২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে যে কোনো একদিন বেঙ্মিকোর মাধ্যমে দেশে করোনার টিকা আসবে। আর ২৬ জানুয়ারি থেকে টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। গতকাল সোমবার বিকেল সোয়া ৪টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক একথা জানান। এসময় টিকা বিতরণ কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য অধ্যাপক শামসুল হক। আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরকারিভাবে নির্ধারিত ইপিআই কোল্ড স্টোরেজে পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করবে বেঙ্মিকো। ২৭ তারিখের মধ্যে জেলা পর্যায়ে এ টিকা পৌঁছাবে। আর ফেব্রুয়ারির শুরুতে টিকা পাবে দেশের মানুষ। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।
অঙফোর্ডের তৈরি এই টিকা প্রত্যেককে দুই ডোজ করে দিতে হয়। সে কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রথমে পরিকল্পনা করেছিল, প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকার অর্ধেক ২৫ লাখ মানুষকে দিয়ে তাদের জন্য বাকি টিকা সংরক্ষণ করা হবে। তবে সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার নতুন তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ডোজ দেওয়ার দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে। সে কারণে প্রথম চালানে পাওয়া টিকা প্রথম মাসেই একসাথে ৫০ লাখ মানুষকে দেওয়া হবে। কারণ দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার জন্য আমরা ৮ সপ্তাহ সময় পাব। এর মধ্যে টিকার আরও চালান চলে আসবে। এভাবে আমরা বেশি সংখ্যক মানুষকে দ্রুত টিকা দিতে পারব।
অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ অপারেশনাল প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, টিকা আসার পর কোনো মেডিকেল কলেজ বা হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে। এরপর এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ শেষে মাঠ পর্যায়ে টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, ‘টিকাটা যেহেতু প্রথম বাংলাদেশে আসছে, সে কারণে আমরা দুয়েকটা জায়গায় অল্প কিছু মানুষের ওপর টিকা দেব। সেটা মেডিকেল কলেজ হতে পারে, অথবা হাসপাতালও হতে পারে। সেখানে ভ্যাকসিনেটর বা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যদি কেউ টিকা নিতে চান, তাদের ওপর প্রয়োগ করা হবে। টিকা দেওয়ার পর সাত দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। এরপর ফিল্ডে কাজ শুরু করে দেব। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় পর্যায়ে টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যাবে।’
অঙফোর্ডের তিন কোটি ডোজ টিকা আনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত নভেম্বরে যে চুক্তি হয়েছিল, তাতে প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। এরপর প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা সরবরাহ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে যেন কোনো ধরনের বিভ্রান্তি না হয়, সেজন্য ভূমিকা রাখতে সাংবাদিদের প্রতি অনুরোধ জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
ভ্যাকসিনেশনের সেন্টার : উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজেপি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে। টিকা দেওয়ার জন্য সাত হাজার ৩৪৪টি দল তৈরি করা হয়েছে। একটি দলের মধ্যে ছয়জন সদস্য থাকবে। এর মধ্যে দু’জন টিকাদানকারী (নার্স, স্যাকমো, পরিবারকল্যাণ সহকারী) ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন।
কোল্ড চেইন ধারণক্ষমতা : ৬৪ জেলার ইপিআই স্টোর (ডব্লিউআইসি/আইএলআর), ৪৮৩টি উপজেলার ইপিআই স্টোর (আইএলআর)। একেকটি ডব্লিউআইসি কোল্ড স্টোরে এক লাখ থেকে চার লাখ ২৫ হাজার ডোজ টিকা রাখা যাবে। আইএলআর স্টোরে রাখা যাবে সাত হাজার একশ ডোজ টিকা। কোল্ড বঙে ৯শ ডোজ টিকা পরিবহন করে নেওয়া যাবে। তাছাড়া কোভিড-১৯ টিকা সংরক্ষণের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারণ করা হবে। তা যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য দেশের সব জেলা ও সিটি করপোরেশনের ইপিআই সেন্টারে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়ার মাধ্যমে যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে জাতীয় পর্যায়ে কোল্ড চেইন ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে বিএডিসি ও অন্যান্য জায়গা থেকে কোনো রুম ভাড়া নেওয়া হবে।
টিকাদান প্রক্রিয়া ছয় ধাপে সম্পন্ন হবে : এক. এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে নিবন্ধন। দুই. অনলাইন পোর্টাল থেকে ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ। তিন. ভ্যাকসিন দেওয়ার তারিখ ও তথ্য পাঠানো হবে। চার. নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হবে। পাঁচ. প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট তারিখে পরবর্তী ডোজ টিকা দেওয়া হবে। ছয়. দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পর পোর্টাল থেকে ভ্যাকসিন সনদ দেওয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এবং অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বক্তব্য রাখেন।