করোনা টিকার মজুদ ফুরিয়ে আসছে চট্টগ্রামে। মহানগরসহ জেলায় বর্তমানে মজুদ টিকার ডোজের সংখ্যা অর্ধ লক্ষেরও কম (৪৫ হাজারের সামান্য বেশি)। প্রথম ডোজ বন্ধ থাকলেও দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে জেলায় (মহানগরসহ) ৭ হাজারের বেশি মানুষ টিকা নিচ্ছেন প্রতিদিন। সে হিসেবে মজুদ অর্ধ লাখের কম ডোজ টিকা দিয়ে বড় জোর এক সপ্তাহ মতো টিকাদান কার্যক্রম চালানো যেতে পারে। যদিও মজুদ টিকায় ঈদের আগ পর্যন্ত চালিয়ে নেয়ার আশা করছেন চট্টগ্রাম সিটিকর্পোশেন (চসিক) করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তারা বলছেন, এর মাঝে শুক্রবারসহ সরকারি ছুটির দিন রয়েছে। যেদিনগুলোতে টিকাদান বন্ধ থাকে। তাই মজুদ টিকায় ঈদের আগ পর্যন্ত চালিয়ে নেয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি। এদিকে ঈদের আগ পর্যন্ত চালিয়ে নেয়ার আশা প্রকাশ করলেও মহানগরের টিকার মজুদ শেষ হচ্ছে এর আগেই। চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া গতকালের (৪ এপ্রিল) তথ্য অনুযায়ী- মহানগরে আর ২১ হাজার ৮৯০ ডোজ টিকা মজুদ রয়েছে। আর গতকাল একদিনে শুধু মহানগরে টিকা নিয়েছেন প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মানুষ। সে হিসেবে মজুদ ২১ হাজার টিকায় ৫ কর্মদিবসের বেশি চালানো নিয়ে সংশয়ের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন- দৈনিক ৪ হাজার মানুষ টিকা নিলেও ২১ হাজার টিকা ৫ কর্মদিবসের মধ্যেই শেষ হয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে ২৩ হাজারের সামান্য বেশি ডোজ টিকা মজুদ রয়েছে। আর দিনে আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ টিকা নিচ্ছেন উপজেলা পর্যায়ে। সে হিসেবে মজুদ টিকায় উপজেলাগুলোতে এক সপ্তাহের বেশি টিকাদান কার্যক্রম চালানো যাবে বলে মনে করেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। ঈদের আগ পর্যন্ত মোটামুটি সমস্যা হবে না বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দফায় ৪৮ হাজার ৯০০ ভায়াল এবং দ্বিতীয় দফায় ৩০ হাজার ৬৫০ ভায়ালসহ সবমিলিয়ে ৭৯ হাজার ৫৫০ ভায়াল টিকা পায় চট্টগ্রাম জেলা (মহানগরসহ)। প্রতি ভায়ালে ১০ ডোজ হিসেবে প্রাপ্ত টিকার মোট ডোজ সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ ডোজ। এর মধ্যে মহানগরসহ পুরো জেলায় ১ম ও ২য় ডোজ মিলিয়ে ইতোমধ্যে সাড়ে ৭ লাখ ডোজ টিকাদান সম্পন্ন হয়েছে। সে হিসেবে আর ৪৫ হাজারের সামান্য বেশি ডোজ টিকা এখন অবশিষ্ট রয়েছে।
মহানগরসহ পুরো জেলায় সাড়ে চার লাখের বেশি (৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬০ জন) মানুষ প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। আর প্রথম ডোজগ্রহীতাদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ২ লাখ ৯০ হাজারের সামান্য বেশি। সবমিলিয়ে ১ম ও ২য় ডোজসহ এ পর্যন্ত সাড়ে ৭ লাখ ডোজ টিকাদান সম্পন্ন হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়- সিটিকর্পোরেশন এলাকায় সবমিলিয়ে ৪৩ হাজার ২৪১ ভায়াল বা ৪ লাখ ৩২ হাজার ৪১০ ডোজ টিকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ১ম ও ২য় ডোজ মিলিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজারের বেশি ডোজ টিকাদান শেষ হয়েছে। চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, চসিক এলাকায় টিকার প্রথম ডোজ গ্রহীতার সংখ্যা আড়াই লাখের সামান্য বেশি (২ লাখ ৫৩ হজার ২৫৩ জন)। প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত দেড় লাখের সামান্য বেশি মানুষ (১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০ জন) দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করেছেন।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় মোট ৩৬ হাজার ৩০৯ ভায়াল বা ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০ ডোজ টিকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ১ম ও ২য় ডোজসহ ৩ লাখ ৪০ হাজার ডোজ টিকাদান সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলাগুলোতে ১ম ডোজ টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ২ লাখ ৫০৭ জন। আর প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ৩৬ হাজারের সামান্য বেশি।
প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথম ডোজ নেয়া এক লাখের বেশি করোনার টিকাগ্রহীতার ২য় ডোজ পাওয়া নিয়ে শঙ্কা ভর করেছে চট্টগ্রামে। ঢাকা থেকে টিকার পরবর্তী চালান না পেলে ১ম ডোজ নেয়া এসব টিকাগ্রহীতা যথাসময়ে তাদের ২য় ডোজ পাবেন না। সম্ভাব্য এ সংকটের কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। যদিও সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা সংগ্রহের জোর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে জানিয়ে টিকা পেলে এ সংকট কেটে যাবে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি ও চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী।