলি
পরবর্তী নিবন্ধএকটি তর্জনী