সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের নেতা হয়েও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রচলিত ধারার সেই বিশ্বরাজনীতিতে সংযুক্ত না হয়ে তিনি বিশ্বের সব জাতি ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি ও মিলনের আহ্বান জানালেন। যেটাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় আন্তর্জাতিকতাবাদ। প্রচলিত অর্থে আমরা জানি আন্তর্জাতিকতাবাদ মতবাদ হলো এমন এক রাজনৈতিক দর্শন, যা রাষ্ট্রের সংহতি, বিভিন্ন জাতির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং বিশ্বশান্তির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছিলেন, ‘আজ বিশ্বজুড়ে যে ক্ষমতার লড়াই চলছে, সে ক্ষমতার লড়াইয়ে আমরা কোনোমতেই জড়িয়ে পড়তে পারি না। এ জন্য আমাদের অবশ্যই সত্যিকারের স্বাধীন এবং জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করতে হবে। আমরা ইতিমধ্যেই সিয়াটো, সেন্টো ও অন্যান্য সামরিক জোট থেকে সরে আসার দাবি জানিয়ে এসেছি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের কোনো জোটে জড়িয়ে না পড়ার ব্যাপারে আমাদের বিঘোষিত সিদ্ধান্ত রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত জনগণের যে সংগ্রাম চলছে, সে সংগ্রামে আমরা আমাদের সমর্থন জানিয়েছি।’১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে যে ধারণা আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন, সেটা হঠাৎ কোনো বক্তব্য নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বশান্তি নীতি আজীবন লালন করতেন। তার এই মনোভাব আমরা পঞ্চাশের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে দেখতে পাই। তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লেই তা অনুভব করতে পারি। তিনি লিখেছেন, ‘নয়া রাষ্ট্র পাকিস্তানের উচিত ছিল নিরপেক্ষ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। আমাদের পক্ষে কারও সঙ্গে শত্রুতা করা উচিত নয়। সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুভাবে বাস করা আমাদের কর্তব্য। কোনো যুদ্ধ জোটে যোগদান করার কথা আমাদের চিন্তা করাও পাপ। কারণ আমাদের বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য সাহায্য করা দরকার। দেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও তা জরুরি।’
সবার সাথে বন্ধুত্ব, সকল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও কারো অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা এবং বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক বৈশিষ্ট্য; যা বঙ্গবন্ধুর শাসনামল থেকেই অনুসৃত হয়েছে। বাংলাদেশ যে বিশ্বশান্তি কামনা করে, তা ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মাটিতে পা রাখার সাথে সাথেই ব্যক্ত করেছিলেন। তখন তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘আমি বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে দেখতে চাই।’ শুধু তাই নয় বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনায় নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সংগত সংগ্রামকে তিনি বাংলাদেশের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করলেন। বাংলাদেশের সংবিধানে ২৫ অনুচ্ছেদে বিষয়টি সংযোজিত হলো। যেখানে স্পষ্টতই বলা হয়েছে:
১. জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের ও জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা–এই সকল নীতি হইবে রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি এবং এই সকল নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র (ক) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য চেষ্টা করিবেন; (খ) প্রত্যেক জাতির স্বাধীন অভিপ্রায় অনুযায়ী পথ ও পন্থার মাধ্যমে অবাধে নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও গঠনের অধিকার সমর্থন করিবেন; এবং (গ) সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ বা বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করিবেন।
বিশ্বসাম্রাজ্যবাদের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন ইউরোপ–আমেরিকার প্রত্যেকটি রাষ্ট্রই নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে চলছে এবং ক্ষমতা বৃদ্ধির এ প্রতিযোগিতাই মানবসভ্যতাকে তার চরম বিপদের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে নিজের স্বার্থই একমাত্র সত্য এবং ক্ষমতাই একমাত্র লক্ষ্য। ফলে যুদ্ধ হয়ে ওঠে অনিবার্য। এ অবস্থা অনুধাবন করেই দীর্ঘদিনের রাজনীতির অভিজ্ঞতায় বঙ্গবন্ধু তখন বলেন, মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি একান্ত দরকার। এ শান্তির মধ্যে সারা বিশ্বের সব নর–নারীর গভীর আশা–আকাঙ্ক্ষা মূর্ত হয়ে রয়েছে। ন্যায়নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত না হলে শান্তি কখনো স্থায়ী হতে পারে না। বিশ্বরাজনীতিতে উদার, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের জয়গান হলো আন্তর্জাতিকতাবাদের মূল কথা। বঙ্গবন্ধুর দেয়া বিভিন্ন বক্তব্যে এ ধারণা খুব জোরালোভাবে দেখা যায়। ধর্মীয় ও বর্ণবাদের আদর্শে প্রোথিত জাতীয়তাবাদের পাশাপাশি স্বজাত্যবাদী জাতীয়তাবোধেরও তিনি বিরোধী ছিলেন। তাই জাতিসংঘে দেয়া প্রথম ভাষণেই তিনি বলতে সক্ষম হন ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়সংগত জাতীয় অধিকারের কথা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ার জনগণের মুক্তির কথা। