দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। প্রথম দিন থেকেই ক্যাম্পাসে লক্ষ্য করা গেছে ব্যানার–পোস্টার, লিফলেট বিতরণ এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রার্থীদের সরাসরি আলাপচারিতার মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশ।
তবে দুর্গাপূজার ছুটি শুরু হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যাওয়ায় ক্যাম্পাসের সেই জমজমাট পরিবেশ অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়েছে। তবুও যারা অবস্থান করছেন, তারা সরাসরি প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।
গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরোপয়েন্ট মসজিদ, সেন্ট্রাল মসজিদ এবং বিজ্ঞান অনুষদ মসজিদে প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কুশলাদি বিনিময় করেছেন। মসজিদের উঠানে ছোট ছোট গ্রুপে দাঁড়িয়ে প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। এবং হল বা কটেজে যে শিক্ষার্থীরা বাসায় যাননি তাদের কাছে যাচ্ছেন। তাদের সমস্যার কথা শুনছেন। শেষে নিজেদের প্রতিশ্রুতিও বলে যাচ্ছেন।
নাইম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি হলের সিট সংকট নিয়ে বললাম। প্রার্থী যারা আছেন, তারা তা মন দিয়ে শুনলেন এবং নতুন হল নির্মাণ ও পুরনো হল সংস্কারে প্রশাসনকে বাধ্য করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন।’
তরিকুল নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি বলেছি, খাবারের মান খারাপ এবং চিকিৎসা সেবা সীমিত। প্রার্থীরা বলেছেন, নির্বাচিত হলে এসব সমস্যার সমাধানে কাজ করবেন। এবার মনে হচ্ছে প্রার্থীরা সত্যিই আমাদের কথা শুনছেন এবং প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আপোষহীনভাবে কাজ করবেন।
ছাত্রদল প্যানেলের এজিএস প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক শিক্ষার্থীদের কথা শোনার পর বলেন, ‘আপনাদের সমস্যা আমাদেরও সমস্যা। আমরা চাই প্রতিটি শিক্ষার্থী হলে থাকার সুযোগ পাক। নতুন হল নির্মাণ ও পুরনো হল সংস্কার এ আমাদের অঙ্গীকার। আমরা জয়ী হলে এই সমস্যা সমাধানে প্রশাসনকে তাগাদা দিবো।’
ছাত্রশিবির প্যানেল সমর্থিত জিএস প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করবো। শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে যা করার দরকার আমরা সব করবো। আবাসন এবং চিকিৎসাসেবার মান উন্নয়নেও আমরা সর্বদা বদ্ধপরিকর।’
চাকসুতে স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পদে সাইফুল ইসলাম আরহাম নামে এক স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে চাই। খাবারের মান উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে অগ্রাধিকার দেব। নির্বাচিতরা যেন শুধু প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ না থাকেন।’ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এক ধরনের আশা ও উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রার্থীরা আমাদের দাবি দাওয়া মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করছেন। আশা করি নির্বাচনের পরও আমাদেরকে কাজ করে দেখাবেন।
আবার কিছু শিক্ষার্থীরা বলছেন, শুধু কথার প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়নই জরুরি। এবার নির্বাচিতরা যেন আমাদের পাশে থাকেন।
কলা অনুষদের হামিম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা চাই নির্বাচিতরা শুধু প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ না থেকে, কাজের মাধ্যমে আমাদের আস্থা অর্জন করুক। আবাসন, যাতায়াত, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা এসব সমস্যার সমাধানে অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
ফাঁকা ক্যাম্পাসে প্রার্থীদের প্রচারণা সীমিত আকারে হচ্ছে। হাতেগোনা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এক প্রার্থী বলেন, ছুটি থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে থেমে থাকব না। যারা আছেন তাদের সঙ্গে আলাপচারিতা চালাচ্ছি। ছুটি শেষে সবাই ফিরলেই প্রকৃত অর্থেই প্রচারণা শুরু হবে।
দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত এই চাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে। তারা মনে করছেন, এবার নির্বাচিতরা যদি বাস্তব সমস্যার সমাধানে মনোনিবেশ করেন, তবে ক্যাম্পাসের জন্য এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ছুটি শেষে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরলে প্রচারণা আরও জোরালো হয়ে উঠবে। তখন দেখা যাবে কারা শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করতে পারবেন, আর কারা কেবল প্রতিশ্রুতির রাজনীতিতে আটকে থাকবেন। ক্যাম্পাসের দেয়াল, রাস্তা ও শিক্ষার্থীদের আলাপচারিতায় তখন সত্যিকার অর্থেই রাজনীতি জীবন্ত হয়ে উঠবে।