জাতীয় কবি ও জাতির পিতার মধ্যে ছিল এক অনন্য যুগলবন্দিতা। দুজনেই ছিলেন বাংলা মায়ের অপরাজেয় বীর, দুজনেই ট্র্যাজেডির নায়ক। তাঁরা উভয়েই প্রবল বাঙালি জাতীয়তাবাদ চেতনার বোধে সমৃদ্ধ ছিলেন। একজন ব্রিটিশের বিরুদ্ধে, অন্যজন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করে গিয়েছেন। তাই তো বিবিসি জরীপে এই দুই বাঙালির একজন দখল করে আছেন সর্বকালের সেরা বাঙালির এক নম্বর স্থানটি, অপরজন তথা জাতীয় কবি দখল করে আছেন তিন নম্বর স্থানটি। আসলে বাঙালিত্বের সংজ্ঞায়নের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু ও নজরুল দুটি সম্পূরক সত্তা। একজন পূর্বসূরি, অন্যজন উত্তরসূরি।
কবি নজরুলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কবে প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রমাণ নেই। তবে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’এর পৃ; (১৫–১৬) তে লেখা রয়েছে, বঙ্গবন্ধুর আত্মকথায়–‘কনফারেন্স করলাম হুমায়ুন কবির সাহেবের বাড়িতে। কাজী নজরুল ইসলাম গান শোনালেন। আমরা বললাম, এই কনফারেন্সে রাজনীতি আলোচনা হবেনা। শিক্ষা ও ছাত্রদের কর্তব্য সম্বন্ধে বক্তৃতা হবে।’ তখন বঙ্গবন্ধুর বয়স ছিল ২১ বছর। সেদিন ছিল ১৯৪১ সালের ১২ আগস্ট, ঐদিন সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ হুমায়ুন কবীরের আহবানে ফরিদপুর জেলা মুসলিম ছাত্র সম্মিলনের অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। সেখানেই বঙ্গবন্ধুর সংগে বিদ্রোহী কবির প্রথম দেখা হয় বলে ধারণা করা হয়। এর পর পরই বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লেন, এবং বার বার কারারুদ্ধ হতে লাগলেন। কারাবন্দি থাকার সময় বঙ্গবন্ধু কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ‘বিদ্রোহী’ ও গান ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ সহ নানা সৃষ্টিকর্ম তাঁকে নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত করেছে, তার কারণ, কিশোর বয়স থেকে বঙ্গবন্ধু তাঁর বাড়িতে সওগাত’, ‘মোহাম্মদী’ আজাদ পত্রিকা রাখতেন এবং নজরুল রচনাবলী পড়তেন। নজরুলের কবিতা ছিল বঙ্গবন্ধুর মুখস্থ। ১৯৫৩ সালের একটি ঘটনার উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেছেন, ‘আমার কাছে তারা (পাকিস্তানি আইনজীবীরা) নজরুল ইসলাম এর কবিতা শুনতে চাইলেন, আমি তাদের, ’কে বলে তোমায় ডাকাত বন্ধু’, নারী’, সাম্য’, আরোও কিছু কবিতার কিয়দংশ শুনালাম’। ঘটনাটা ছিল হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে করাচী যাওয়ার পথে গাড়িতে থাকা পাকিস্তানী আইনজীবীদের অনুরোধে বঙ্গবন্ধুর নজরুল প্রেমের উদাহরণ, তাঁর মুখস্থ বলা কবিতাগুলোতে তিরস্কৃত চোর ডাকাত সহ মেহনতি মানুষের স্বার্থ ও অধিকারের কথা বলা হয়েছে, নারীর সমানাধিকারের কথা, এবং সমাজের সর্বস্তরে সমতা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করা কবিতাগুলোই তিনি শুনিয়েছিলেন, কেননা নজরুলের এসব চেতনা তিনি তাঁর অন্তরে ধারণ ও লালন করতেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর চেয়ে বয়সে একুশ বছরের ছোট ছিলেন। বয়সের এই ব্যবধান সত্ত্বেও দুজনের চিন্তায় ছিল একই চেতনা, তথা বাঙালির স্বাধীনতা এবং সর্বস্তরের মানুষের মুক্তি। তাই বলা যায়, নজরুল যা চিন্তা করেছেন, বঙ্গবন্ধু সে চিন্তার ধারাবাহিকতা এনেছেন, আর বাঙালিকে যথাযোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় কাজী নজরুল ছিলেন আদর্শিক ধ্রুবতারার মতো।