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উল্লেখ করা জিম্বাবুয়ে ১৯৮০ সালে, নামিবিয়া ১৯৯০ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। ফিলিস্তিনের অবস্থা এখনো লড়াই–সংগ্রামের মধ্যে চলছে। যেসব দেশ মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে তাদের প্রতি ছিল বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম শ্রদ্ধা। বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় দিবস উপলক্ষে ১৯৭৩ সালে জাতির উদ্দেশে দেয়া বাণীতে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমরা বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাসী। আমরা দুখী মানুষের কল্যাণে বিশ্বাসী। আমরা বিশ্বাসী জোট নিরপেক্ষতায়। আমরা পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী নই। কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়, সবার প্রতি বন্ধুত্ব– এই আমাদের লক্ষ্য।’
সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের নেতা হয়েও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রচলিত ধারার সেই বিশ্ব রাজনীতিতে (ঠাণ্ডা যুদ্ধে) সংযুক্ত না হয়ে তিনি বিশ্বের সব জাতি ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি ও মিলনের আহ্বান জানালেন। যেটাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় আন্তর্জাতিকতাবাদ। প্রচলিত অর্থে আমরা জানি আন্তর্জাতিকতাবাদ মতবাদ হলো এমন এক রাজনৈতিক দর্শন, যা রাষ্ট্রের সংহতি, বিভিন্ন জাতির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং বিশ্বশান্তির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের বক্তৃতায়ই বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছিলেন, ‘আজ বিশ্বজুড়ে যে ক্ষমতার লড়াই চলছে, সে ক্ষমতার লড়াইয়ে আমরা কোনোমতেই জড়িয়ে পড়তে পারি না। এ জন্য আমাদের অবশ্যই সত্যিকারের স্বাধীন এবং জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করতে হবে। আমরা ইতিমধ্যেই সিয়াটো, সেন্টো ও অন্যান্য সামরিক জোট থেকে সরে আসার দাবি জানিয়ে এসেছি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের কোনো জোটে জড়িয়ে না পড়ার ব্যাপারে আমাদের বিঘোষিত সিদ্ধান্ত রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত জনগণের যে সংগ্রাম চলছে, সে সংগ্রামে আমরা আমাদের সমর্থন জানিয়েছি।’
বঙ্গবন্ধু কেন জোটনিরপেক্ষ নীতিতে গেলেন, তার সুন্দর ব্যাখ্যাও তিনি জাতিসংঘে উপস্থাপন করলেন। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘বাংলাদেশ প্রথম থেকেই জোটনিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করেছে। এ নীতির মূলকথা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সকলের সঙ্গে মৈত্রী। শান্তির প্রতি যে আমাদের পূর্ণ আনুগত্য তা এ উপলব্ধি থেকে জন্মেছে যে একমাত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই আমরা আমাদের কষ্টার্জিত জাতীয় স্বাধীনতার ফল আস্বাদন করতে পারব এবং ক্ষুধা, দারিদ্র্য, রোগশোক, শিক্ষা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য আমাদের সকল সম্পদ ও শক্তি নিয়োগ করতে সক্ষম হব।’
পররাষ্ট্রনীতি একটি রাষ্ট্রের জাতীয় নীতি, লক্ষ্য এবং স্বার্থ বাস্তবায়নের একটি বিশেষ পদ্ধতি বা মাধ্যম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের আদর্শের ভিত্তিতে তার পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন করেছে– যার মধ্যে শান্তি, সমতা ও বন্ধুত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। এটা মূলত জাতিসংঘ ও জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের নীতিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। আমরা জানি জোটনিরপেক্ষতা হল এমন একটি নীতি যার মাধ্যমে কোনো রাষ্ট্র সমাজতান্ত্রিক বা ধনতান্ত্রিক কোনো জোটেই প্রবেশ না করে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৫৫ সাথে অনুষ্ঠিত বান্দুং সম্মেলন থেকে এ আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও বর্ণবাদ বিরোধিতা এবং বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের ভূমিকা অত্যন্ত ইতিবাচক।
