বই হোক নিত্য সঙ্গী

অরূপ কুমার বড়ুয়া | শুক্রবার , ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

১ ফেরুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা। চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন শহরে নানা পরিসরে মেলার আয়োজন থাকবে মাস জুড়ে। সারা বছর সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে যারা কাজ করেন কবি সাহিত্যিক লেখক গবেষক পাঠকদের মিলন মেলা এই বইমেলা।

সভ্যতার আদি লগ্ন থেকে মানুষ নিজেদের অর্জিত জ্ঞানরাশি পাথরে লিপিবদ্ধ করে রাখতো পরবর্তী সময়ের জন্য। তারপর পাথর লিপি, গাছের পাতা, ছাল, বাকল, তাম্রলিপি থেকে মানুষ কাগজ আবিষ্কার করে। আর সেই কাগজে লেখা ছেপে মলাট বন্দী করে বইয়ের আবিষ্কার হয়।

১৮০২ সালে ম্যাথু কেরির উদ্যোগে প্রথম বইমেলায় আসর বসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। এরপর ১৮৭৫ সালে প্রায় ১০০ জন প্রকাশক মিলে নিউইয়র্কের ক্লিনটন শহরে আয়োজন করে এক বৃহৎ বই মেলার। ১৯৪৯ সালে শুরু হয় জার্মানির ফ্রাংকফুটের বৃহৎ বইমেলা যা পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক রূপ নেয়। সেখান থেকে আধুনিক বইমেলায় শুভ সূচনা হয়ে আজ পৃথিবীর দেশে দেশে নানা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। প্রকাশনার দিক থেকে লন্ডন বইমেলা সবচেয়ে বড় বইমেলা। সাধারণত মার্চ মাসে এ মেলার আয়োজন করা হয়। ১৯৪৮ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলিকাতা বইমেলা আন্তর্জাতিক বইমেলার স্বীকৃতি অর্জন করে। এ ছাড়া বর্তমানে লন্ডন, ফ্রান্স, নিউইয়র্ক সহ পৃথিবীর বেশীরভাগ শহরে আন্তর্জাতিক মানের বইমেলায় আয়োজন করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিশিষ্ট প্রকাশক চিত্ত রঞ্জন সাহা তৎকালীন বর্ধমান হাউজের প্রাঙ্গণে মাত্র ৩২ টি বই নিয়ে মেলার সূচনা করেন এবং ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এভাবে ছোট বইমেলা চলতে থাকে। ১৯৭৮ সালে তৎকালীন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক আশারাফ সিদ্দিকী এই বইমেলাকে বাংলা একাডেমির সাথে সম্পৃক্ত করেন কালক্রমে যা আজকের বাংলা একাডেমির অমর একুশে বই মেলায় রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে এই বইমেলা বাঙালির প্রাণের স্পন্দন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভাগীয় শহর থেকে জেলা শহরে।

বইমেলা মূলত পাঠকদের নানা প্রকার বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে এবং এটি বই বিপণন ও লেখক পাঠকের মত বিনিময়ের একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম।

বইমেলা শুধু মাত্র বইয়ের মেলা নয়। যে অঞ্চলে বইমেলা হয় সে অঞ্চলের জন সংস্কৃতির প্রকাশের ব্যবস্থা হয়ে থাকে। আলোচনা সভা, কবিতা পাঠের আসর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে লোক মনোরঞ্জন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রচার বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতির আদান প্রদান করে থাকে। বইমেলায় উন্মুক্ত ও রুচিশীল পরিবেশ পাঠকদর্শককে বিনোদন দিয়ে থাকে। বইমেলা ব্যস্ত নাগরিক জীবনের একঘেঁয়েমি দূর করে প্রশান্তি এনে দেয়।

আমাদের জাতীয় জীবনে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা জাতির রুচির উৎকর্ষ সাধন ও মনন গঠনে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক বইমেলা তৃণমূল জনগোষ্ঠীর মনন গঠনের জন্য যথেষ্ট নয়। এই বইমেলাকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে নিয়ে যেতে বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলার ছোট শহরেও বইমেলায় আয়োজন করে দেশের প্রতিটি প্রান্তে জ্ঞান ও সংস্কৃতির বিকাশ সাধনে সচেষ্ট হতে হবে। বইমেলা বিশুদ্ধ সংস্কৃতির বাহন। বইয়ের পঠন পাঠনের মাধ্যমে জাতিকে একটি বিশুদ্ধ জ্ঞান নির্ভর কুসংস্কার মুক্ত বিজ্ঞান মনস্ক জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত করতে পারলে তবেই হবে বইমেলার সার্থকতা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের জিআই পণ্যের দিকে নজর দিন
পরবর্তী নিবন্ধঅমর একুশে