১৯৪২ সাল থেকে কবি কাজী নজরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়েন। কবির প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা এত গভীর ছিল যে, ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি অসুস্থ কবিকে কলকাতায় দেখতে গিয়েছিলেন। নজরুল বাঙালি জাতিকে তাঁর লেখনীর মাধ্যমে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন, আর বঙ্গবন্ধু দিলেন সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ। তাই একজন জাতীয় কবি, আরেকজন জাতির পিতা। দুজনই বিদ্রোহী। বিদ্রোহ করেছেন অন্যায়, অবিচার, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে। দেশপ্রেমের পরিচয় দিতে গিয়ে দুজনকেই করতে হয়েছে কারাবরণ। কাজী নজরুল ইসলাম কারাবরণ করেছেন সর্বমোট তিনশত ত্রিশ দিন, (৩৩০) দিন তথা ১মাস কম ১বছর। আর বঙ্গবন্ধু তো জীবন ভর কারাবরণ করেছেন, সর্বমোট চার হাজার ছয় শত বিরাশি (৪৬৮২) দিন, তথা প্রায় ১৩ বছর।
নজরুল সাহিত্যের মাধ্যমে বাঙলির গৌরবকে সাহসের সঙ্গে উচ্চারণ করে বলেছেন, ’বল বীর,-বল উন্নত মম শির।’ আর বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে প্রতিবাদী চেতনায় প্রদীপ্ত করতে গিয়ে বলেছেন,‘আর দাবাইয়া রাখতে পারবা না।’ নজরুলের অমর বাণী– ‘বাঙলা বাঙালির হোক’। বাংলার জয় হোক, বাঙালির জয় হোক আর বঙ্গবন্ধুর অমর স্লোগান ‘জয় বাংলা’এসব শব্দগুলি নজরুল ১৩৪৯ বঙ্গাব্দে তার ‘বাঙালির বাঙলা’ প্রবন্ধে প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। এ ছাড়া নজরুলের ভাঙার গান ‘কাব্যগ্রন্থের’ ‘পূর্ণ–অভিনন্দন’ কবিতার মাঝখানের কয়টি লাইনে ‘জয় বাংলা’ শব্দটি স্থান পেয়েছে। যেমন ‘না– আসা–দিনের অতিথি তরূণ/ তব পানে চেয়ে নিনিমিখ।/জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি–অন্তরীণ!’ বঙ্গবন্ধু তার ভালোবাসার কবি, আদর্শের কবির কাছ থেকে উচ্চারিত ও গ্রথিত ‘জয় বাংলা’ এনে সমস্ত বাঙালির মনে গেঁথে দিয়েছেন।
নজরুল ও বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ২১ বছর ০২ মাস ০৭ দিন বয়সের ব্যবধান থাকলেও তাঁদের চিন্তা চেতনা, দ্রোহ–বিদ্রোহে তাঁদের রয়েছে বিরাট মিল। দুজনেই ছিলেন নির্ভীক–নির্লোভ, অসীম সাহসী, তেজী ও ত্যাগী নেতা। দুজনেই সমভাবে এ বাংলায় দ্রোহের বাণী প্রচার করে, নজরূল হলেন–সাহিত্যের বিদ্রোহী বীর, হয়েছেন-‘পয়েট অব লিটারেচার’ আর বঙ্গবন্ধু হয়েছেন রাজদ্রোহী বীর, হয়েছেন-‘পয়েট অব পলিটিক্স’।
কবিকে অসম্ভব শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরই বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় বিদ্রোহী কবিকে ঢাকায় আনা হয়। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু কবিকে যে চিঠি দিয়েছিলেন, তা পড়লে কবির প্রতি শ্রদ্ধাময় ভালোবাসার প্রমাণ পাওয়া যায়। চিঠির বিবরণে লেখা ছিল-‘আমি আমার বন্ধু ও সহকর্মী জনাব মতিউর রহমান এবং আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক জনাব মোস্তফা সারোয়ারকে আপনার কাছে পাঠাচ্ছি। অনুগ্রহপূর্বপক আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। মুক্ত স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জনগণ ও আমার পক্ষে আমি আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনার জন্মবার্ষিকীতে আপনার আদর্শে বাংলাদেশকে সিক্ত হতে দিন। আমরা বাংলাদেশে সাগ্রহে আপনার আগমনের প্রতীক্ষা করছি। আমি আশা করি, আপনি অনুগ্রহ করে আসবেন। জয় বাংলা’।
