বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। যেটি দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড়। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলার ১৮ হাজার এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ১২ হাজার একরসহ মোট ৩০ হাজার একর জায়গায় গড়ে উঠছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। দ্বিতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর আরও ১৮ হাজার একর জমি যুক্ত হবে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সঙ্গে।
২০১৪ সালে কাজ শুরু হয় এই প্রকল্পের। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর হবে পূর্ণাঙ্গ শিল্পশহর। এতে শিল্পকারখানার জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুবিধা থাকবে। কলকারখানার পাশাপাশি থাকবে আবাসন ও বিনোদনের ব্যবস্থা। থাকবে একটি সমুদ্রবন্দর, যেখান থেকে সহজেই চট্টগ্রাম ও অন্যান্য বন্দরে পণ্য আনা-নেয়া করা যাবে।
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর গড়ে উঠছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাধুরচর, শীলচর, মোশাররফচর ও পীরেরচর এবং ফেনীর সোনাগাজী ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড অংশের ধু-ধু চরাঞ্চলজুড়ে। দেশের বিশেষ এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে মাটি ভরাট করে তৈরি হচ্ছে একের পর এক শিল্পপ্লটসহ নানা ধরনের অবকাঠামো। সেখানে নদী-নালা, খাল, ছড়ার সমন্বয়ে প্রায় ১ হাজার একর জমিকে প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গত ২৪ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘বিনিয়োগে ব্যাপক সাড়া, অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে ধীরগতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্পনগরে বিনিয়োগ-শিল্পায়নে রয়েছে ব্যাপক সাড়া। এ পর্যন্ত দুই শতাধিক দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে। অথচ সেই তুলনায় রেডি শিল্পের প্লটসহ পরিপূর্ণ অবয়ব তৈরিতে ধীরগতি কাটেনি। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে উদ্যোক্তারা এখন শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠায় অবকাঠামো সুবিধার জন্য মুখিয়ে আছেন। ব্যাংক ঋণের সুদসহ বিপুল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। আংশিক অবকাঠামো দিয়ে শিল্প-কারখানা স্থাপন করা যাচ্ছে না। তাই অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে আরও দ্রুততার তাগিদ দিয়ে আসছেন সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী, শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। অন্যথায় অর্থনৈতিক সম্ভাবনা মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে তারা সতর্ক করেছেন।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, শিল্পনগরে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো উন্নয়নের কিছু কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, কিছু চলমান রয়েছে এবং অনেক বৃহৎ কাজ পরিকল্পনাধীন রয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা শিল্প-কারখানা স্থাপনের উপযোগী কাঠামো যেন দ্রুত তৈরি করা হয়। বিনিয়োগকারীদের অবকাঠামো চাহিদার মধ্যে রয়েছে ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির সংযোগ তথা ইউটিলিটি সার্ভিস নিশ্চিত করা, অভ্যন্তরীণ সড়ক রাস্তাঘাট নির্মাণ সম্পন্ন করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে ফোর লেইন বা বহু লেইন একাধিক সংযোগ সড়ক নির্মাণ, হাসপাতাল, শিল্প এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভাঙন ও লবণাক্ততা থেকে রক্ষায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্লুুইচ গেট তৈরি ইত্যাদি। এই অবকাঠামো অবশ্যই জরুরি। এগুলো তৈরি হয়ে গেলে এই শিল্পনগরী বদলে দেবে পুরনো শিল্প-কারখানার গতানুগতিক বৈশিষ্ট্য। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নতুন আঙ্গিকে, আধুনিক প্রকল্পে শিল্প-প্রতিষ্ঠানের যে নবতর ধারা দৃশ্যমান হবে তাও চমক ও বিস্ময়ের ব্যাপার। বলা হচ্ছে, দেশবাসী প্রথমবারের মতো দেখবে ভিন্ন মাত্রার এক অত্যাধুনিক শিল্পনগর যা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাবে। এতে মানসম্মত কর্মপরিবেশ ছাড়াও থাকবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বিনোদনের বহুমাত্রিক উপাদান। মানুষের মৌলিক নাগরিক চাহিদায় সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মযোগকে অবারিত করবে।
সরকারের সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ তাঁর এক লেখায় বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের অবস্থান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এবং সামুদ্রিক অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়ায় এটি বেজাকে বড় পরিসরে স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করছে। শহরে জনসংখ্যা বাড়লে কর্মসংস্থান ও অন্য সর্বজনীন পরিষেবার পাশাপাশি আবাসন, পরিবহন, জ্বালানি ও অন্যান্য অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। নগরায়ণের সমস্যাগুলো মোকাবেলার জন্য একটি অত্যাধুনিক শিল্পনগর হতে পারে সঠিক সমাধান, যা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে এবং উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটি জীবনমান উন্নয়নের অন্যান্য উপায় ব্যবহার করে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত দিকগুলোর সঙ্গে মিলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করতে পারবে।
তাই অবকাঠামো তৈরির কাজ ঢিমে-তালে চলছে বলে যে চিত্র আজাদীর প্রতিবেদনে আমরা পাই, তাতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি দিতে অনুরোধ করছি। যত দ্রুত সম্ভব অবকাঠামো তৈরির কাজে গতি সঞ্চার করুন।