মাত্র কয়েকদিন আগে ২ ফেব্রুয়ারি আমরা এখানে লিখেছিলাম ‘ফুটপাত দখলকারীদের ছাড় দেওয়া যাবে না’। আমরা আনন্দিত হই, চট্টগ্রামের ‘হকারের রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত নিউমার্কেট–আমতল থেকে ফলমন্ডি পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, বন্দর নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত করার ঘোষণার আট দিন পর গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) নগরীর ফলমন্ডি লেন, পুরাতন রেলস্টেশন, রিয়াজউদ্দিন বাজার, নতুন রেলস্টেশন, নিউমার্কেট, জিপিও, তামাকুমন্ডি লেন, আমতলসহ আশপাশের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়। দিনভর এ অভিযানে প্রায় এক হাজার ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে, গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বেশকিছু সেমি পাকা দোকান ও অবৈধ স্থাপনা। অভিযানে চসিক, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার সাতজন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। মোতায়েন ছিল প্রায় ২০০ পুলিশ, ৩০ জন র্যাব ও আনসারসহ চসিকের বিপুলসংখ্যক কর্মী।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, মাত্র শুরু করলাম। নগরীর প্রতিটি ফুটপাত নগরবাসীকে ফিরিয়ে দেবো। বহুজন বহুভাবে চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছেন, করছেন। নেতারা নেতার কাছে ছুটছেন। অনেকে ফোন করেছেন। কিন্তু ফুটপাত উদ্ধারের ব্যাপারে আমি কোনোভাবেই কারো কাছে নত হবো না। কোনো ধরনের আপস করবো না।
এই ফুটপাত যাতে পুনরায় দখল হয়ে না যায় সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সিটি মেয়র সার্বক্ষণিক একজন ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়ন করেছেন। দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাতে ফুটপাত পুনরায় কেউ দখল করতে না পারে। আমি পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি, আমার তো ফোর্স নেই। তাই আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব চাওয়ার সাথে সাথে যেনো পুলিশ ফোর্স পাই। যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা ঠেকানোর জন্য পুলিশ প্রশাসন সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বলেও সিটি মেয়র জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি সাহস করে এবং নিজের উপর ঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রামের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছি। উদ্ধার হওয়া জায়গা রক্ষায় কাঁটাতারের বেড়াও দিয়েছি। পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া জায়গায় নিয়মিত মনিটরিং চলবে। কোনো হুমকি, ধামকি বা প্রলোভনে কাজ হবে না। যে জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে তাদের স্বার্থে কাজ করে যাব।’ আমরা এই বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য সিটি মেয়রকে অভিনন্দন জানাই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে গাড়ি চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার বাইরে পথচারীদের চলাচলের জন্যই ফুটপাত। সেই ফুটপাত দেখভালের দায়িত্বও প্রশাসনের। কেউ ফুটপাত দখল করলে উচ্ছেদের দায়িত্বও তাদের। তাঁরা বলেন, ফুটপাতে শুধু উচ্ছেদ অভিযান চালালেই হবে না। পুনরুদ্ধার হওয়া ফুটপাত পুনর্দখল রোধে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। প্রয়োজনে মিনি বাগান করে দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে উচ্ছেদের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা জায়গা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় উচ্ছেদ করেও কাজ হবে না। কেউ কেউ ফুটপাতের পরিবর্তে বিকল্প স্থানে হকারদের বসার জায়গা করে দেয়ার পরামর্শ দেন।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে হাঁটা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। ফুটপাতে দোকান বসানো নগর পরিকল্পনার কোনো শালীনতার মধ্যে পড়ে না। ফুটপাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। পৃথিবীর সব দেশে ফুটপাতের পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। যাতে মানুষ অল্প দূরত্বের পথ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে পারে। আর আমাদের দেশে হচ্ছে উল্টো, ফুটপাতে দোকান করা হচ্ছে। চলে যাচ্ছে অবৈধ দখলে। এগুলোর পেছনে প্রভাবশালী মহলের কিছু আর্থিক বিষয় জড়িত থাকার ফলে প্রশাসন চাইলেও সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। তবে নাগরিকদের যে অধিকার আছে, তা ফিরিয়ে দিতে হবে। ফুটপাত হচ্ছে হাঁটার জন্য।’
ফুটপাত শুধু রাস্তা বা সড়কের সৌন্দর্যই বাড়ায় না। পথচারীদের নিরাপদে হাঁটতে সাহায্য করে। নির্বিঘ্নে চলাচলের উপযুক্ত স্থান ফুটপাত। প্রশস্ত ফুটপাতের কারণে যানজট বা দুর্ঘটনাও কমে অনেক। ব্যস্ত নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে স্বল্প দূরত্বে হেঁটে চলারও কোনো বিকল্প নেই।