নগরের ফুটপাত উচ্ছেদ হলেও দুঃখজনক ব্যাপার হলো, উচ্ছেদের পর আবার দখল হয়ে যায় সব। আমরা নানা সময়ে প্রত্যক্ষ করেছি, সকালে উচ্ছেদ তো বিকেলে ফের দখল। গতকাল ১ ফেব্রুয়ারি ‘উচ্ছেদের পর আবার দখল’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নগরীর আমতল মোড়ের দিকে যেতে রাইফেল ক্লাব সংলগ্ন ফুটপাতের জায়গা আবার দখল হয়ে গেছে। সেখানে তৈরি করা হয়েছে নতুন করে ১০টি দোকান। টিনের তৈরি এসব দোকানে মূলত ইলেকট্রিক মেকানিকের কাজ করা হয়। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, থিয়েটার ইনস্টিটিউট থেকে আমতল মোড়ের দিকে যেতে রাস্তা সংলগ্ন ফুটপাতের পাশেই চট্টগ্রাম রাইফেল ক্লাবের অবস্থান। ক্লাবের সীমানা দেয়াল এবং ফুটপাত ঘেঁষে ফের দোকান নির্মিত হওয়ায় পথচারীদের চলাচলের পথ রুদ্ধই থেকে গেছে। ব্যস্ত সড়ক এড়িয়ে ফুটপাতটি ধরে শিক্ষার্থী ও পথচারীরা চলাচল করবেন সেই সুযোগ নেই বললেই চলে। পথচারীরা বলছেন, ফুটপাত দিয়ে গন্তব্যে যাওয়া সম্ভব না। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে কাস্টমাররা। তাই ব্যস্ত সড়ক মাড়িয়েই তারা পথ চলেন। জানা গেছে, যখন উচ্ছেদ করা হয়েছিল এর কিছুদিন পরই ফের বর্তমানের দৃশ্যমান স্থাপনাগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। গত বছরের ২১ মে এই জায়গা থেকে ১১টি দোকান গুঁড়িয়ে দিয়ে দখলদার উচ্ছেদ করেছিল জেলা প্রশাসন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে গাড়ি চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার বাইরে পথচারীদের চলাচলের জন্যই ফুটপাত। সেই ফুটপাত দেখভালের দায়িত্বও প্রশাসনের। কেউ ফুটপাত দখল করলে উচ্ছেদের দায়িত্বও তাদের। তাঁরা বলেন, ফুটপাতে শুধু উচ্ছেদ অভিযান চালালেই হবে না। পুনরুদ্ধার হওয়া ফুটপাত পুনর্দখল রোধে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। প্রয়োজনে মিনি বাগান করে দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে উচ্ছেদের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা জায়গা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় উচ্ছেদ করেও কাজ হবে না। কেউ কেউ ফুটপাতের পরিবর্তে বিকল্প স্থানে হকারদের বসার জায়গা করে দেয়ার পরামর্শ দেন।
আসলে সাধারণত ব্যস্ত সড়কের পাশে ফুটপাত তৈরি করা হয় সাধারণ মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য। মানুষ যেন অনায়াসে চলাফেরা করতে পারে, ফুটপাত ব্যবহার করতে পারে; সেজন্য ফুটপাত পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। এর পাশে দোকানপাট নির্মাণ বা ফুটপাতের ওপর দোকানের বর্ধিত অংশ চলে যাওয়া বা হকারদের বসতে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখি! দেখি এর বিপরীত চিত্র। ছোট ছোট দোকান, নির্মাণসামগ্রী, ব্যবসাসামগ্রী আর হকারদের ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিদিনই হয়রানি পোহাচ্ছেন পথচারীরা। আবার কোথাও কোথাও পাশের দোকানের পণ্যসামগ্রী রাখা হয় সামনের ফুটপাত দখল করে। ফুটপাতের পাশে গড়ে ওঠা দোকানগুলোর মালামালেই দখলে থাকে ফুটপাতের অর্ধেক জায়গা। ফলে ফুটপাতে চলাচল করতে পথচারীদের অসুবিধা হয়। অনেক সময় ফুটপাতের এ অবস্থার জন্য পথচারীদের রাস্তার পাশ দিয়ে চলতে হয়। বিশেষ করে নারীদের চলাচলে বেশি অসুবিধা দেখা দেয়। এসব দোকানে জনসাধারণের ভিড়ের কারণে নারী পথচারীদের চলাচল করতে হিমশিম খেতে হয়। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের প্রধান সড়কে হাঁটতে হয়। নগর বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফুটপাত শুধু রাস্তা বা সড়কের সৌন্দর্যই বাড়ায় না। পথচারীদের নিরাপদে হাঁটতে সাহায্য করে। নির্বিঘ্নে চলাচলের উপযুক্ত স্থান ফুটপাত। প্রশস্ত ফুটপাতের কারণে যানজট বা দুর্ঘটনাও কমে অনেক। ব্যস্ত নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে স্বল্প দূরত্বে হেঁটে চলারও কোনো বিকল্প নেই।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে হাঁটা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। ফুটপাতে দোকান বসানো নগর পরিকল্পনার কোনো শালীনতার মধ্যে পড়ে না। ফুটপাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। পৃথিবীর সব দেশে ফুটপাতের পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। যাতে মানুষ অল্প দূরত্বের পথ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে পারে। আর আমাদের দেশে হচ্ছে উল্টো, ফুটপাতে দোকান করা হচ্ছে। চলে যাচ্ছে অবৈধ দখলে। এগুলোর পেছনে প্রভাবশালী মহলের কিছু আর্থিক বিষয় জড়িত থাকার ফলে প্রশাসন চাইলেও সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। তবে নাগরিকদের যে অধিকার আছে, তা ফিরিয়ে দিতে হবে। ফুটপাত হচ্ছে হাঁটার জন্য।’
উচ্ছেদের পর আবার দখল বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আজাদীকে বলেছেন, ‘বিষয়টি আমি দেখব এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করব’। আশা করছি, তিনি এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।