চট্টগ্রাম কাস্টমসে প্লাস্টিক দানার শুল্কায়নে ঘোষিত মূল্যের অতিরিক্ত শুল্ক আদায়ের অভিযোগ করেছেন আমদানিকারকরা। বিষয়টি নিয়ে ইকবাল এন্টারপ্রাইজ নামের এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেটে আপিল করেন। কমিশনারেট ঘোষিত মূল্যে শুল্কায়নের জন্য গত ২০২০ সালের ৩ মার্চ আদেশ দেন। যার নম্বর–৪০/২০২০। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের তৎকালীন কমিশনার ওই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা আপিলাত ট্রাইব্যুনালে আপিল দায়ের করেন। আপিলাত ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রাম কাস্টমসের আপিল নামঞ্জুর করে ২০২০ সালের ২০ মার্চ ঘোষিত মূল্যে শুল্কায়নের আদেশ দেন। যার নম্বর– সিইভিটি/কেইস (কাস) ৪৭৮/২০২০। এরমধ্যে শুল্কায়ন আদায়ের অতিরিক্ত অর্থ ফেরত চেয়ে সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার বরাবর ইকবাল এন্টারপ্রাইজ ছাড়াও আবেদন করেছেন ফনিক্স এন্টারপ্রাইজ, ইহসান এন্টারপ্রাইজ, ওশ্যান প্যাক, মেসার্স কোহিনুর বাটন এন্ড ট্রিমস ইন্ডাস্ট্রি ও ইমরান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারীরা। ভুক্তভোগী
আমদানিকারকদের অভিযোগ, চিঠি দেয়ার পরেও চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইকবাল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইকবাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্লাস্টিক দানা পেট্রোকেমিক্যালজাত পণ্য, যা রাষ্ট্রীয়ভাবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। প্রতিদিন আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোকেমিক্যালজাত পণ্যের দর উঠানামা করে। আমরা প্লাষ্টিক দানা সৌদি আরব, ওমান ও অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করে থাকি। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ থাকে না। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানি পণ্য ঘোষিত মূল্যে শুল্কায়ন না করে, তাদের মনগড়া মূল্য নির্ধারণ করে শুল্কায়ন করছে। এক্ষেত্রে কাস্টমস আমদানিকারকের ঘোষিত মূল্য বা রেকর্র্ড মূল্য আড়াল করছে। উল্টো নিজদের তৈরি করা শুল্কায়ন মূল্য বা লোডেড মূল্যকে রেকর্ড মূল্য বলে চালিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কোনো পণ্যের ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণ করে শুল্কায়ন করার ক্ষমতা কোনো কাস্টমস কমিশনারকে দেয়নি। আমদানিকারকের ঘোষিত মূল্যে শুল্কায়ন করার জন্য চট্টগ্রাম আপিল কমিশনারেট এবং ঢাকা আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ছাড়াও মহামান্য হাইকোর্টের ৫২ ডিএলআর (২০০০) এইচডি আদেশ আছে। এছাড়া এনবিআরের শুল্ক মূল্যায়ন আদেশ ২০০০ এর বিধি ৪ অনুযায়ী অতীতে তিনজন কমিশনার পেট্রোক্যামিক্যাল জাতীয় পণ্য প্লাস্টিক দানা শুল্কায়নের ক্ষেত্রে ঘোষিত মূল্যে শুল্কায়ন করেছেন। আদেশ দেয়া নথিগুলো হচ্ছে– নথিগুলো হলো– ১৮২৬/এপি/সেকশন–৭(বি)/২০১৫/১৬,১৬৯০/এপি/সেকশন–৭(বি)/২০১৫/১৬,১১০৬/এপি/সেকশন ৭(বি)/২০১৭/১৮,৩৫৬/এপি/সেকশন–৭ (বি)/২০২১/২২, ৩০৩/এপি/সেকশন–৭ (বি)/২০২১/২২, ৩০২/এপি/সেকশন–৭ (বি)/২০২১/২২।
প্লাস্টিক দানার অপর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘ওশ্যান প্যাকের স্বত্বাধিকারী মো. রিয়াদ উদ্দিন বলেন, এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ। কোনো আমদানিকারক চাইলেও পণ্যের ঘোষিত মূল্য কম দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই। আজকের দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে প্লাস্টিক দানার প্রতি কেজির দাম কত, সেটি ইন্টারনেটে সার্চ করলে চলে আসবে। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমস লোডেড মূল্যকে বছরের পর বছর রেকর্ড মূল্যে রূপ দিয়ে আমদানিকারকদের হয়রানি করছে। এক্ষেত্রে তারা এনবিআরের শুল্ক মূল্যায়ন আদেশও মানছে না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম গার্মেন্টস অ্যান্ড এক্সেসরিজ গ্রুপের সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল বলেন, আদালতের আদেশের পরেও আমদানিকারকের ঘোষিত মূল্যে শুল্কায়ন না করাটা অস্বাভাবিক। উল্টো কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিত্য নতুন আইন তৈরি করে আমদানিকারকদের হয়রানি করছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান বলেন, প্লাস্টিক দানা পেট্রোকেমিক্যালজাত পণ্য। আন্তর্জাতিক বাজারে সবসময় এসব পণ্যের দর উঠানামা করে। তাই আমরা সর্বশেষ তিন মাসের আমদানিকৃত পণ্যের শুল্কায়ন বিশ্লেষণ করে শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করি। এই মূল্য নির্ধারণের জন্য কমিটিও আছে। এখানে একেক আমদানিকারক একেক মূল্য ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি করে। আমরা দেখি পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার কত, স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম কত এবং সর্বশেষ ৩ মাস শুল্কায়ন মূল্য কত ধরা হয়েছে। তবে এটি ঠিক, এখন প্লাস্টিক দানার আন্তর্জাতিক বাজার এখন কমতির দিকে। এক্ষেত্রে আমাদের আবার শুল্কায়ন মূল্য পুনঃনির্ধারণের চিন্তা আছে।