ফিরিয়ে দাও অরণ্য

ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী | শনিবার , ৪ মে, ২০২৪ at ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ

দুপুরের খাবার খেয়ে আমি এবং চৌকিদার জনাব মরহুম নুরুল ইসলাম চাচা আমরা দুজন বেরিয়ে যাই হারবাং চকরিয়ার উদ্দেশ্যে। তখন চট্টগ্রাম কক্সবাজার একটা সরু সিঙ্গেল সড়ক। সড়কের দুপাশ জুড়েই বড় বড় গাছের সমারোহ। আর ঐ সড়কে চলতো কাঠবডির মুড়ির টিন গাড়ি। আমার বয়স চৌদ্দ কি পনের বছর। আমি চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। আমরা দুজন হাজী রাস্তার মাথা থেকে হারবাং যখন পৌঁছালাম তখন বিকেল চারটা। গিয়েছিলাম আমাদের চাষের জমিনের খাজনা তথা ধান বিক্রির টাকা আনতে। যিনি আমাদের জমিন চাষ করতেন তখন উনি পাশের কোনো এক বাজারে কলা ও সব্জি বিক্রি করার জন্য গিয়েছিলেন। চাচা বললো আজ অপেক্ষা না করলে ধানের টাকা পাওয়া সমস্যা হবে। অপেক্ষার পালা আমি চুপচাপ বসে আছি ওদের বাড়ির উঠানে বিছানো পাটিতে। বাড়ির চারিদিকে নানান ধরনের গাছের সমারোহ। বিকেল গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা হয়ে এলো। তখন অনেক ভয় পেয়ে গেলাম। কখন আবার বন্যপ্রাণী আক্রমণ করে বসে। মাগরিব এর আজান হলো। আরো কিছুক্ষণ পর চাষী ভাই আসলো এবং চাচার হাতে টাকা দিলো। চারিদিকে ঘন কালো অন্ধকার। গহীন বনের মাঝে শেয়ালের ডাকাডাকি আর রাস্তার ঝিঁ ঝিঁ পোকার আওয়াজ আর জোনাকি পোকার ঠিম ঠিম আলো। চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়কে যথন উঠলাম চাচা বললো বাবা হেঁটেই বাড়ি যেতে হবে। এখন এই রোডে কোনো গাড়ি পাওয়ার সুযোগ নেই। সেই আশির দশকে চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়ক এর দুপাশেই শত শত বছরের গাছ সমৃদ্ধ বিশাল বন জঙ্গল ছিলো। অনেক জায়গাতেই হাতি পারাপার হতো। সেই সবুজে সমৃদ্ধ পরিবেশ ও লাখো লাখো বনায়ন এখন আর নেই। স্থানীয় প্রভাবশালী বন আর পাহাড় খেকোরা ধ্বংস করেছে সেই সবুজের সমারোহ এবং সম্প্রতি সম্পন্ন দোহাজারী কক্সবাজার রেল যোগাযোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যতম তিনটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ফাঁসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং মেধাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্কের বনাঞ্চল। রেলপথ চুনতি দিয়ে ১৫.৮ কিলোমিটার, ফাঁসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য অঞ্চল দিয়ে ১০.৩ কিলোমিটার এবং দশমিক ৯ কিলোমিটার পথ মেধাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্কের মধ্য দিয়ে। বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়ার কারণে বাড়ছে মানুষহাতির দ্বন্দ্ব। শুধু চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলপথ নয়, সারাদেশের অনেক জায়গাতেই যথেষ্ট বৃক্ষরোপণ বা বনায়ন না করে বন উজাড়ের ফলে বাসস্থানের ক্ষতি, জৈব বিন্যাসের ক্ষতি ও অনুর্বরতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃক্ষকাটার ফলে গরম বৃদ্ধি পায় এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বন্টনে তারতম্য দেখা দেয়এখন তীব্র গরম পড়ছে তার মূল কারণ নির্বিচারে গাছ কাটা। আসুন বনায়ন রক্ষা করি। গাছের চারা রোপণ করি এবং গাছের যথাযথ পরিচর্যা করি। এই বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার এবং দেশ প্রেমিক জনগণ সবাইকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যে অক্সিজেন তা মানুষ অরণ্যের কাছ থেকেই পেয়ে থাকে। অন্যদিকে, বৃষ্টিপাত ও মানুষের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অরণ্যের রয়েছে বিরাট ভূমিকা। অরণ্যের কোনো বিকল্প নেই, আসুন ফিরিয়ে আনি সেই সবুজের সমারোহ ভরা অরণ্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ থেকে রক্ষা করতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধআক্ষেপ