কত মহাদেশ, সমুদ্রপাড়ের দ্বীপদেশ, জর্জরিত নিষ্পেষিত স্বাধীনতাকামী বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়েছে, তাঁর অবধারার সাথে সংযুক্ত হতে চেয়েছে। এসব রাষ্ট্র বা দেশকে গভীর আত্মীয়তাসূত্রে তিনি মেলবন্ধন করার চেষ্টায় উন্মুখ থাকতেন। হৃদয় উজাড় করে মিশেছিলেন সকলের সঙ্গে। শান্তিকামী রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু বিশ্ব মানবের মৈত্রীর কথা এমন সুন্দর করে বলে গেছেন, যা পৃথিবীর কম রাজনীতিবিদই পেরেছেন। তাঁর কথা ছিল, ধ্বংস নয় সৃষ্টি। যুদ্ধ নয় শান্তি। বিশ্বমানবের মধ্যে মৈত্রী স্থাপন করার প্রচেষ্টার জন্য ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি পদকে ভূষিত করে ।
পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম একটি সাধারণ উপাদান হলো প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের আচরণ ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর শাসনামলের অতি অল্প সময়ের মধ্যে (১৯৭১–১৯৭৫) বিশ্বনেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির নেতৃত্ব, বিচক্ষণতা বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন। যে কারণে তিনি সমগ্র বিশ্বের রাজনীতিবিদদের বা রাষ্ট্রনায়কদের শ্রদ্ধার আসনে বসতে পেরেছিলেন। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত তৃতীয় বিশ্বের মতো একটি দেশের রাষ্ট্রনায়ক হয়েও বিশ্বনেতৃত্বের কাছে তিনি অযাচিত শ্রদ্ধার অর্ঘ্য পেয়েছিলেন।
১২ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করার বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর সামনে একটি বড় দায়িত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়। এ বিষয়ে সাবেক কূটনীতিক মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম দিকে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো অর্জনে যে সাফল্য দেখায়, তা বঙ্গবন্ধু সম্যক উপলব্ধি করতেন। তাঁর প্রধান লক্ষ্যগুলো ছিল:
১. বাংলাদেশের পক্ষে বেশিসংখ্যক দেশের স্বীকৃতি আদায় এবং
২. দুনিয়ার বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদস্যপদ লাভ। আর
৩. ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), জোট নিরপেক্ষ সম্মেলন (ন্যাম), কমনওয়েলথ, জাতিসংঘসহ সব আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদস্যপদ লাভ করা।
শুধু স্বীকৃতির কূটনীতিই মুখ্য নয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর শাসনামলে অনেক দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিভিন্ন আলোচনায় তাঁর রাজনৈতিক মূল্যবোধ শক্ত অবস্থানে তুলে ধরতে সক্ষম হন। ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নানা উপাধিতে ভূষিত হন। সাম্প্রতিক সময়ে জাপানের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘জাপান টাইমস’ (১৩ আগস্ট, ২০০৯) বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে মন্তব্য করেছে, ‘দি গ্রেটেস্ট বাঙালি অফ অল টাইম’। ৫ এপ্রিল, ১৯৭২ সালে মার্কিন সাময়িকী ‘নিউজ উইক’ ম্যাগাজিনে তাঁকে ‘পয়েট অব পলিটিঙ’ উপাধি দেয়। পৃথিবীর প্রভাবশালী সকল পত্রিকাই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অসাধারণ মন্তব্য করেছে। লন্ডনের ‘অবজারভার পত্রিকা’র সাংবাদিক সিরিল ডান এক প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের এক হাজার বছরের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বলে উল্লেখ করেছেন।
সদ্য স্বাধীন তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ হয়েও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিরল সম্মানে ভূষিত হয়েছে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী এবং বাস্তববাদী পররাষ্ট্র দর্শনের কারণে। পুঁজিবাদী এবং সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার বিরোধপূর্ণ প্রতিযোগিতার বিপরীতে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার দূত হিসেবে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় বিশ্বের অবহেলিত দেশগুলোর রাজনৈতিক মুক্তির আদর্শিক নেতায় পরিণত হন। পররাষ্ট্রনীতির দক্ষ কুশলীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বলয়ের বাইরে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতায় পরিণত হন। যা বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা থেকে বিশ্বনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক মুন্সিয়ানা প্রতিবেশী দেশ বিশেষত: ভারতসহ মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যকারী সোভিয়েত ইউনিয়নকে যেমন সন্তুষ্ট করেছিল, তেমনিভাবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক নীতি প্রণয়নে উদ্বুদ্ধ করেছিল। শান্তি ও মৈত্রী স্থাপনের প্রচেষ্ঠার নেতৃত্বে অগ্রণী হয়ে বঙ্গবন্ধু মূলত বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের শির উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম : অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রন্টু দাশ :
সহকারী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়