চট্টগ্রাম নগরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘ছোট সাজ্জাদ’ এর ৬ সহযোগীকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন এলাকায় সাজ্জাদকে পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান সে। এরপর থেকে পুলিশ তাকে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এবার এই আসামি ফেসবুক লাইভে এসে নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমানকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ১০টা ৩৯ মিনিটে নিজের ফেসবুকে লাইভে এ হুমকি দেন সে। কোনো অবস্থাতেই তার হাত থেকে ওসি বাঁচতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন লাইভে। ১৯ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের এই লাইভে ওসিকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালও করেন। এ ঘটনায় ওসি বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার রাতেই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ ১০টির বেশি মামলা রয়েছে।
লাইভে শীঘ্রই আদালতে আত্মসমর্পণ করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, বিচার না পেলে নিজেই প্রতিশোধ নিবেন। প্রয়োজনে নিজে মরে যাবেন।
লাইভে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ছোট সাজ্জাদ বলেন, ওসি যে অবস্থা করছে, যদি পুলিশ না হতো তাহলে আমি ন্যাংটা করে রাস্তায় রাস্তায় পেটাতাম। আমি এখনো চুপ আছি আদালতকে শ্রদ্ধা করে। আমার স্ত্রীকে থানায় নিয়ে নির্যাতন করেছে। আমার সন্তান মারা গেছে। আমি মামলা করেছি। মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। আমি মামলা করার পর ওসি আরিফ আমার ওপর ফেডআপ হয়ে গেছে। পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে সাজ্জাদ বলেন, আপনারা না জেনে ওসি আরিফের কথা ধরে আমার নামে অভিযোগ আনছেন তা মিথ্যা এবং ভুল। আপনারা যাচাই–বাছাই করে অ্যাকশন নেন। আমি ধোয়া তুলসি পাতা–তা বলছি না। আপনারা তদন্ত করেন। পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ওসি আরিফ আমার নামে পরপর তিনটি মামলা দিয়েছে। যেকোনো সময় আমি আদালতে আত্মসমর্পণ করে ফেলবো। কারণ আমি ঘটনাগুলোতে ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী–প্রমাণ নাই যে আমাকে জেলে ঢুকিয়ে রাখবে। আমার ক্ষতি আরেকজন করলে আমি কাউকে ছেড়ে দিব না। আপনি (পুলিশ কমিশনার) ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত করান। পুরো ঘটনা কি একটা রিপোর্ট বানান। এরপর একটা ব্যবস্থা নেন। ওসি আরিফকে বদলি করান। নিজেই প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন, যদি আমি আদালতে বিচার না পাই আত্মসমর্পণের পর আমার বিচার আমি করে নেব। আমার ছেলের প্রতিশোধ আমি নিতে পারি। আমার ছেলের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে যদি মারা যেতে হয় তাও দ্বিধাবোধ নাই। আমার এক বিন্দু পরিমাণ আফসোস হবে না। লাইভের শেষ অংশে সাজ্জাদ বলেন, একপর্যায়ে গিয়ে দেখবেন ওসি আরিফ গণপিটুনিতে মারা যাবে। ওইসময় আমার দোষ দিয়েন না যে, সাজ্জাদের ছেলেরা মেরে ফেলেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া এলাকায় দোকানে বসে চা পানের সময় কালো রংয়ের একটি নোয়া গাড়িতে করে গিয়ে তাহসিন নামে এক যুবককে গুলি করে খুন করা হয়। এ ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় তাহসিনের বাবার করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ছোট সাজ্জাদকে। এর আগে গত ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসা লক্ষ্য করে গুলি করার অভিযোগ রয়েছে সাজ্জাদ ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে। এছাড়া চাঁদা না পেয়ে গত বছরের ২৭ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকায় মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের বাসা লক্ষ্য করেও গুলি করেন সাজ্জাদ। এ ঘটনায় হাছান বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন। এছাড়াও চাঁদার জন্য বিভিন্ন ভবনে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে সাজ্জাদ জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। ফেসবুক লাইভে সাজ্জাদ তার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ তোলা হচ্ছে সবগুলোতে তিনি জড়িত নন দাবি করে সঠিক তদন্ত করারও অনুরোধ জানান। সমপ্রতি চট্টগ্রাম আদালতে চান্দগাঁও থানার ওসি আরিফ হোসেন, বায়েজিদ বোস্তামী থানার দুই এসআইসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন সাজ্জাদের স্ত্রী। সেখানে তাকে থানায় আটকে রেখে নির্যাতন এবং গর্ভের ভ্রুন নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়।
এদিকে সাজ্জাদ ধরা না পড়ায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী থানার বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এলাকায় তার চাঁদা দাবির বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে। নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অঙিজেন অনন্যা, শীতলঝরনা, কালারপুল, বায়েজিদ থানার সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ, নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ এলাকায় ১৫ থেকে ২০ জনের বাহিনী নিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালান সাজ্জাদ। চাঁদা না পেলেই সাজ্জাদ গুলি করেন। সাজ্জাদ গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও তার সহযোগীরা এখনো সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বলেন, সাজ্জাদ পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাকে ধরতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাকে যেহেতু সে হুমকি দিয়েছে, তাই আইন মোতাবেক আমি একটি জিডি করেছি থানায়। আমার থানায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। শুধু সাজ্জাদ কেন, কোনো সন্ত্রাসীকেই আমরা ছাড় দেব না। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো খুনের মামলা আছে। আমরা পুলিশ, জনগণের সেবায় নিয়োজিত। আমাকে কেউ খুনের হুমকি দিলেও আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাব।