ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে : প্রধান উপদেষ্টা

একদিন থ্রি জিরো বিশ্ব গড়ে উঠবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগদান

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত সোমবার নিউ ইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত এবং ভারতের জন্য মনোনীত রাষ্ট্রদূত সার্জিও গোরের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। দেশ এজন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বৈঠকে সার্জিও গোর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। বৈঠকে বাণিজ্য, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা, সার্ক পুনরুজ্জীবন, রোহিঙ্গা সংকট এবং ঢাকাকে লক্ষ্য করে পরিচালিত ভ্রান্ত তথ্য প্রচারসহ দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। খবর বাসসের।

প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজারে বসবাসরত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন। জবাবে মার্কিন কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের জন্য জীবনরক্ষাকারী সহায়তা বজায় রাখার আশ্বাস দেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সার্ক প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সম্মেলন আয়োজন করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকার এ সংস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্তি বাংলাদেশের উন্নয়নকে বহু গুণে এগিয়ে নিতে পারে। এজন্য বাংলাদেশ আসিয়ানে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া তিনি নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুততর করতে পারব। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা সার্জিও গোরকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগদান : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। তার সঙ্গে ছিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেয়ার আগে প্রধান উপদেষ্টা উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিও লুবেটকিন, চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল বাচেলেট এবং বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গার সঙ্গে বৈঠক করেন।

একদিন থ্রি জিরো বিশ্ব গড়ে উঠবে : বিডিনিউজ জানায়, বিশ্বকে বদলে দিতে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ মুক্ত বা ‘থ্রি জিরো’ বিশ্ব গড়ে তুলতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এও আশা প্রকাশ করেছেন, একদিন থ্রি জিরো বিশ্ব গড়ে উঠবে। তিনি বলেছেন, আমি তিন শূন্যের এক পৃথিবীর কথা বলছিশূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ (যাতে দারিদ্রের অবসান ঘটে) এবং শূন্য বেকারত্ব (যা সবার সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে সম্ভব)। শূন্য বর্জ্য (জিরো ওয়েস্ট) ধারণাটিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি জাতিসংঘ মহাসচিবের জিরো ওয়েস্ট ইনিশিয়েটিভের অংশ। এটি কোনো কল্পনা নয়, ইতোমধ্যে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।

সোমবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘সোশ্যাল বিজনেস, ইয়ুথ অ্যান্ড টেকনোলজি’ শীর্ষক এক বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ কারণেই আমরা তরুণদের সর্বত্র থ্রিজিরো ক্লাব গড়ে তুলতে উৎসাহিত করছি, যেখানে প্রত্যেকে থ্রি জিরো মানুষ হয়ে উঠতে পারে। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, একজন থ্রি জিরো মানুষ প্রতিশ্রুতি দেয় টেকসইভাবে জীবনযাপন করার, বর্জ্য কমিয়ে আনার এবং সামাজিক উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার। একইসঙ্গে তারা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সম্পদ বৈষম্য এবং বেকারত্বে কোনো অবদান না রাখার জন্য সচেষ্ট হয়। যত বেশি মানুষ এই আন্দোলনে যুক্ত হবে, এই ক্লাবগুলো রূপ নেবে থ্রি জিরো পরিবারে, থ্রি জিরো গ্রামে, থ্রি জিরো শহরে এবং একদিন গড়ে উঠবে একটি থ্রি জিরো বিশ্ব।

এটি একটি ছোট্ট পদক্ষেপ দিয়ে শুরু হয় মন্তব্য করে নোবেলজয়ী ইউনূস বলেন, কিন্তু একসাথে সেই পদক্ষেপগুলোই বিশ্বকে পাল্টে দিতে পারে। তিনি বলেন, এই অস্থির সময়ে প্রকৃত রূপান্তর নিহিত আছে আমাদের ঐক্যে। যদি আমরা একসঙ্গে হাত মিলাই, সামাজিক ব্যবসার শক্তি, তরুণদের উদ্যম এবং প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাই, তবে জটিলতম বৈশ্বিক সংকটও আমরা সমাধান করতে পারব। আসুন আমরা এক নতুন তরঙ্গের স্থপতি হইন্যায়, টেকসই ও আশার ভিত্তিতে নির্মিত এক পৃথিবীর। এমন এক পৃথিবী, যেখানে আমাদের যৌথ স্বপ্ন মানবতার জন্য নতুন ভোরের সূচনা করবে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে এদিন নিউ ইয়র্কে এসে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। আগামী ২ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটানা ৩৪ বছর হজের খুতবা দেওয়া সৌদি গ্র্যান্ড মুফতির ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম ৪ অক্টোবর