ফটিকছড়িতে একের পর এক কৃষকের কাটা ধানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ধানের সাথে এমন শত্রুতায় সাধারণ মানুষের মনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। একইসাথে কৃষকের কষ্টার্জিত ধান ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে তাদের নিঃস্ব করে দেয়া হচ্ছে। ফটিকছড়ির হারুয়ালছড়ি, নাজিরহাট পৌরসভার দৌলতপুর এবিসির পর গতকাল বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে ফটিকছড়ি পৌরসভার দক্ষিণ রাঙ্গামাটিয়া এলাকা এবং খিরাম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের নন্দীরখিলে রাতের আধাঁরে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে কৃষকের স্বপ্ন ও সঞ্চয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফটিকছড়ি পৌরসভা ৪নম্বর ওয়ার্ডের বাঘমারা মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় মধ্যরাত ৩টার দিকে দুর্বৃত্তরা কৃষক সেলিমের তিনটি কাটা ধানের স্তূপে আগুন লাগিয়ে দেয়। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়া আগুনে ছাই হয়ে যায় কৃষকের ছয় মাসের ঘামঝরা শ্রম। স্থানীয়রা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও রক্ষা করতে পারেনি কেটে রাখা ফসল। কৃষক সেলিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি বর্গা নিয়ে জমিতে ধান চাষ করি। ছয় মাস শ্রম দিয়েছিলাম। ফসলও ভালো হয়েছিল। কিন্তু দুর্বৃত্তরা সব ছাই করে দিল। প্রায় ৫ বিঘা জমির ৩০০ আড়ি ধান ছিল পুরো মৌসুমের একমাত্র সম্বল। আমি এখন নিঃস্ব। যারা আমার এতো বড় ক্ষতি করেছে, আমি তাদের শাস্তির দাবি জানাই’। এদিকে, একইরাতে একই কায়দায় খিরাম ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের নন্দীরখীল এলাকায় কৃষক মোহাম্মদ ওসমানের ৩ একর জমির ধান কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঘটনাটিকে ‘অমানবিক’ এবং ‘অসভ্য সমাজের আচরণ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, মানুষের সাথে বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু খাদ্যশস্য পুড়িয়ে দেওয়া কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না। যারা দায়ী তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু ছালেক বলেন, এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক ঘটনা। ওই কৃষকের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। বারবার এমন ঘটনায় কৃষকদের মাঝে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এসব ঘটনা পরিকল্পিত কিনা তা তদন্ত হওয়া জরুরি।
ফটিকছড়ি থানার ওসি নূর আহমদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, এটা অমানবিক ও অত্যন্ত দুঃখজনক। তদন্ত করে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, ঘটনার পরই কৃষি কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। যারাই এই ঘটনার সাথে জড়িত হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এর আগে হারুয়ালছড়ি ও নাজিরহাট পৌরসভার দৌলতপুরে জমিতে কেটে রাখা ধান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ধারাবাহিক এসব ঘটনায় ফটিকছড়ির কৃষকদের মাঝে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ধান ঘরে আসার আনন্দের মৌসুম এখন গ্রাস করেছে অন্ধকার–আগুনে।










