পার্বত্য অববাহিকার সোনাইছড়ি খালটি বহমান রয়েছে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ওপর দিয়ে। বর্ষাকালে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বরইতলী ও আশপাশের এলাকায় বন্যা হয় এই খালের কারণেই। তবে শুকনো মৌসুমের দৃশ্য ওল্টো। পানি ধরে না রাখলে এখানকার কয়েক হাজার একর জমিতে ধান, রকমারি সবজিসহ রবি শস্যের চাষাবাদ দুরূহ হয়ে পড়ে হাজারো কৃষকের। তাদের কথা বিবেচনায় রেখে ছড়া খালের বরইতলী অংশে কয়েক দশক আগে নির্মাণ করা হয় দুটি স্লুইচ গেট। তবে স্লু্ইচ গেট দুটি অনেক দিন ধরে অকেজো থাকায় একটি চক্র মাটির বাঁধ দিয়ে সেচ সুবিধার বিনিময়ে কৃষকের কাছ থেকে উচ্চ হারে বখরা আদায় করত। কিন্তু এবার কৃষকেরা চান নিজেরাই মাটির বাঁধ নির্মাণ করে ৫০০ একর জমির চাষাবাদ নিশ্চিত করতে।
প্রান্তিক কৃষকদের ভাষ্য, স্লুইচ গেট দুটি একেবারে অকেজো হয়ে পড়ার সুযোগ নিয়ে ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উপর পাড়াস্থ দ্বিতীয় স্লুইচ গেট অংশে মাটির বাঁধ নির্মাণ করে প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিকভাবে শোষণ করে আসছিল রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একটি চক্র। তবে এবার দেশে পট–পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সেচের পানির খরচ বা খাজনা আদায়ের নামে প্রভাবশালীদের করা সেই শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়ার দাবি তুলেছেন হাজারো কৃষক।
ভুক্তভোগী প্রান্তিক কৃষকেরা চান প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে তারা নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে সেই মাটির বাঁধ নির্মাণ করে প্রায় ৫০০ একর জমির চাষাবাদ নিশ্চিত করতে। কিন্তু বর্তমানে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা বিপরীত রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী আরেকটি চক্র আগেকার মতোই কৃষকদের শোষণ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এরই অংশ হিসেবে দ্বিতীয় স্লুইচ গেট তথা উপর পাড়া পয়েন্টে ওই চক্রটি মাটির বাঁধ নির্মাণের তোড়জোড় চালাচ্ছে। এজন্য ছড়াটির উভয় তীরে লাল পতাকা উঁচিয়ে রেখেছে। যাতে ইচ্ছেমতো কৃষকদের কাছ থেকে বখরা আদায় করতে পারে।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছালেকুজ্জামান দৈনিক আজাদীকে জানান, বিগত সময়ে একটি চক্র নিজেদের ইচ্ছেমতো সোনাইছড়ি খালে বাঁধ দিয়ে কৃষকদের শোষণ ও হয়রানি করেছে। দেশে রাজনৈতিক পট–পরিবর্তনের পর আগেকার মতোই আরেকটি চক্র সেখানে বাঁধ নির্মাণের নামে কৃষকদের জিম্মি করার অপচেষ্টা শুরু করেছে। এজন্য প্রান্তিক কৃষক, জমির মালিক ও সচেতন লোকজনের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। যে কমিটি কৃষক–শ্রমিকদের সমন্বয়ে এই মাটির বাঁধ নির্মাণ করবে। এতে মিঠা পানির সেচ সুবিধার নামে কৃষকের পকেট কেউ কাটতে পারবে না। এজন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বাঁধ নির্মাণের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে গঠিত কমিটি।
বাঁধ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও জমির মালিক আবদুল লতিফ এবং সাধারণ সম্পাদক মাস্টার সালাহউদ্দিন আহমদ অভিন্ন বক্তব্যে দৈনিক আজাদীকে বলেন, বর্ষাকালে রূদ্রমূর্তিরূপ ধারণ করা সোনাইছড়ি খালের উপর পাড়ার বাঁধটি অতীতে স্থানীয় কৃষকদেরই তত্ত্বাবধানে ছিল। কিন্তু বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটি চক্র সেচ প্রকল্পটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কৃষকদের পকেট কাটাসহ নানাভাবে হয়রানি ও জিম্মি করে রেখেছিল। একইভাবে আরেকটি প্রভাবশালী চক্র অতীতের মতোই কৃষকদের শোষণ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তাই এলাকার সকল কৃষক ও জমির মালিক মিলে উক্ত বাঁধ নির্মাণ করে মিঠা পানির সেচ সমস্যা দূর করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ প্রান্তিক কৃষকের কথা বিবেচনায় নেবেন বলে আশা করি আমরা। উপর পাড়ার প্রান্তিক কৃষক কলিম উল্লাহ বলেন, সোনাইছড়ি খালে বাঁধ দিয়ে সেচ সুবিধা পেলে বোরো ধান, সবজি ও গোলাপ চাষে আগ্রহী হবেন অনেকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, প্রান্তিক কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে এই বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতিকুর রহমান বলেন, বরইতলী ইউনিয়নের সোনাইছড়ি খালের অকেজো স্লুইচ গেট সংলগ্ন অস্থায়ী মাটির বাঁধ দেওয়া নিয়ে করা আবেদনটি কৃষি কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রান্তিক কৃষকের স্বার্থ রক্ষা হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।