প্লট বানিয়ে বিক্রি হচ্ছে নগরের ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়। এমনকি অনেকে হাউজিং সোসাইটি গঠন করেও পাহাড় কেটে প্লট বানাচ্ছে। আবার সেখানে বাড়ি নির্মাণে অনুমোদন দিচ্ছে সিডিএ। এমনকি রাস্তা নির্মাণ এবং বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য পরিষেবাও চালু করা হচ্ছে পাহাড় কেটে গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকায়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো একটি পত্রে এ তথ্য উঠে আসে। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছেও ওই চিঠি পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় বা টিলা হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় বা স্থানে কাউকে বাড়ি করার ক্ষেত্রে সিডিএর অনুমোদন স্থগিত করাসহ নগরের পাহাড় রক্ষায় চার দফা নির্দেশনাও দেওয়া হয়। অন্যান্য নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় বর্তমানে পাহাড় বা টিলা হিসাবে চিহ্নিত অথবা দৃশ্যমান পাহাড় ও টিলাসমূহ থেকে সকল অবৈধ অধিবাসীকে উচ্ছেদসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, পাহাড় অথবা টিলা সমৃদ্ধ এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন সংশ্লিষ্ট সকল অবৈধ পরিষেবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ও নতুন সংযোগ বন্ধ করা। এছাড়া বিদ্যমান পাহাড় বা টিলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় জনসচেতনতা কার্যক্রম গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এসব নির্দেশনার আলোকে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ৩ সেপ্টেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানমের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আকবরশাহ উত্তর লেকসিটি, হারবাতলী, শাপলা হাউজিং ও লতিফপুর এলাকাসহ ১৫টি পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শন করেন। এর প্রেক্ষিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ–সচিব ড. মো. ফয়সাল আবেদীন খান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর পত্র দেন।
ওই পত্রে বলা হয়, পাহাড় বা টিলা কাটার ফলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ পরিবেশ ক্ষতির বিষয়টি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ও টিলা কাটা হচ্ছে সংবাদের প্রেক্ষিতে পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে তাৎক্ষণিকভাবে পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচনকারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও দণ্ড আরোপ এবং নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়। পরবর্তীতে আরো বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ও টিলা ধ্বংস করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এতে বলা হয়, সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়ের জমি প্লট আকারে বিক্রয় করা হচ্ছে। কতিপয় ব্যক্তি বিভিন্ন হাউজিং সোসাইটি গঠনপূর্বক পাহাড় কেটে প্লট আকারে বিক্রি করছে এবং কর্তিত স্থানে রাস্তা নির্মাণ এবং বিদ্যুৎ সংযোগ ও অন্যান্য পরিষেবা চালু করেছে। এছাড়া সিডিএ থেকে অনুমোদন গ্রহণ করে জমি কিনেছেন এবং পাহাড়ে বাড়ি করছেন।
পত্রে বলা হয়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ধারা ৬খ অনুযায়ী, ‘কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় বা টিলা কর্তন ও বা মোচন করা যাবে না।’ উক্ত আইনের বিধান লঙ্ঘন করে পাহাড় কাটার কারণে সিডিএকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করার নজিরও রয়েছে। পাহাড় কর্তনের বিষয়টি ব্যক্তি পর্যায় হতে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠান পর্যায় পর্যন্ত ছাড়িয়েছে উল্লেখ করে বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলা হয়।
এদিকে চিঠি পাওয়ার গত বুধ ও বৃহস্পতিবার আকবরশাহ এলাকায় অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। দুদিনে ৭০টি ছোট–বড় স্থাপনা, ২৮টি বিদ্যুৎ সংযোগ ও ৮টি পানির সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়।
চিঠি পাওয়ার পর গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের সিনিয়র কেমিস্ট রুবাইয়াত তাহরীম সৌরভ আজাদীকে বলেন, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি ইতোমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। আমরা ৮টি মামলা করেছি। আরো কয়েকটি মামলা হবে।