কবি রবি ঠাকুর বলেছিলেন, ‘মানুষ বই দিয়ে অতীত ভবিষ্যৎ এর মাঝে সাঁকো বেঁধে দিয়েছে’। স্কুলবেলায় খুব কাছের বন্ধু অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বোরহানসহ দুজনে একসাথে বই পড়ার প্রতিযোগিতা করতাম। নতুন বই কিনলে আমি আগে পড়তাম, অতঃপর তাঁকে ধার দিতাম। বোরহান নিলে আমাকে ধার দিতো। সে সময় মনে হতো এ যেন ভালোবাসা বিনিময় করছি। মজার বই পড়লে কাহিনি দুজন দুজনকে শেয়ার করতাম। বই নিয়ে একটা জোকস বলি, এক ঢাকাইয়া কুট্টি দস্যি বউ গেছে বই কিনতে অমর একুশের বইমেলায়। স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে সানগ্লাস মাথার ওপরে তুলে হাঁক দিয়ে বললেন, তোমগু স্টলে ওজনে হালকা ১০ পাতার দামী বই আছে নিহি? বিক্রয়কর্মী হালকা বই খুঁজে না পেয়ে বললেন, তা আপা আপনার সেই দামী হালকা বইটার নাম কইনছে দেহি। লেখক কিডা হের নামও কওন লাগব। দস্যি মহিলা বললেন, আব্বে হালা আমার টাইম কিলাইছো কেলা? আমার স্বোয়ামীর চেক বই। সবুজ কালারের ১০ পাতার। চেক বইটা জলদি দেন। তাড়াতাড়ি মগার দাম নিয়া টেনশান নেহি। বিক্রয়কর্মী দাত বের করে হাসতে লাগলেন। দস্যি মহিলা এবার রেগে অগ্নিশর্মা। তুমগো হালায় বইমেলায় স্টল দেবার কইছে কেলা মশকরা করন লাইগা? তোমগু এতো বড়ো বইমেলায় ছোট বই নেই কেন? শুরু হলো দস্যি বউয়ের যুদ্ধ। শেষে পুলিশ এসে সমাধান করলো। পুলিশ এসে বলল, ভাই দস্যি বউ থেকে সাবধান এদের সব বই উপহার দিবেন তবে ভুলেও স্বাক্ষরিত চেক বই দিবেন না।
আমার এক বন্ধু বলল, শুনেছিস কে যেন একুশের বইমেলায় কেঁদে কেঁদে বইয়ের স্টল ভাসিয়ে দিয়েছে। পাঠকরা নাকি তাঁর কান্না দেখে বই কিনেছে বেশ। অনেকে আবার কান্নার ভিডিও নিয়ে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যেমে ট্রল করছে। তাঁকে বললাম চল তাহলে ‘শিয়াল ও বনমোরগ’ লড়াই বাঁধিয়ে, হুক্কা হুক্কা হুয়া হুক্কা হুয়া কুকরু কুক কুক করে বই বিক্রি করা শুরু করি। সে হাসতে হাসতে খুন। বর্তমান সময়টা খুব দুঃসময় চলছে। সেটার জন্য দায়ী আমরা নিজেরাই। বিজ্ঞানের আশীর্বাদ যেমন আছে, তেমনি অভিশাপও আছে। বই–র বদলে সবার হাতে হাতে মুঠোফোন। মোবাইল আসক্তি মাদকাসক্ত–র চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
বইমেলায়ও কিছু পাঠক এসে বইয়ের স্টল থেকে অনুমতি ছাড়া বই হাতে নিয়ে ছবি তুলে সেলফি দে। অথচ তারা বই কিনে না মেলায় আসে ঘুরতে। এটা বড়ো লজ্জার এবং দৃষ্টিকটুও বটে।
বই হলো মৌমাছির মতো যা অন্যদের সুন্দর মন থেকে মধু সংগ্রহ করে পাঠকের জন্য নাকি নিয়ে আসে। বই পড়লে মনের জানালা খোলে যায়, সেই খোলা জানালা দিয়ে পুরো পৃথিবীকে উপলব্ধি করা যায়।
আগামীর প্রজন্মকে যদি আলোকিত করতে চান, বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। আনন্দের সাথে পাঠদানের জন্য পাঠাগারের প্রয়োজন। বই পড়া, বই প্রেমী করে তোলার অভ্যাস ইশকুল বেলা থেকে গড়ে তুলতে হবে। বই হলো মনের বড় দাওয়াই, পাঠাগার হচ্ছে আনন্দঝর্ণাধারা প্রবাহিত ডাক্তারবিহীন এক হাসপাতাল। যেখানে প্রেসক্রিশন হলো বই বই এবং বই। শিশু কিশোরদের হাতে মোবাইল নয় বই তুলে দিন। বই পড়ার অভ্যাস যদি শিশুকাল থেকে গড়ে তুলতে পারেন, তাহলে পড়ার জন্য জোড়াজোড়ি করতে হবে না। দেখবেন সে আপনি আপনি আনন্দের সাথে বই পড়ছে। এ জন্য পিতা মাতা ও শিক্ষকদের আনন্দের সাথে বই পড়ার জন্য উৎসাহ দিতে হবে। বই কিন্তু প্রকৃত বন্ধু একটি ভালো বই হতে পারে অপরিসীম জ্ঞানের আধার। শুরু হয়েছে অমর একুশের বইমেলা আপনার সন্তান ও পরিবার–পরিজনকে নিয়ে বই মেলায় আসুন বই কিনতে কৃপণতা করবে না প্লিজ। বই কিনতে উৎসাহিত করুন বই কিনুন প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। শিশুদের হাতে মোবাইল নয়, বই তুলে দিন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে ঘটি–বাটি নয় পুরস্কার হিসেবে বই দিন বই হলো মনের দাওয়াই।