হাটহাজারীর চিকনদন্ডী ইউনিয়নের চৌধুরীহাটস্থ ফতেয়াবাদ ক্লিনিকে চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানান নিহতের স্বজনরা। এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বরাবরে। গত শনিবার সরেজমিনে জানতে গেলে সম্রাট নামে ক্লিনিকের ম্যানেজার প্রতিবেদককে হেনস্থার চেষ্টা করেন।
ভুক্তভোগী নবজাতকের পিতা মো. মইনুদ্দিন বলেন, দীর্ঘ নয় মাস ধরে গাইনি চিকিৎসকের চিকিৎসায় ছিলেন তার স্ত্রী। ডেলিভারির সময় হলে উনার পরামর্শে ঘটনার দিন সকালে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। চেকআপের পর বাচ্চা এবং মা উভয়েই সুস্থ ছিলেন বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক। দুপুর ২ টার দিকে স্ত্রীকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়ার পর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বাচ্চার হার্টবিট কম জানিয়ে একটি বন্ডে স্বাক্ষর নেয়া হয় তার কাছ থেকে। আধাঘণ্টা পর আবারও বন্ড স্বাক্ষরের কথা বলে জানায় বাচ্চা অক্সিজেন স্বল্পতায় শ্বাস নিতে পারছে না। স্বাক্ষর না করলে রোগীর চিকিৎসা করবেন না বলে হুমকি দেন ক্লিনিকের আরএমও। তবে বার বার তাদের প্রতি অনুরোধ ছিল যে কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক জানাতে। প্রয়োজনে সিজার হবে তারপরও নবজাতক এবং মা যেন সুস্থ থাকেন। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে একটি ওষুধের কার্টনে ভরে মৃত বাচ্চা এনে হস্তান্তর করে। ধারণা করা হচ্ছে বিকেলে দ্বিতীয় স্বাক্ষর নেয়ার আগেই নবজাতক মারা গেছে। তারা অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় মেরে ফেলে জানিয়ে বলেন, বাচ্চার মাথার বাম পাশ থেতলানো ছিল। ধারালো কিছুর আঘাতে মাথা কেটে যাওয়ার স্পষ্ট চিহ্ন ছিল। এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তিনি দোষীদের বিচার দাবি করে বলেন, আর কোনো বাবা–মায়ের সন্তান যেন মারা না যায়। জা শেলি আক্তার বলেন, বিকাল চারটার দিকে বাচ্চার হার্টবিট ছিল ১৪৭। তখন চিকিৎসকরা বলছিল মায়ের চাপ কম। তাহলে কেন পরিবারকে সেটা ক্লিয়ার না করে এভাবে ডেলিভারি করতে গেল। তাদের বার বার বলা হয়েছিল প্রয়োজনবোধে সিজার করানো হোক। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ডেলিভারিতে অংশ নেয়া ডা. সামিরা বলেন, সব কিছু ঠিক থাকায় নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু মাঝপথে মায়ের চাপ কম থাকায় অঙিজেন স্বল্পতা সৃষ্টি হয়। কমে যায় হার্টবিট। পরবর্তীতে ভ্যানডোজ ডেলিভারি করলেও প্রসবের ২০ মিনিট পর বাচ্চা মারা যায়। আঘাতের বিষয়ে জানতে চাইলে গাইনি চিকিৎসক ডা. মিতু, আরএমও ডা. সাবরিনা ও শিশু চিকিৎসক ডা. রিফাত নাছির চৌধুরী বলেন, এটা ক্যাপোটের দাগ। ভ্যানডোজ ডেলিভারিতে এ ধরনের দাগ হয়। তবে পরিস্কার করলে চলে যায়। মায়ের সমস্যার কথা শুরুতে অভিভাবককে অবগত না করার প্রশ্নে তারা বলেন, সেটা তো ডেলিভারির সময়ের বিষয়। ওই মুহূর্তে সিজার কিংবা রেফারের কোনো অপশন থাকে না। অভিভাবকদের জানিয়েই স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। ক্লিনিকের চেয়ারম্যান মো. ইমরানুল হক চৌধুরী বলেন, বিষয়টা চিকিৎসকরা ইতিমধ্যে পরিস্কার করেছেন। অবহেলা কিংবা ভুলে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, ঘটনার পর পর নবজাতকের স্বজনরা ক্লিনিকের গ্লাস ভাঙচুর করেছে। পরে থানায় ফোন করে পুলিশ এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই ক্লিনিকে পুলিশ অবস্থান করছে। এদিকে শনিবার ভোর চারটার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে ওই নবজাতককে। জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রশ্মি চাকমা জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। উভয়ের বক্তব্য শুনে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।