ইন্টারনেট জগতে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত মাধ্যম ফেসবুক। আমাদের বাংলাদেশেও ফেসবুকের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। শহরের সচিব থেকে শুরু করে গ্রামের অজপাড়া গাঁয়ের দিনমজুরকে পর্যন্ত আজকাল ফেসবুক ব্যবহার করতে দেখা যায়। সহজ এবং দ্রুত নিজের অনুভূতি ও ছবি বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা বন্ধুদের মাঝে পৌঁছাতে পারা,হারানো বন্ধুকে খুঁজে পাওয়া, অপরিচিত মানুষের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পারাসহ নানা কারণে ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে চলছে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা।
কিন্তু, এত উপকারের পরও ফেসবুক ব্যবহারে সামান্য অসতর্কতার জন্য প্রতিনিয়ত ঘটছে বিভিন্ন অঘটন। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জবাবদিহিতা ছাড়াই মতপ্রকাশের সুযোগ থাকায় অসংখ্য মূর্খ লোক এখানে এসে সহজেই মূর্খতা ছড়াচ্ছে। বিশিষ্টজনরা বলেন যে, আমাদের দেশে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর উপকারের চেয়ে ক্ষতিক্ষর প্রভাব বেশি। যারফলে, এসব থেকে বেরিয়ে আসাও অসম্ভব প্রায়।
তাই তো ফেসবুক ব্যবহারের মাধ্যমে সৃষ্ট সামপ্রদায়িক দাঙ্গা, পারস্পরিক কলহ,পরকিয়ার কারণে মারামারি, মামলা,হত্যা,আত্নহত্যার ঘটনাও আমরা লক্ষ্য করি। কিছুদিন আগে পত্রিকায় প্রকাশিত এক সংবাদে দেখা যায় মেয়েকে ফেসবুক ব্যবহার করতে নিষেধ করে মেয়ের সাথে কথা কাটাকাটির জেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বাবা। আবার, ফাটল ঘটছে বহু দম্পতির সাংসারিক জীবনে। আর, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে রামুতে যে সামপ্রদায়িক দাঙ্গা বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর মানুষ লক্ষ্য করেছিল এর মূলে ছিল একটি মাত্র ফেসবুকের পোস্ট। অন্যদিকে রাজনীতিও আজ ফেসবুকে বেশি হয়ে যাওয়ায় এর ফলে অনেক হত্যার ঘটনাও ঘটে চলছে। আমাদের চট্টগ্রামেও পর পর কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের জন্য ফেইসবুক পোস্টকে দায়ী করা হয়। আবার,কোন জায়গা থেকে কোথায় যাচ্ছে সেসব ফেসবুকে সাথে সাথে পোস্ট করার ফলে, শত্রুরা গন্তব্য স্থানে আগে থেকে ওঁৎপেতে থেকে হামলার সুযোগ পাচ্ছে।
আমাদেরকে বুঝতে হবে এসবের জন্য কিন্তু সামাজিক এই যোগাযোগের মাধ্যমটি সৃষ্টি হয় নি। শুধুমাত্র দ্রুত এবং সহজে যোগাযোগ স্থাপনের সাথে সাথে একটি বৈশ্বিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্ব উপযোগী মানুষ তৈরীর মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই সেদিন যাত্রা শুরু করেছিল ফেসবুক। আর আজ আমরা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল, বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ না থেকে কিংবা অতি আবেগী হয়ে নিজে আজেবাজে পোস্ট করে এবং অন্যের ছবি ও অনুভূতিতে বাজে মন্তব্য করে অযাচিত কিছু ঘটনার জন্ম দিয়ে মাধ্যমটিকে আগামীর জন্য অশনি সংকেত হিসেবে উপস্থাপন করতে চলছি। তাই, ফেসবুক ব্যবহারে আমাদের যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখতে হবে “ফেসবুক আমি ব্যবহার করব, আমাকে যেন ফেসবুক ব্যবহার করতে না পারে “।