তৃতীয় বারের মত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিল ভারত। তারা এখন মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকার। ফাইনালে সেই দু’টি দলই উঠেছে, যারা এ টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচেও হারেনি।
২০০৭ সালের প্রথম আসরের শিরোপা জেতা ভারত ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল। এর দশ বছর পর আবার ফাইনালে উঠল তারা। প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বরে নিজেদের মাঠে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপের টানা সবকটি ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছিল ভারত। কিন্তু ফাইনালে হেরে যায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে। এবারে আবার আরেকটি বৈশ্বিক আসরের ফাইনালে রোহিত শর্মার দল। গত রাতে গায়ানায় অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়েছে তারা। ১৭ বছর পর আবার টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের সুুযোগ ভারতের সামনে। গ্রুপ পর্বের চারটি এবং সুপার এইট পর্বের তিনটি সহ মোট টানা সাত ম্যাচে জিতে সেমিফাইনালে এসেছিল ভারত। আর সেমিফাইনাল সহ আট ম্যাচ জিতে ফাইনালে। অপরদিকে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে নিতে সুপার এইটে আসা ইংল্যান্ড অবশ্য সুপার এইট পর্বের তিনটি ম্যাচেই জিতেছিল। কিন্তু সেমিফাইনালে এসে আর পারল না। বিদায় নিতে হলো ভারতের কাছে হেরে। ভারতের স্পিনারদের হাতে নাকাল হতে হলো ইংলিশদের। দুই স্পিনার অক্ষর প্যাটেল এবং কুলদীপ যাদবের ঘুর্নির মুখে দিশেহারা হয়ে পড়ে ইংলিশ ব্যাটাররা। দাড়াতেই পারেনি কোনো ব্যাটার। অবশ্য তার আগে ভারতকে জয়ের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন ব্যাটাররা। বিশেষ করে অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং সুরিয়া কুমার যাদবের ব্যাটিংয়ে জয়ের মত পুঁজি গড়েছিল ভারত। আর সে পুঁজিকে পাহাড়সম করে তুলল ভারতের স্পিনাররা ইংলিশদের সামনে। ফলে চতুর্থবারের ফাইনালে খেলা হলো না ইংল্যান্ডের। সে সাথে সবচাইতে বেশি তিনবার শিরোপা জেতাও হলোনা জস বাটলারের দলের। ভারতের মত টানা আট ম্যাচ জিতে প্রথমবারের মত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শুধু টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নয়, যে কোনো বিশ্বকাপে দক্ষিন আফ্রিকার এটি প্রথম ফাইনাল। তাই এখন ভারত কি দ্বিতীয় শিরোপা জিতে নাকি দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম শিরোপা জিততে পারে সেটাই দেখার বিষয়। আগামীকাল শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে আট টায় ফাইনালে মুখোমুখি হবে এই দুই দেশ।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা ভারত শুরুতেই ধাক্কা খায় বিরাট কোহলিকে হারিয়ে । তৃতীয় ওভারেই কোহলিকে ফেরান টপলে। ৯ রান করেন কোহলি। রিশভ পান্তও পারেননি অধিনায়ক রোহিতকে সঙ্গ দিতে। ৪ রান করা পান্তকে ফেরান স্যাম কারেন। এরপর রোহিতের সাথে জুটি বাধেন সুরিয়া কুমার যাদব। ৭৩ রানের জুটি গড়ে দুজন দলকে এগিয়ে নেন অনেকদূর। আদিল রশিদকে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন রোহিত। আর তাতেই ভাঙ্গে এই জুটি। ফেরার আগে ভারত অধিনায়ক করেন ৩৯ বলে ৫৭ রান। এরপর বেশিদুর এগুতে পারেননি সুরিয়া কুমার যাদবও। হাফ সেঞ্চুরি থেকে ৩ রান দুরে থাকতে সুরিয়া ফিরেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে জর্দানের বলে আর্চারের হাতে ক্যাচ দিয়ে। দুই সেট ব্যাটারকে হারানোর পর দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন হার্দিক পান্ডিয়া। ১৩ বলে ২৩ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে জর্দানের বলে স্যাম কারানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন পান্ডিয়া। এরপর রবীন্দ্র জাদেজা দলকে টেনে নেন ৯ বলে ১৭ রান করে। শেষ দিকে অক্ষর প্যাটেলের ৬ বলে ১০ রানের উপর ভর করে ১৭১ রান সংগ্রহ করে ভারত। ইংল্যান্ডের পক্ষে ৩টি উইকেট নিয়েছেণ ক্রিস জর্দান।
জবাবে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ড শুরুটা দারুন করেছিল ফিল সল্ট এবং জন বাটলারের ব্যাটে। কিন্তু ২৬ রানে ভাঙ্গে ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি। অক্ষর প্যাটেলকে রিভার্সুইপ করতে গিয়ে উইকেট রক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন ১৫ বলে ২৩ রান করা বাটলার। পরের ওভারে জাসপ্রিত বুমরাহর আঘাত। তার শিকার ফিল সল্ট। ৫ রান করা সল্টকে বোল্ড করে ফেরান বুমরাহ। সে ধাক্কা না সামলাতেই পরের ওভারে জনি বেয়ারেস্টোকে বোল্ড করেন অক্ষর প্যাটেল। শুরু থেকেই ধীর গতিতে ব্যাট করতে থাকা মঈন আলিও অনুসরণ করলেন আগের তিনজনকে। অক্ষর পাটেলকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্টাম্প হন ১০ বলে ৮ রান করা মঈণ আলি। কুলদীপ যাদব এসে ফেরালেন স্যাম কারেনকে। ৪৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় ইংল্যান্ড। সেখান আর উঠে আসতে পারেনি। পরপর দুই ওভারে হ্যারি ব্রুক এবং ক্রিস জর্ডানকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে পরাজয়ের কিনারায় ঠেলে দেন কুলদীপ যাদব। অনেক্ষন এক প্রান্তে দাড়িয়ে থাকা লিভিংস্টোন ফিরলেন রান আউট হয়ে। তিনি করেন ১১ রান। অষ্টম উইকেটের পতন হয় ইংলিশদের। আদিল রশিদ এসে খেললেন দুই বল। ২ রান করে ফিরলেন রান আউট হয়ে। জোফরা আর্চার ১৫ বলে ২১ রান করে ইংল্যান্ডের রান একশ পার করে। কিন্তু বিদায় রুখতে পারেনি। ১০৩ রানে অল আউট হয় ইংল্যান্ড ২০ বল বাকি থাকতে। ভারতের পক্ষে ভারতের দুই স্পিনার অক্ষর প্যাটেল এবং কুলদীপ যাদব নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। যার জন্য প্যটেল খরচ করেছেন ২৩ আর কুলদীপ খরচ করেছেন ১৯ রান। ১২ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন জাসপ্রিত বুমরাহ।