যুদ্ধ কখনো শান্তি বয়ে আনে না, যুদ্ধ মানে হত্যাযজ্ঞ, রক্ত, মৃত্যু আর স্বজন হারানো গগন বিদারী কান্না। সে ১৯৪৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনিদের কান্না কোনোভাবেই থামছে না, কিন্তু এবারের কান্নাটা অন্যরকম! মানুষ কতোটা নৃশংস হতে পারে, কতোটা বর্বরোচিত হতে পারে, কতটা অমানুষ, পাশবিক হতে পারে সেটা একমাত্র ইসরাইলকে দেখেই বুঝা যায়। অথচ তারা সবসময় দাবি করে তারা জ্ঞান, বিজ্ঞানের সংস্কৃতিতে সারা পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ। আপনাদের ভিতরে যদি মানবতাবোধ না থাকে তাহলে অন্য কিছুতে শ্রেষ্ঠ হয়ে লাভ কী বলুন! গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ছোট ছোট শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। ইসরায়েলের লাগাতার বিমান হামলায় গাজা এখন মৃত্যুপুরী। তাদের কান্নায় সারা পৃথিবীর মানুষের চোখ ভিজে যাচ্ছে। লাশের পর লাশ সাজিয়ে রাখছে স্বজনরা, মায়ের বুক থেকে কাফনের কাপড় পরানো শিশুকে নেয়া যাচ্ছে না! আকাশের দিকে চেয়ে চিৎকার করে কান্না করছে সন্তানহারা পিতা। শেষ জানাজা টুকুও করতে পারছে কেউ!
একটু খাবারের জন্য দীর্ঘ লাইনে বড় বড় বাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সব বয়সী মানুষ। তাদের চোখে মুখে ক্ষুধা দারিদ্র ও আতঙ্ক। যেন যেকোনো সময় মৃত্যু এসে তাদেরকে ছিনিয়ে নিবে। শিশুরা ধ্বংসস্তূপের দাঁড়িয়ে তাদের খেলনা, বই খুঁজে নিচ্ছে! প্রতিদিন খবরের কাগজে আর মোবাইলে এই সমস্ত ছবি দেখে দেখে আমরা অনেকেই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আমাদের ভিতর থেকে কান্না বেরিয়ে আসছে! পাশে থাকা নিজের সন্তানের কথা মনে পড়ছে। সবকিছুর তো একটা শেষ আছে! আর কতো! আর কতো রক্ত ঝরলে ইসরায়েলের সেনারা থামবে! জানি না। বিশ্ব মানবতা কোথায়! জাতিসংঘ কোথায়! এভাবে আর কতদিন, দিনের পর দিন সেখানে হত্যাযজ্ঞ চলছে, শিশু, নারী, বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে, মানুষ গিয়ে হাসপাতালে একটু চিকিৎসা নিবে, সেটাও তারা পারছে না। সেখানে ইসরাইলি সেনারা প্রতিনিয়ত বোমা মারছে। যুদ্ধের নিয়মে কোনো হাসপাতালে কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোমা হামলা করার কোনো নিয়ম নেই কিন্তু ইসরাইলি সেনারা সেসব নিয়মের তোয়াক্কা করছে না। তারা দিন কে দিন রক্তখেকো হয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের রক্ত না ঝরালে তাদের হয়তো তৃষ্ণা মেটে না। পৃথিবীর সবচেয়ে বর্বর জাতিতে তারা পরিণত হচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে বিশ্বমানবতা চুপ থাকলে হবে না, একটি মানবিক পৃথিবীর জন্য আমাদের সবাইকে লড়াই করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে বর্বরদের সংখ্যা কম, মানবতাবাদী মানুষদের সংখ্যা বেশি। তাই পৃথিবীর সকল মানবতাবাদী রাষ্ট্র, দেশ মানুষ, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। লড়াইটা এখন থেকেই শুরু করতে হবে। যেভাবেই হোক সারা পৃথিবীতে আন্দোলনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদেরকে বাঁচাতে হবে। দরকার হলে লাগাতার আন্দোলন ও লড়াই করে যেতে হবে ফিলিস্তিনিদের বাঁচানোর জন্য। গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালানোর অভিযোগে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বাংলাদেশকে মামলা করার ঘোষণা দিতে হবে। ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে সারা পৃথিবীর মানবতাবাদীদের। আমরা যদি না জাগি, তাহলে এই হত্যাযজ্ঞ চলতে চলতে এক সময় একজন ফিলিস্তিনি মানুষও বেঁচে থাকবে না। তখন আমরাই বিবেকের কাছে কী জবাব দিবো! কারণ আমরা তো পারিনি এই নিরীহ মানুষগুলোকে বাঁচাতে!