ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে ফ্রান্সের স্বীকৃতি

শান্তির সময় এসেছে বললেন ম্যাক্রঁ

| বুধবার , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ফ্রান্স। তবে হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলে এবং তাদের হাতে বন্দি সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হলেই কেবল ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে দূতাবাস খুলবে বলেও দেশটি জানিয়েছে। নিউইয়র্কে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ বলেন, শান্তির সময় এসেছে এবং গাজায় চলমান যুদ্ধকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। ফ্রান্স ও সৌদি আরব জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এক দিনের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করছে যেখানে ফিলিস্তিন এলাকায় চলমান সংঘাত নিরসনে দুই রাষ্ট্র সমাধানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে। তবে জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো জি৭ দেশ এখানে যোগ দিচ্ছে না।

রোববার যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া কথা রয়েছে বেলজিয়াম, লুঙ্মেবার্গ, মাল্টা, অ্যান্ডোরা এবং সান মারিনোর। এর মাধ্যমে গাজায় মানবিক সংকট এবং পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের কারণে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। যদিও ইসরায়েল বলছে, এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার জন্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস পুরস্কৃত হবে, যেখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। খবর বিবিসি বাংলার।

গাজার হামাসপরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তখন থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। বর্তমানে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লক্ষ্যে স্থল আক্রমণ চালাচ্ছে, যেখানে দশ লাখ মানুষ বাস করত এবং গত মাসে সেখানে দুর্ভিক্ষের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছিল। সম্মেলনে ফরাসি নেতা বলেন, যুদ্ধ বন্ধ করার এবং হামাসের হাতে আটক অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করার সময় এসেছে। তিনি ‘অন্তহীন যুদ্ধের বিপদ’ সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন এবং সব সময় শক্তির ওপর অধিকারের জয় হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় মধ্যপ্রাচ্যে একটি ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের অবশ্যই একটি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা তৈরির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে, যেখানে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন শান্তি এবং নিরাপত্তায় পাশাপাশি থাকবে, বলেন তিনি।

ম্যাক্রোঁ বলেন, ফ্রান্স গাজায় স্থিতিশীলতা অভিযানে অংশ নিতে প্রস্তুত। এছাড়া, হামাস বিলুপ্তির তত্ত্বাবধানে পিএকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের আহ্বান জানান তিনি। বলেন, হামাসের হাতে বন্দি সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হলে এবং যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেই কেবল ফ্রান্স ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে দূতাবাস খুলবে।

এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার কিছুক্ষণ আগে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন। ড্যানন বলেন, সাতই অক্টোবরের হামলার পর দ্বিরাষ্ট্র সমাধান টেবিল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তিনি জাতিসংঘে এই সপ্তাহের আলোচনাকে ধাঁধা বলে অভিহিত করেন। এমনকি অধিকৃত পশ্চিম তীর ইসরায়েলের সাথে সংযুক্ত করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন যে জর্ডান নদীর পশ্চিমে কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র থাকবে না। আর দেশটির প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জোগ বলেছেন, এটিকে স্বীকৃতি দেওয়া কেবল অন্ধকারের শক্তিগুলোকে উৎসাহিত করবে। ম্যাক্রোঁর ঘোষণার আগে, রোববার রাতে আইফেল টাওয়ারে ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলি পতাকা প্রদর্শন করা হয়েছিল। সোমবার ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি টাউন হলে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়েছিল।

এদিকে, ইতালির প্রায় ৮০টি শহরে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে জর্জিয়া মেলোনির সরকার সমপ্রতি বলেছে যে এমন একটি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রতিকূল হতে পারে যার অস্তিত্বই নেই। আর জার্মানি সরকার বলেছে, ফিলিস্তিনির রাষ্ট্রত্ব বর্তমান বিতর্কের বিষয় নয়। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াদেফুল সোমবার নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার সময় ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, জার্মানির জন্য, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়টি আলোচনা প্রক্রিয়ার শেষেই আসবে। তবে তা এখনই শুরু করা উচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় দিনমজুর হত্যায় মামলা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধযুদ্ধের শেষ চায় গাজাবাসী