টানা তিনবার নির্বাচিত হয়ে হ্যাট্রিক করেছেন ফটিকছড়ি পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইছমাইল হোসেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে তার প্রাপ্ত ভোট ১২ হাজার ৭৫। তার নিকটতম প্রতিদন্ধী স্বতন্ত্র প্রার্থী এএসএম মিনহাজুল ইসলাম জসিম মোবাইল ফোন প্রতীকে পেয়েছেন ৬ হাজার ৮শ’ ৮৯ ভোট। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল পাশা চৌধুরী পেয়েছেন ৩শ’ ৭২ ভোট।
অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার ও রির্টানিং কর্মকর্তা মো. কামরুল আলম ফটিকছড়ি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক হলে এ বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, মেয়র আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইছমাইল হোসেন ২০১২ সালে চশমা প্রতীক নিয়ে ফটিকছড়ি পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র হন। ২০১৭ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি ফটিকছড়ি পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
জানা গেছে, আজ বুধবার (২ নভেম্বর) ফটিকছড়ি পৌরসভা নির্বাচন ইভিএম’র মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে কোনো সংঘাতের খবর পাওয়া না গেলেও বিচ্ছিন্নভাবে সারাদিন দুই প্রার্থী পাল্টাপাল্টি অনেক অভিযোগ করে।
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাব্বির রহমান সানি।
সরেজমিনে কয়েকটি ভোট কেন্দ্র ঘুরে সকাল ৮টা থেকে ভোটারদের সারি সারি লাইন লক্ষ্য করা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তবে ফটিকছড়ি পৌরসভায় প্রথমবার ইভিএমে ভোট হওয়ায় কিছু কিছু ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় ভোট প্রদানে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠদের ক্ষেত্রে এ ধরনের বিড়ম্বনায় পড়ার অভিযোগ বেশি পাওয়া গেছে।
সকাল সাড়ে ৮টায় রাঙামাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র ও চৌমুহনী বাজার এলাকায় প্রচুর ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড ধুরুং আতরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। এ কেন্দ্রে চারটি ইভিএম মেশিনের মধ্যে একটি মেশিনে কয়েকবার সমস্যা দেখা দেওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ভোটার ও ভোট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মো. রফিকুল ইসলাম নামে এক ভোটার বলেন, “সকাল ৯টায় লাইনে দাঁড়িয়েছি কিন্তু যান্ত্রিক সমস্যার কারণে এখনো ভোট দিতে পারিনি। আমি কাজের মানুষ, ভোট দিয়ে কাজে যাব কিন্তু গরমে লাইনে প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি।”
তবে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দাবি সামান্য সমস্যা ছিল ঠিক হয়ে গেছে।
একই সময়ে রাঙামাটিয়া ফকির মোহাম্মদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ইভিএম ম্যাশিনে সমস্যা দেখা দেয়ার কথা জানান ভোটার তপন শীল সহ অনেকে।
ওই কেন্দ্রের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “ইভিএম-এর কোনো সমস্যা হয়নি। ভোটাররা চাপ দিতে না জেনে মেশিনের কী বাটন নষ্ট করে ফেলেছে। আমরা এটি পাল্টিয়ে দিয়েছি। ভোটার যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ ভোটগ্রহণ চলবে।”
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বরত ফটিকছড়ির সহকারী কমিশনার এটিএম কামরুল ইসলাম বলেন, “সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ চলছে, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি। আশা করি শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হবে।”
নির্বাচনে মেয়র পদে তিনজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩০ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
১৯টি ভোট কেন্দ্রের ১৪টি অস্থায়ীসহ ১০৩টি বুথে ৩৬ হাজার ২শ’ ৪৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
বিশেষ করে ইভিএমে ভোটগ্রহণ এবং কেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করায় ভোটারদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড়ে সেলিনা আকতার, ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে রোকেয়া বেগম, ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে ফিরোজা বেগম নির্বাচিত হয়েছেন।
সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১নং ওয়ার্ডে রফিকুল আলম, ২নং ওয়ার্ডে রাকিব উদ্দীন, ৩নং ওয়ার্ডে হেলাল উদ্দীন, ৪নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, ৫নং ওয়ার্ডে জহিরুল ইসলাম বাবর, ৬নং ওয়ার্ডে জসীম উদ্দীন, ৭নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ এহসান করিম, ৮নং ওয়ার্ডে গোলাপ মাওলা, ৯নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ হাসেম নির্বাচিত হন।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাব্বির রহমান সানি বলেন, “সকলের সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।”