নগরীর ফিশারীঘাটের মাছের আড়তদারদের এখন আগের মতো ব্যস্ততা নেই। লকডাউনে পরিবহন সংকটে মাছের ব্যবসায় ধস নেমেছে। মূলত পরিবহন সংকটের কারণে বৃহত্তর চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ীরা আড়তে আসতে পারছেন না, ফলে বেচাকেনাও আগের চেয়ে ৬০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ফিশারীঘাটের আড়তদাররা।
উল্লেখ্য করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের তীব্রতা বাড়ার শুরুতেই সরকার দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা দেয়, যা এখনো চলমান। আড়তদাররা বলছেন, ফিশারীঘাটে ভোর থেকেই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা এসে জড়ো হতেন। গত এপ্রিল থেকে গাড়ি চলাচল সীমিত করার পর থেকে পরিবহন সংকট দেখা দেয়। এছাড়া পরিবহনের খরচও বেড়ে যায়। অন্যদিকে বাজারে সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ তলানিতে এসে ঠেকেছে। ফলে যারা সামুদ্রিক মাছের ব্যবসা করেন, তারা খুব কষ্টে আছেন। এছাড়া দেশের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে চিংড়িসহ মিঠা পানির মাছ আসে, এখন করোনার কারণে এসব মাছ আসাও কমে গেছে।
জানা গেছে, নগরীর ফিশারীঘাটের ১০৩টি গদি (আড়ত) আছে। সেখানে দুই শতাধিক ব্যবসায়ী এবং পাঁচ হাজার কর্মচারী আছেন। গত বছর করোনকালীন প্রত্যেক মাছ ব্যবসায়ী মোটা অংকের লোকসান গুনেন। এ বছরও করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেকে ব্যাংক ঋণ এবং বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু করোনার কারণে নতুন বিনিয়োগ নিয়ে তারা আছেন দুশ্চিন্তায়।
ফিশারীঘাটের বেশ কয়েকজন আড়তদার জানান, ফিশারীঘাটে প্রতিদিন অন্তত তিনশ কোটি টাকা লেনদেন হতো। কিন্তু করোনকালীন লকডাউন শুরুর পর সেটি অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসে। ক্রেতার সংকট এবং সামুদ্রিক লাক্কা, রূপচাঁদা মাছের সরবরাহ কমে যাওয়াও এর অন্যতম কারণ। তবে আগামী জুলাই আগস্টে ইলিশ মাছের মৌসুম শুরু হলে তখন পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে এমন আশা করছেন তারা।
ফিশারীঘাটের আড়তদার আজিজুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনায় আমাদের অস্তিত্ব টিকতে রাখতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন যে অবস্থা, কর্মচারীদের বেতন দিতেই বেগ পেতে হবে। সরকারকে অবশ্যই আমাদের অবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে।
জানতে চাইলে সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাবুল সরকার দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনা শুরুর পর থেকে ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা খুবই খারাপ। গত বছর আমরা অনেক লোকসান দিয়েছি। ভেবেছিলাম এ বছর হয়তো করোনা পরিস্থিতির অবনতি হবে না। কিন্তু এখন আমাদের অনেক আড়তদারের কর্মচারীদের বেতন এবং ঈদের বোনাস দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ব্যবসা কমে যাওয়ায় অনেকে কর্মচারী কমিয়ে ফেলেছেন। কারণ ব্যবসা না হলেও খরচ কিন্তু থেমে নেই। তবে আমাদের দুঃখ হচ্ছে, আমরা মানুষের অত্যাবশ্যকীয় প্রাণীজ আমিষের ঘাটতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছি, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আমরা মাছ ব্যবসায়ীরা কোনো প্রণোদনা পাইনি। আমরা আশা করেছিলাম, সরকার আমাদেরকে অন্যান্য খাতের মতো ৪ শতাংশ সুদে প্রণোদনা ঋণ দিবেন। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, চট্টগ্রামের হাজার হাজার মাছ ব্যবসায়ীদের রক্ষার স্বার্থে যেন প্রণোদনার ঘোষণা দেন।











