ফটিকছড়িজুড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি | সোমবার , ১২ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৭:২৬ পূর্বাহ্ণ

ফটিকছড়িজুড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন নদী, খাল ও জলাশয় থেকে শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করছে দুর্বৃত্তরা। এর ফলে পার্শ্ববর্তী রাস্তা ও জমিতে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। ইজারা বহির্ভূত যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এছাড়া ড্রেজারের শব্দে পরিবেশপ্রতিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ড্রেজার মেশিন ও বালু পরিবহনে ব্যবহৃত ডাম্প ট্রাক ও ট্র্যাক্টরের শব্দে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। যত্রতত্র বালু উত্তোলন জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। রাতদিন চলে অবৈধ বালু পাচারের কর্মকাণ্ড। ফলে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, সেতুকালভার্ট নষ্ট হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে ধুলোবালিতে এলাকার বায়ুদূষণসহ সার্বিক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের জুগিনাঘাটা, বেড়াজালী এলাকার চম্পাপাড়া, শ্বেতকুয়া এলাকার গজ্জম্মে টিলা এলাকা, কাঞ্চননগর ইউনিয়নের চেঙ্গেরকুল, ফরেস্টর অফিস, পাল্লান পাড়া ও চুরখাঁহাট এলাকা, ফটিকছড়ি পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড উত্তর রাঙ্গামাটিয়া এলাকা, পূর্ব সুয়াবিল হালদাপাড়, ভূজপুর ইউনিয়নের হরিণাকুল, নারায়ণহাট ইউনিয়নের জুজখোলা ও দাঁতমারা, ধর্মপুর, খিরাম ইউনিয়ন, ধুরং, হালদা ও সর্তা খালসহ বিভিন্ন নদীখাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ট্রাক ও ডাম্প ট্রাকসহ ছোটবড় গাড়িতে করে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে পাইন্দং ইউনিয়নের জুগিনাঘাটা এলাকায় ৭ নভেম্বর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। এ সময় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত একটি এঙকেভেটর ও একটি ট্র্যাক্টর জব্দ করা হয়, যা গত ১৪ নভেম্বর জব্দকৃত এঙকেভেটরের মালিক হাজির হয়ে দোষ স্বীকার করায় তাকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বেশিরভাগ এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে এসব বালু উত্তোলন হয়। যার কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হলেও প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ বারবার থেকে অভিযানের পরও থামছে না বালু উত্তোলন।

স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এক জায়গায় বালু তোলা বন্ধ করলে বালু উত্তোলনকারী অন্য জায়গায় বালু তোলা শুরু করেন। আবার বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চালিয়ে মেশিন বা সরঞ্জাম জব্দ করা হলেও উত্তোলিত বালু বিক্রিতে বাধাগ্রস্ত হয় না। ফলে এক জায়গায় বালু তোলা বন্ধ করতেই তারা অন্য স্থানে বালু তোলা শুরু করেন। বালু উত্তোলনকারীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন জায়গা থেকে বালু তোলেন এবং দিনেরাতে ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন গাড়িতে করে বিক্রি করে আসছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে ওইসব এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক স্থান থেকে দীর্ঘদিন বালু তোলার ফলে বড় বড় গর্ত হয়ে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।

নদী ও খাল থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর কতটুকু প্রভাব পড়ছে জানতে চাইলে হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, নদী থেকে অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ কমে যায়। ফলে নদীর ক্ষয় বেড়ে গিয়ে নদীর পাড় ভাঙন ত্বরান্বিত করে। এছাড়া অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তলদেশের বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তন হয়ে যাবে।

এর প্রভাবে তলদেশে বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণীগোষ্ঠীর আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হবে, তেমনি ধ্বংস হয়ে যাবে এদের খাদ্যের উৎসসমূহ। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মৎস্য সম্পদের প্রজনন প্রক্রিয়ায়। অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে পানি দূষণসহ নদীগর্ভের গঠন প্রক্রিয়া পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং কমে যাবে নদী পাড়ের মাটির গুণাগুণ ও কর্মদক্ষতা।

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাব্বির রাহমান সানি বলেন, আমি ফটিকছড়িতে যোগদানের পর থেকে এমপি মহোদয় ও ডিসি স্যারের নির্দেশে অবৈধ বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার বিরুদ্ধে একের পর এক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। পুরো উপজেলায় অভিযান চলমান। অভিযোগ পেলে যেকোনো মুহূর্তে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেসিদের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ফিলিপ লাম
পরবর্তী নিবন্ধছিনতাই কমবে কীভাবে