ফ্ল্যাগ ভ্যাসেল প্রোটেকশন অ্যাক্টের কয়েকটি ধারা হাইকোর্টে স্থগিত

আগামী ছয় মাস বিদেশি কন্টেনার জাহাজকে এমএমডি থেকে অনুমোদন নিতে হবে না বিশ্বের সমুদ্র বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব নিশ্চিতে এই উদ্যোগ

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ১৩ জুন, ২০২৪ at ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের স্বার্থ সুরক্ষায় প্রণীত ফ্ল্যাগ ভ্যাসেল প্রোটেকশন অ্যাক্ট নিয়ে ব্যাপক কড়াকড়ির মাঝে উচ্চ আদালত আইনটির কয়েকটি ধারা স্থগিত করে দিয়েছেন। আগামী ছয় মাস বিদেশি কন্টেনার জাহাজগুলোকে মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্ট থেকে কোন অনুমোদন বা ওয়েভার সার্টিফিকেট নিতে হবে না। একই সাথে ওয়েভার সার্টিফিকেট নেয়ার বাধ্যতামূলক এসব ধারা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে তার কারণ দর্শানোর জন্য রুলনিশি জারি করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমানের যৌথ বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর ফলে দেশের কন্টেনার জাহাজ মালিকদের এখন থেকে প্রতিযোগিতামূলক বাজার থেকে পরিবহনের পণ্য যোগাড় করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বের সমুদ্র বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইনটি অমান্য করে কন্টেনার বোঝাই করায় বিদেশি বেশ কয়েকটি জাহাজকে লাখ লাখ টাকা জরিমানা করে মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্ট (এমএমডি)

বিদেশি জাহাজের ক্ষেত্রে ওয়েভার নেয়ার ব্যাপারটি দীর্ঘদিন আগে অডিন্যান্স হিসেবে জারি করা হয়। পরবর্তীতে তা আইন হিসেবে পাশ করা হয়। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ ফ্ল্যাগ প্রোটেকশন অর্ডিন্যান্স এবং ২০১৯ সালে আইন হিসেবে পাশ করা হলেও এটি অনুসরণে খুব বেশি কড়াকড়ি ছিল না। দেশি বিদেশি জাহাজ নিজেদের মতো করে পণ্য পরিবহন করছিল। কিন্তু গত বছর খানেক ধরে এমএমডি থেকে আইনটি নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হলে বিশ্বের নানা দেশের জাহাজ মালিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিভিন্ন দেশে চলাচলকারী কন্টেনার এবং রো রো ভ্যাসেল অপারেটরদের সংগঠন ওয়ার্ল্ড শিপিং কাউন্সিল (ডব্লিউএসসি) থেকে ফ্ল্যাগ ভ্যাসেল প্রোটেকশন অ্যাক্টের কিছু ধারা ও শর্ত সংশোধনের আহ্বান জানিয়ে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয়।

এই আইন অনুযায়ী দেশের বন্দরের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে বাংলাদেশি আমদানি রপ্তানি পণ্য পরিবহন করতে আগে ভাগে মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্টের প্রিন্সিপ্যাল অফিসার (পিও এমএমডি) থেকে অনুমোদন বা ছাড়পত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্টের (এমএমডি) প্রিন্সিপ্যাল অফিসার বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) এবং বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ওশনগোয়িং শিপ ওনার্স এসোসিয়েশনের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট বন্দরে দেশীয় পতাকাবাহী কোনো জাহাজ নেই বা পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে উপস্থিত হওয়ার সিডিউল নেই মর্মে নিশ্চিত হওয়ার পরই বিদেশি জাহাজকে বাংলাদেশমুখী উক্ত পণ্য বোঝাইয়ের ছাড়পত্র বা ওয়েভার সার্টিফিকেট প্রদান করে। বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজ উপস্থিত বা ১৫ দিনের মধ্যে আসার সিডিউল থাকলে ওই পণ্য বিদেশি কোনো জাহাজ পরিবহন করতে পারে না। আবার কোন জাহাজ বিদেশি বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে আসলেও ফিরতি পথে ওয়েভার না পেয়ে পণ্য বোঝাই করতে হিমশিম খায়।

বিষয়টি নিয়ে ওয়ার্ল্ড শিপিং কাউন্সিলও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংগঠনটির সিঙ্গাপুর অফিস থেকে আইনটির বেশ কিছু ধারা ও শর্ত শিথিল করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছিল। ১৫ দিন আগে সিডিউল দিয়ে ওয়েভার সনদ নেওয়ার প্রসঙ্গে কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, যেখানে ৩/৪ দিনের ট্রানজিটে পণ্য পরিবাহিত হয়, সেখানে ১৫ দিন আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে সনদ যোগাড় করা অসম্ভব। বিদেশি জাহাজ মালিকদের সংগঠনের পাশাপাশি দেশের তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকেও আইনের কড়াকড়ির ব্যাপারটি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছিল। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে অরজিন টু অরজিন পণ্য পরিবহনের মধ্যে ফ্ল্যাগ প্রোটেকশন অ্যাক্ট সীমাবদ্ধ রাখার জন্যও পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।

দেশের ৫০ শতাংশ পণ্য দেশীয় জাহাজ দিয়ে পরিবহনের লক্ষ্য নিয়ে ফ্ল্যাগ প্রোটেকশন অ্যাক্ট করা হয়। কিন্তু বিএসসির একটিও কন্টেনার জাহাজ নেই। দেশের বেসরকারি কোম্পানিগুলোতে জাহাজের সংখ্যা খুবই কম হওয়ায় দেশীয় জাহাজ দিয়ে ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহন অসম্ভব। বাংলাদেশের পতাকাবাহী কন্টেনার জাহাজের সংখ্যা সিঙ্গেল ডিজিট পার হতে পারেনি। অথচ চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সাথে সিঙ্গাপুর, কলম্বো এবং পোর্ট কেলাং মিলে ৮০টির বেশি বিদেশি কন্টেনার জাহাজ চলাচল করে। এসব জাহাজের চলাচল নির্বিঘ্ন না থাকলে সমুদ্রপথে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য সামাল দেওয়া কঠিন বলেও সরকারকে জানায় বিদেশি জাহাজ মালিকদের স্থানীয় এজেন্টেরা। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন একটা সাড়া দেয়া হয়নি।

অবশেষে বাংলাদেশ কন্টেনার শিপিং এসোসিয়েশন ( বিসিএসএ) আইনটির তিন এর ১ নম্বর ধারার এ সি এবং ডি উপধারা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করে। এতে নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রনালয়ে সচিব, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্টের মূখ্য কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রতিপক্ষ করা হয়। আদালত শুনানি শেষে উপরোক্ত আদেশ প্রদান করেন। রিটের তিন নম্বর প্রতিপক্ষ সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিদেশি জাহাজের পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ওয়েভার সার্টিফিকেট না দেখারও নির্দেশ দেয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্রেতার আগ্রহে মোটা শিংয়ের রাজস্থানী ‘কাঙ্খারা’
পরবর্তী নিবন্ধতারেকসহ ১৫ সাজাপ্রাপ্তকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে, সংসদে প্রধানমন্ত্রী