এবার নজরুলের ঢাকা আগমনের দিন বঙ্গবন্ধুর কবির প্রতি আবেগময় ভালোবাসার আরেক উপখ্যান। কবির ঢাকায় আগমনের দিন বঙ্গবন্ধু তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও তদানীন্তন তথ্যমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীকে নিয়ে কবিকে দেখতে যান। এ সময় কবির পাশে ছিলেন কবির পুত্রবধূ। বঙ্গবন্ধু কবিকে দেখতে গেলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিল, কবি ও বঙ্গবন্ধু: এক হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য’। বঙ্গবন্ধু গভীর শ্রদ্ধা ভরে পুষ্পমাল্য পরিয়ে দিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। পরম শ্রদ্ধায় বারবার হাত বুলিয়ে দিতে থাকলেন কবির মাথায়, পিঠে, সর্বাঙ্গে। নির্বাক কবি অপলক নেত্রে তাকিয়ে রইলেন বঙ্গবন্ধুর দিকে।
বঙ্গবন্ধু, কবি নজরুল ইসলামকে যে সত্যিকারের শ্রদ্ধা ও সম্মান সহ তার হৃদয়ের মণিকৌটায় স্থান দিয়েছেন, তার প্রমাণ হলো, তিনি নজরুলকে ঢাকায় এনে ক্ষান্ত ছিলেন না, কবির থাকা খাওয়ার সুযোগ–সুবিধার বিষয়ও ভেবে রেখেছিলেন। কবিকে ঢাকায় ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার ২৮নং সড়কের বি–৩৩০ নম্বরের সরকারি বাড়ির দোতলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাখার ব্যবস্থা এবং আর্থিক বরাদ্দের বিষয়ও বিবেচনা করেন। বঙ্গবন্ধু কবির বাসভবন থেকে দেখে আসার পর সরকারি সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।
বঙ্গবন্ধু কবিকে ঢাকায় আনার পর নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন। কবির প্রতি বঙ্গবন্ধু যেন ভালোবাসার পূর্ণতা দিলেন।
বঙ্গবন্ধু তার প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা নির্ধারণের পর কবি নজরুলের ‘চল চল চল’ কবিতাটিকে রণসংগীতের মর্যাদা দেন। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর সরকারের আমলেই কবি নজরুলকে ঢাকা বিশ্ববদ্যালয় সম্মান সূচক ডিগ্রি ‘ডিলিট প্রদান করেন। ১৯৭৫ সালের ২২ জুলাই নজরুলের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চিকিৎসকের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানের জন্য পিজি হাসপাতালের ১১৭নং কেবিনে ভর্তি করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর চেতনায় চির ভাস্বর নজরুল। নজরুলের লেখা গান, কবিতা বক্তব্য, প্রদানের সময় উচ্ছ্বাস নিয়ে ব্যবহার করতেন তিনি। তার প্রিয় গান ছিল ‘ নম নম বাংলাদেশ মম’। আর কবিতার মধ্যে বিদ্রোহী, নারী, সাম্য, ইত্যাদি। –না, বঙ্গবন্ধু তার প্রিয় কবির মৃত্যু দেখে যেতে পারলেন না। কবির মৃত্যুর আগেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নামে এক কলঙ্ক তিলক সেঁটে দিয়েছিল এই বাংলার ললাট উদ্যানে। সপরিবারে নিহত হলেন কতিপয় পিতৃহত্যাকারী উচ্ছৃঙ্ক্ষল সেনা কর্মকর্তার হাতে। ঐ সময় জীবন্মৃত কবি পিজি হাসপাতালের ১১৭নং কেবিনে। একবছর পর দৈবচয়ন ভাবে বাঙালির কালো আগস্টের ২৯ তারিখ, ১৯৭৬, বাংলা ১৩৮৩ সালের ২ ভাদ্র কবিও সেই পিজি হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করেন।
