বইমেলা শুরু হচ্ছে আজ

জিমনেশিয়াম মাঠেই আয়োজন মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত

হাসান আকবর | শনিবার , ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:০১ পূর্বাহ্ণ

পুরনো প্রাঙ্গণেই আজ শনিবার শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণে আজ বিকাল ৩টায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। মেলা চলবে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকার সমৃদ্ধ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের বিশাল সম্ভার নিয়ে মেলায় যোগ দিচ্ছে।

শীতের হিম হিম আবহে শুরু হওয়া মেলা প্রথম থেকে জমে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রতিদিন মেলা অঙ্গনে কবিসাহিত্যিকসহ প্রিয় লেখকদের সরব উপস্থিতি থাকবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এবারকার বইমেলাকে সফল করার সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ১ লাখ বর্গফুটের বেশি আয়তনের জিমনেসিয়াম মাঠে সর্বমোট ১৪০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার আদলে চট্টগ্রামেও বইমেলার সূচনা করার লক্ষ্য থাকলেও নানা কারণে দীর্ঘদিনেও তা হয়নি। বেশ কয়েক বছর পৃথক পৃথক আয়োজনে বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা চট্টগ্রামে বইমেলার আয়োজন করত। পরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালে জিমনেসিয়াম মাঠে সম্মিলিত বইমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন থেকেই সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে প্রতি বছর বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে সহযোগিতা করে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ। চট্টগ্রামের এই বইমেলা দিনে দিনে শুধু বই বিকিকিনি নয়, এটি চট্টগ্রামের সাহিত্যপ্রেমীদের বার্ষিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।

২০১৯ সাল থেকে জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য আয়োজনে মেলা অনুষ্ঠিত হলেও গত বছর মেলা স্থানান্তর করা হয় সিআরবিতে। এবার পুরনো অঙ্গনে ফিরে এসেছে বইমেলা।

এবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের শীর্ষ প্রকাশনা সংস্থাসহ ১৪০টি স্টল নিয়ে আয়োজন রয়েছে মেলায়। এর মধ্যে ঢাকার প্রকাশনা সংস্থা ৪৪টি, চট্টগ্রামের ৭৪টি, ডাবল স্টল রয়েছে ৩৩টি। ঢাকা থেকে আরও প্রকাশনা সংস্থা স্টল চেয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রামের প্রকাশনা সংস্থাকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় ঢাকার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিনে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

মেলার আয়োজন এবং প্রস্তুতি সম্পর্কে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বইমেলা আয়োজন চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা। এটি তরুণ প্রজন্মকে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করবে এবং মাদকসহ ক্ষতিকর আসক্তি থেকে দূরে রাখবে। তিনি বলেন, বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অনেকে মুঠোফোন ও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। সময়, অর্থ, স্বাস্থ্য সবই শেষ করছে এর পেছনে। এতে তারা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বই অন্যতম বন্ধু, যা তাদের মুঠোফোন ও মাদকের আসক্তি থেকে বের করে সৃজনশীল মেধাবী প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

মেয়র বলেন, আমরা আশা করি এই মেলায় চট্টগ্রামের সর্বস্তরের লেখকপাঠক ও সৃজনশীল নাগরিকদের অংশগ্রহণে সংস্কৃতি ও মননের উৎকর্ষের পাশাপাশি ইতিহাসঐতিহ্যসংস্কৃতির সম্মিলন ঘটবে। জাতীয় জীবনে যেসব ব্যক্তি কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের একুশে সম্মাননা স্মারক পদক ও সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হবে। বাংলাদেশে ঢাকার পর চট্টগ্রাম দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরীই শুধু নয়, বাণিজ্যিক রাজধানীও। তাই এই নগরীর বইমেলা আলাদা গুরুত্ব বহন করে।

চট্টগ্রামের বইমেলা প্রসঙ্গে একজন প্রকাশক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর নগরী। এই নগরী তার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। এই ঐতিহ্যের অন্যতম উজ্জ্বল দিক হলো অমর একুশে বইমেলা, যা প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয়। বইমেলা কেবলমাত্র বইপ্রেমীদের মিলনমেলা নয়, বরং এটি ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণা, সাহিত্যচর্চা, এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশকদের অংশগ্রহণে মেলাটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, মেলায় লেখক ও কবিদের সাথে সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ থাকে; যা পাঠক ও লেখকের মধ্যে চমৎকার সেতুবন্ধন তৈরি করে।

বইমেলা স্থানীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে অপর একজন প্রকাশক বলেন, প্রকাশনা সংস্থা, বই বিক্রেতা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা মেলার সময় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যবসা করেন। এছাড়া মেলায় আগত দর্শনার্থীরা স্থানীয় হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং পরিবহন সেবারও ব্যবহার করেন, যা সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওমর আলী মার্কেটে ভয়াবহ আগুন
পরবর্তী নিবন্ধআল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চললে সুখী সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব