বখাটে কিশোরদের হাতেই খুন

বালু ব্যবসায়ী হত্যায় ৪ জনের স্বীকারোক্তি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

কথা কাটাকাটির জের ধরে খুন করা হয় ইপিজেড থানা এলাকার ব্যবসায়ী মো. আলমগীরকে। ঘটনায় জড়িতরাও একই এলাকার কিশোর বয়সী এবং ব্যবসায়ী আলমগীরের পূর্ব পরিচিত। ঘটনায় জড়িত পাঁচজনের মধ্যে চারজন গ্রেপ্তার হয়ে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে জানিয়ে ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বলেন, প্রথমে আমরা ধারণা করেছিলাম ব্যবসায়িক বিরোধ কিংবা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। কিন্তু পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে এলাকার বখাটে কিশোর সন্ত্রাসীরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা মোট ৫ জন ছিল। এর মধ্যে ৪ জন ধরা পড়েছে। আরেকজন অচিরেই ধরা পড়বে বলে আমাদের বিশ্বাস।
মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে ওসি জানান, বাদী আরমান হোসেন নিহত আলমগীর প্রকাশ আলমগীর কোম্পানির ছেলে। ১৯ ডিসেম্বর দায়েরকৃত মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার বাবা পতেঙ্গা থানাধীন ১২ নম্বর এলাকাধীন বালির ড্রেজার থেকে বালি কিনে বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছে সরবরাহ করেন। তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার ব্যবসায়িক কাজের জন্য ঘর থেকে বের হয়ে কাজ শেষে ভোরে ঘরে ফিরেন। ১৮ ডিসেম্বর বিকাল ৩টার দিকে আলমগীর কোম্পানি ঘর থেকে বের হয়ে ড্রাম ট্রাক রাখার জায়গা খেজুরতলা বালির মাঠে যাওয়ার সময় ছেলে আরমানকে বলেন ঘর থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে বালির মাঠে যেতে। আরমান ২ লাখ টাকা নিয়ে বাবাকে দিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, ১৯ ডিসেম্বর ভোরে ঘুম ভেঙে বাবাকে ঘরে না পেয়ে তার মার কাছে জানতে চান। মা জানান, তিনি ফিরেননি। কোনো কারণে দেরি হচ্ছে ভেবে বাদী আরমান হোসেন কর্মস্থলে চলে যান। সকাল ৮টার দিকে আরমানের ছোট বোন লিজা তাকে ফোন করে জানান, তাদের বাবা এখনো ঘরে ফিরেননি। তার মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আরমান তখন তাদের ড্রাম ট্রাকের ড্রাইভার ছারোয়ার ও হেলপার রাসেলকে ফোন করেও বাবার খবর পাননি। ১৯ ডিসেম্বর বেলা ১২টার দিকে আরমানের বন্ধু সুমন তাকে ফোন করে জানান, ইপিজেড থানাধীন খেজুরতলা বেড়িবাঁধের পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগরের কিনারায় পাথরের ব্লকের ভেতরে তার বাবা আলমগীরের লাশ পাওয়া গেছে। আরমান অফিস থেকে ছুটি নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে বাবার লাশ শনাক্ত করেন। লাশের নানা স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পুলিশ লাশের পাশ থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মুহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, ঘটনার পর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত আসামি নুর হোসেন প্রকাশ ছক্কা বাবুকে (২২) ২০ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টানা অভিযান চালিয়ে ইপিজেড থানাধীন বিভিন্ন এলাকা থেকে বাকি তিনজন সাইফুল ইসলাম প্রকাশ সম্রাট প্রকাশ সম্পদ (১৯), পরিতোষ ঋষি প্রকাশ রাজু প্রকাশ ইমন প্রকাশ ইসলাম হোসেন ইমন (১৯) এবং মো. মেহেদী হাসান প্রকাশ সোহেলকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং জানায়, কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা আলমগীরকে খুন করে।
প্রসঙ্গত, নিখোঁজের একদিন পর ১৯ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় উত্তর পতেঙ্গার রিং রোড বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খাল থেকে আলমগীর (৪৫) নামে এক বালু ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি উত্তর পতেঙ্গার খেজুরতলা এলাকার আব্বাস আলী বাড়ির নূর আলীর পুত্র।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্বিতীয় দিনেও গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে তিন অবৈধ ইটভাটা
পরবর্তী নিবন্ধআগ্রাবাদে ২৭০ পাসপোর্টসহ ২ যুবক আটক