আমাদের জাতির পিতা ও জাতীয় কবি দুজনই ছিলেন একই চেতনায় বিশ্বাসী, দুজনই বাংলার স্বাধীনতার ও মুক্তির চেতনায় আপোষহীন, অসামপ্রদায়িক, সাম্যবাদী এবং দৃঢ়প্রত্যয়ী নেতা। নজরুল বলেন, ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু–মুসলমান/মুসলিম তার নয়ন–মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ’। বঙ্গবন্ধু বলেন, -‘বাঙালি–অবাঙালি হিন্দু–মুসলমান সবাই আমাদের ভাই, তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের’। বিদ্রোহী কবি ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে কোলকাতা মুসলিম ইনস্টিউট হলে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য–সমিতির রজত–জুবিলি অনুষ্ঠানের ভাষণে বলেন, ‘বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি।’ বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চের ভাষণে বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই।’ বিদ্রোহী কবি ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শেষাংশে বলেন, ‘যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না/অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ–ভূমে রণিবে না/ বিদ্রোহী রণ–ক্লান্ত/ আমি সেইদিন হবো শান্ত।’ অপরদিকে বঙ্গবন্ধুও কখনোই সমর্পণের রাস্তায় স্বাধীনতার কথা বলেননি। বরং নজরুলের মতোই গোটা জাতির বুকে বিদ্রোহের আগুন প্রজ্বলিত করেছেন, এবং অনিবার্য স্বাধীনতার দাবীতে ৭ মার্চের ভাষণের শেষাংশে বললেন– ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা’। যা ছিল নজরুলের প্রতিধ্বনি, এবং আমাদের স্বাধীনতার পূর্ণ আহবান। মুক্তিযুদ্ধের জাগরণী মন্ত্র।
নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার ৯০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ ভারত যৌথ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বলেছিলেন, ‘বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল এবং বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানসিকতার দিক থেকে সমান্তরাল অবস্থানে রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছা ছিল শোষণহীন বাংলাদেশ গড়া। নজরুলও চেয়েছেন বঞ্চনাহীন অসামপ্রদায়িক সমাজ গড়তে। দুজনের স্বপ্ন ছিল এক ও অভিন্ন। দুজনেই ছিলেন বিদ্রোহী। একজন সাহিত্যে অন্যজন রাজনীতিতে। এজন্য একজনকে বলা হয় পোয়েট অব লিটারেচার, অন্যজনকে পয়েট অব পলিটিক্স।
বঙ্গবন্ধু ও নজরুল উভয়েই নিপীড়িত ও শোষিতের পক্ষের কণ্ঠস্বর। একজন যেমন অগ্নিবীণায় বৃটিশকে পর্যুদস্ত করে তুলেছেন, তেমনি অন্যজন সাত মার্চের মহাকাব্যিক ভাষণ দিয়ে জাগিয়ে তুলেছেন বিশ্বকে। বিদ্রোহী কবিতায় নজরুল যেমন বৃটিশ শাসককে আঘাত করেছেন, তেমনি ছয়দফার মোক্ষম হাতিয়ারে বঙ্গবন্ধু কাঁপিয়ে দিয়েছেন পশ্চিম পাকিস্তানিদের ভিত।
পিকস ডিজিজ এ আক্রান্ত হয়ে নজরুল যেমন অকালে জীবন্মৃত হয়ে ছিলেন, তেমনি ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রে ঘাতকের হাতে বঙ্গবন্ধুকে অকালে জীবন দিতে হয়েছে। আগস্ট এই মহান দুই বিপ্লবীকে, দুই সাম্যবাদীকে, দুই সমচেতনার মহান নেতাকে চিরঘুম পাড়িয়ে রেখেছে বাংলার মায়ার্দ্র মাটিতে। দুজনের জন্যই লাল সালাম ও কৃতজ্ঞতা। সূত্র : বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া বিভিন্ন নজরুল গবেষক এর প্রবন্ধসমূহ।
লেখক : প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