ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে যুক্তরাজ্য কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার স্বীকৃতি

| সোমবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ

ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াও। কানাডা প্রথম জি৭ দেশ হিসাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। এরপরই ঘোষণা আসে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে। আর এর কয়েক মিনিট পরই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের মধ্যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবে বলে আগেই জানিয়েছিল যুক্তরাজ্য। গতকাল রোববার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এক ভিডিও বার্তায় আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ঘোষণা দিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, আজ শান্তি ও দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের আশা পুনরুজ্জীবীত করতে আমি মহান এই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পরিষ্কারভাবে বলছি যে, যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।

সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওতে স্টারমার বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বাড়তে থাকা ভয়াবহতার মধ্যে আমরা শান্তি ও দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজ করছি। এর মানে হচ্ছে, নিরাপদ একটি ইসরায়েল রাষ্ট্রের পাশাপাশি একটি কার্যকর ফিলিস্তির রাষ্ট্র থাকাএ মুহূর্তে এর কোনওটিই নেই। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এখন এসে গেছে। ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের মানুষ যাতে একটি ভাল ভবিষ্যত পায় সেই প্রতিশ্রুতি দিতেই যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেন স্টারমার। ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসের জন্য এটি কোনও পুরস্কার নয়, বলেন তিনি।

এর আগে কানাডা থেকে আসা প্রথম ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। এঙে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কানাডা আজ থেকে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। একইসঙ্গে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গঠনে অংশীদারিত্বের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

কানাডার পরপরই অস্ট্রেলিয়া থেকে ঘোষণা আসে। এক বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যন্থনি আলবানিজ লেখেন, কানাডার সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। তিনি বলেন, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের যৌথ প্রচেষ্টার অংশ হিসাবেই অস্ট্রেলিয়া এই পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে ‘ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে একটি আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা গড়ে উঠবে।’

ইসরায়েল এই স্বীকৃতির সমালোচনা করে বলেছে, এটি জিহাদি গোষ্ঠী হামাসের জন্য পুরস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। ওদিকে, হামাস নেতারা বলেছেন, ফিলিস্তিকে রাষ্ট্র হিসাবে এই স্বীকৃতি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে ঢুকে হামাস যোদ্ধাদের হামলার ঘটনারই প্রত্যক্ষ ফল।

আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিনের অনেক বড় স্বীকৃতি আছে। কিছু দেশে এর কূটনৈতিক মিশন আছে, এমনকি ক্রীড়াদলও আছেযারা অলিম্পিকসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনের দীর্ঘদিনব্যাপী সংঘাতের কারণে ফিলিস্তিনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনও সীমানা নেই। কোনও রাজধানী নেই এবং কোনও সেনাবাহিনী নেই। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের কারণে ১৯৯০ এর দশকে শান্তিচুক্তির মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ গঠিত হলেও ওই এলাকার জনগণের ওপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই। ওদিকে, গাজাতেও ইসরায়েলের বাহিনী। গাজা এখন এক বিপর্যয়কর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়াটা অনিবার্যভাবেই অনেকটা প্রতীকী। রাজনৈতিক এবং নৈতিক দিক থেকে এটি শক্তিশালী বার্তা হলেও মাঠ পর্যায়ে পরিস্থিতির পরিবর্তন খুব বেশি ঘটবে না। তারপরও এই প্রতীকী পদক্ষেপটিও শক্তিশালী।

গত জুলাইয়ে জাতিসংঘে এক ভাষণে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছিলেন, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের ওপর বিশেষ এক দায়িত্বভার আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগভীর রাতে ভ্যানে শতাধিক দোকান এনে বালিয়াড়িতে স্থাপন
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের নতুন জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল