ট্রাফিক আইন মেনে রাস্তায় গণপরিবহন চালানোর পাশাপাশি যাত্রীদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করা দরকার। কারণ, রাস্তায় বের হলে চোখে পড়ে লক্কড়–ঝক্কড় মার্কা গাড়ি। কোনোটির গায়ে সদ্য রং লাগানো। ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে চলাচল করলে আটক ও জরিমানা করছে পুলিশ কিংবা বিআরটিএ। কিন্তু কোনো কিছুরই তোয়াক্কা না করে রাস্তায় নির্বিঘ্নে চলছে এ সব গাড়ি। যাত্রীরা নিরূপায়। ঝুঁকি নিয়ে এ সব গাড়িতেই চলাচল করতে হয়। গত ১৮ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘নগর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, বাড়ছে যানজট ও দুর্ঘটনা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রামে ৭৬ হাজার ৩২০টি যানবাহনের ফিটনেস সনদ নেই। এসব গাড়ির কোনোটির লাইট নেই, কোনোটির কাচ ভাঙা, কোনোটির দরজা নেই, কোনোটি আবার দুমড়ে–মুচড়ে রয়েছে। নগরে চলাচলকারী যাত্রীবাহী গাড়িগুলোর বসার আসনগুলো বেশিরভাগই বেহাল অবস্থা। ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো চলার কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটার পাশাপাশি লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিদিন অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম। তবু সড়কে চলাচল থামছে না এসব লক্কড়–ঝক্কড় গাড়ির। বিআরটিএ’র তথ্যমতে, চট্টগ্রামে চলাচলকারী মোট নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩৮৯। এর মধ্যে নগরে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৩ ও জেলায় ৬৯ হাজার ৯৪৬। নিবন্ধিত যানবাহনের মধ্যে শহরের ৪৬ হাজার ৭০৫ ও জেলায় ২৯ হাজার ৬১৫টি যানের ফিটনেস সনদ নেই। জানা গেছে, ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে বাস, মিনিবাস, ট্রাক, মিনি ট্রাক, প্রাইভেটকার, জিপ, কাভার্ড ভ্যান এবং সিএনজি।
নগরে ১৫ হাজারের মতো সিএনজি টেক্সি ফিটনেস সনদ ছাড়াই চলছে। এছাড়া ২ হাজার ৯৯টি বাস, ৩৬ হাজার প্রাইভেট কার এবং প্রায় ৩০ হাজার ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান উল্লেখযোগ্য অংশের ফিটনেস নেই। এগুলোর কোনোটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১০ বছর আগে, কোনোটির তারও আগে। বছরের পর বছর এসব গাড়ি কোন ধরনের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।’
বিশেষজ্ঞরা সড়কে দুর্ঘটনা রোধে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা অনুভব করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বিশ্বে সকল বয়সের মানুষের মৃত্যুর ৮ম প্রধান কারণ রোডক্র্যাশ। এর কারণে প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ মারা যান। একই সাথে ৫–২৯ বছর বয়সের শিশু ও তরুণদের মৃত্যুর প্রধান কারণ রোডক্র্যাশ। তাঁরা আরও বলেন, সড়ককে নিরাপদ করার জন্য জাতিসংঘের কৌশলপত্রে পাঁচটি স্তম্ভের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো, সড়ক নিরাপদ করতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ যানবাহনের ব্যবস্থা, সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, রোডক্র্যাশ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা ও যান চলাচলের নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু অতীব দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে সড়কে এখন শৃঙ্খলা নেই। প্রতিদিন মৃত্যু আছে, আছে বিশৃঙ্খলা।
সড়ক দুর্ঘটনার নানা কারণের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো–চালকের অদক্ষতা, চালকের ক্লান্তি, গাড়ির বেপরোয়া গতি এবং গাড়ির ফিটনেস না থাকা। সাধারণের মনে এখন একটাই প্রশ্ন–মহাসড়ক নিরাপদ হবে কবে? গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব। মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া চালকের দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে। মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করতে হবে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যানজট ও দুর্ঘটনার জন্য রাস্তায় চলাচলকারী ফিটনেস বিহীন গাড়িই দায়ী। তবে অদক্ষ চালক এবং সড়ক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা দুর্ঘটনার বড় একটি কারণ। তাঁরা বলেন, রাস্তায় যত্রতত্র অলস গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য যানজট সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ফিটনেস বিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়েই ফিটনেসবিহীন গাড়ি নগরীতে চলতে দেওয়া যায় না।