বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ কোনোদিনই স্বাধীন হতো না

১০৪তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে সিএমপির আলোচনা সভা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২১ মার্চ, ২০২৪ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরী পুলিশ (সিএমপি) আয়োজিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসের আলোচনা সভায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেছেন, বাংলাদেশ কখনো স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল না। বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র বানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ কোনদিনই স্বাধীন হতো না বলেও এই সমাজবিজ্ঞানী মন্তব্য করেন। ড. অনুপম সেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু আমাদেরকে একটি দেশই নয়, একটি জাতীয়তাবোধও দিয়ে গেছেন। আজ এই যে ‘আমার’ বলে আমরা বলছি, এই যে ‘আমার’ ভাবতে পারছি, এই দেশটি যে আমার, এই দেশের পতাকা যে আমার সেটি ভাবতে পারছি। এই ভাবনার যে ‘জাতীয়তাবোধ’ যেই ‘চেতনা’ সেটি বঙ্গবন্ধুই আমাদের ভেতর জাগ্রত করেছেন। ড. অনুপম সেন ইতিহাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘লর্ড ক্লাইভ মাত্র ৩ হাজার সৈন্য নিয়ে যখন নবাব সিরাজউদ্দৌলার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করছিলেন তখন পাশেই কৃষকেরা ক্ষেতে কাজ করছিল। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। কারণ তারা ভেবেছিল রাজা রাজা যুদ্ধ হচ্ছে, এক রাজা যাবে তো অন্য রাজা আসবে। আমাদের কি!’ তিনি বলেন, যদি ওইদিন স্থানীয় মানুষগুলো দা খন্তা নিয়েও সিরাজউদ্দৌলার পাশে দাঁড়াতেন তাহলে লর্ড ক্লাইভের বাহিনীকে খুঁজে পাওয়া যেতো না। এটি ক্লাইভই এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন। ওইদিন স্থানীয় মানুষগুলোর মাঝে যদি জাতীয়তাবোধের চেতনা থাকতো তাহলে হয়তো উপমহাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতো। তিনি বঙ্গবন্ধুর জাগিয়ে দেয়া জাতীয়তাবোধ চেতনার ধারাবাহিকতায় এদেশ স্বাধীন হয়েছে।

গতকাল বুধবার সকালে দামপাড়াস্থ সিএমপি সদর দপ্তরের মাল্টিপারপাস শেডে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মহানগর ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, জেলা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার একেএম সরোয়ার কামাল, এন্টি টেররিজম ইউনিটের ডিআইজি মোহাম্মদ মুসলিম, সিএমপির এডিশনাল কমিশনার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।

চকবাজার সার্কেলের সহকারী পুলিশ কমিশনার সব্যসাচী মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, উপ পুলিশ কমিশনার (সদর) আব্দুল ওয়ারীশ।

অনুষ্ঠানে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির, পুলিশ কনস্টেবল ওমর ফারুক সরকার, সিএমপি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী অর্পা বড়ুয়া।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ একাকার বলে মন্তব্য করে বলেন, যদি বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হতো তাহলে বাংলাদেশ হতো না। আর বাংলাদেশ না হলে আজ আমরা যে যেখানে আছি সেখানে আদৌ পৌঁছাতে পারতাম না। তিনি দৈনিক আজাদীর প্রয়াত সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, উনি স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। আমি একুশে পদক পেয়েছি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর দুজন সম্পাদকই দুইটি রাষ্ট্রীয় পদক পেয়েছি। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে আমাদের এই পদকপ্রাপ্তি অসম্ভব ছিল।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এম এ মালেক বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে তারা অকাতরে জীবন দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছেন। বঙ্গবন্ধুকে শুধু হাজার বছরের নয়, যুগ যুগান্তরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বিশ্বের বরেণ্য নেতারা বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন করে যেসব বক্তব্য রেখেছিলেন তার অনেকগুলো উদ্বৃতি দিয়ে সিএমপি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের শোনান। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। শুধু এটুকু জানলে হবে না। উনি যে আদর্শ এবং উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন, যাদের জন্য বাংলাদেশ চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ এবং উদ্দেশ্যকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি কেবল তখনিই বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ সার্থক হবে, তাঁকে সম্মান দেয়া হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে মানুষের তরে জীবন গড়ার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনন্য স্থপতি বলে মন্তব্য করে বলেন, দীর্ঘ সাধনায় তিনি বাঙালির মানসলোকে সঞ্চার করেছিলেন স্বাধীনতার বাসনা। উপনিবেশিক শৃঙ্খলিত একটি ঘুমন্ত জাতিকে তিনি জাগ্রত করেছেন। তাদের করে তুলেছেন স্বপ্নমুখী এবং মুক্তিমুখী। এই যে একটি জাতির মানসপটে স্বাধীনতার বাসনা জাগিয়ে তোলা, এটিই বঙ্গবন্ধুর অক্ষয় অবদান বলেও সিএমপি কমিশনার কৃঞ্চ পদ রায় মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, উপনিবেশিক শৃঙ্খলার মধ্যে তাঁর মতো জাতীয়তাবাদী নেতার জাগরণ বিস্ময়কর। তিনি পুরো দেশকেই জাগিয়ে তুলেছেন। পুরো জাতিকেই জাগিয়ে তুলেছেন। এই কারণেই তিনি বঙ্গবন্ধু, এই কারণেই বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ মানে এক ও অভিন্ন।

ছোট্ট জীবনের ১৩ বছরেরও অধিক সময় জেলে বন্দী থাকার কথা উল্লেখ করে পুলিশ কমিশনার কৃঞ্চ পদ রায় বলেন, তিনি তাঁর জীবন যৌবন সবই বাঙালি জাতির জন্য উৎসর্গ করেছেন। আমরা যারা স্বাধীনতার আগে জন্মেছি তারা বঙ্গবন্ধুর কারণেই একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। আর যারা স্বাধীনতার পরে জন্মেছি তারা বঙ্গবন্ধুর জন্যই একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে জন্ম নিতে পেরেছি এবং বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বলতে পারছি আমি বাংলাদেশের নাগরিক।

তিনি বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজনীতির কবি’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘বিশ্ব দুইভাগে বিভক্ত, শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ তার মানে তিনি জনতার জন্য কাজ করছেন, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তিনি সিএমপি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীসহ বঙ্গবন্ধুর এই সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার মন্ত্রটিকে বুকে ধারণ করার আহ্বান জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্টেশন রোডের ফুটপাত পুনর্দখল ঠেকাতে ফের অভিযানে চসিক
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