প্রেস ক্লাবে ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তন উদ্বোধন

ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে বিভেদ সৃষ্টি গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয় : খসরু

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৮ নভেম্বর, ২০২৫ at ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার বাতিঘর ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের সন্তান এম এ মালেকএর নেতৃত্বে আজাদী তার ঐতিহাসিক ভূমিকা অব্যাহতভাবে পালন করে যাচ্ছে। এসময় সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ক্যান্সার ইনস্টিটিউট গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এম এ মালেকের ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি। গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের নবনির্মিত ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দৈনিক আজাদীর অর্থায়নে ও পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে মিলনায়তনটি সংস্কার ও ডিজাইন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (সিজেএ) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান ওসমান গণি মনসুর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি।

আমীর খসরু রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে যে ঐকমত্য হয়েছে তার বাইরে গিয়ে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা হলে তা গণতন্ত্রের জন্য ভালো হবে না বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি সমাজে, রাজনীতিতে সংলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আপনারা জানেন, একটা রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছে। দীর্ঘ আলোচনার পর আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। ঐকমত্যে পৌঁছার পর ঐকমত্যের পক্ষে সনদ সই হয়েছে। এটা আমাদেরকে মেনে নিতে হবে। আমরা যদি সেই ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে, আবার নিজের মত কোথাও কথা বলতে থাকি, সমাজে সমাজে একটা বিভেদ সৃষ্টি করতে চাই, রাজনীতিতে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাই, সেটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো না। গণতন্ত্রের চিন্তার বিপরীতে চিন্তা থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে।

খসরু বলেন, সংলাপ গণতন্ত্রকে যেভাবে এগিয়ে নেয়, সমাজকেও সেভাবে এগিয়ে নেয়। আমরা কিন্তু একটু বিচ্ছিন্ন জাতি হয়ে গেছি। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া না থাকার জন্য এবং গণতান্ত্রিক অর্ডারের অনুপস্থিতিতে আমরা সকলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। আমরা সংলাপ থেকে দূরে সরে গেছি। আমরা একে অপরের সাথে কথা বলা থেকে দূরে সরে গেছি। সংলাপের মাধ্যমে আমাদের মত ঐক্য করার যে সমাধান সেটা কিন্তু অত্যন্ত জরুরি।

খসরু বলেন, সংলাপের মাধ্যমে সমাধান, এটা জাতীয় চরিত্রে আমাদেরকে নিয়ে আসতে হবে। আমরা সংলাপ করব এবং ঐকমত্যে পৌঁছব। যতটুকু ঐকমত্যে পৌঁছবো সেটা সকলের জন্য ভালো। যতটুকু ঐক্যমতে পৌঁছুতে পারবো না, সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে, সেটা আমাকে সহনশীলতার সাথে ও সম্মানের সাথে মেনে নিতে হবে। ঐকমত্যের বাইরে যে বিষয়টা থাকে সেটা বাংলাদেশের জনগণের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব কেউ একা নিতে পারে না। কেউ একা সব ভালো কথা বলতে পারে না, সত্য কথা বলতে পারে না এবং সমাধান দিতে পারে না।

এসময় সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ক্যান্সার ইনস্টিটিউট গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখায় দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের প্রশংসা করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান যখন সফলতার পর্যায়ে পৌঁছে তখন তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকে। সামাজিক দায়বদ্ধতার সাথে সম্পদ ও সুনামের সর্ম্পক থাকে। কিন্তু এই জায়গা থেকে আমরা দূরে সরে গেছি। ভোগ বিলাসের মধ্যে এমন অবস্থায় পৌঁছে গিয়ে বাকি মানুষের কথা ভুলে যাচ্ছি, এমনকি আত্মীয়স্বজনের কথাও ভুলে যাচ্ছি। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এইক্ষেত্রে আজাদী কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, তারা মা ও শিশু হাসপাতালে ক্যান্সার ইনস্টিটিউট করার জন্য অবদান রেখেছ।

খসরু বলেন, একটি নতুন বাংলাদেশ শুধু সরকার করতে পারবে না। নতুন বাংলাদেশের জন্য সকলের সেই মন মানসিকতা থাকতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে অবদান ও ভূমিকা রাখতে হবে। সবাই মিলে দেশ গড়ি। আমাদের দায়বদ্ধতাকে মাথায় রেখে চলার পথে সবসময় ধারণ করতে হবে।

আমীর খসরু ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনের ডিজাইন ও সংস্কার কাজের প্রশংসা করেন। তিনি এ মিলনায়তনের আকার আরো বড় করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তন একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে, চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ এই মিলনায়তনে বসে বিভিন্ন সংলাপের মাধ্যমে সমাজ গঠনে সহায়তা করবে এবং রাজনীতিকে আরো উন্নতকর অবস্থায় ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নেবে।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, দৈনিক আজাদী আমাদের হৃদয়ে সবসময় জাগরুক থাকুক। আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক হয়তো বা মনে করেছিলেন, আজাদীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একদিন মহান স্বাধীনতা আসবে, আমরা একটি স্বাধীন দেশ পাব। আজ আমরা সেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, এটা গর্বের। এসময় তিনি বলেন, আমাদের এই স্বাধীনতার মূলমন্ত্রমানবিক মর্যাদা, গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং সামাজিক ন্যায় বিচার; এগুলো যেন আমরা ফিরে পাই। আমরা যাতে মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করতে পারি।

একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক বলেন, চট্টগ্রামবাসীর যে আশাআকাক্সখা আছে সেগুলোকে ধারণ করে আজাদীকে এগিয়ে নিতে চাই। আমরা চট্টগ্রামবাসীকে ভালোবাসি, চট্টগ্রামবাসী আমাদের ভালোবাসেন। চট্টগ্রামবাসীর সঙ্গে থেকে তাদের সুখদুঃখের কথা সবসময় তুলে ধরব।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটি অদ্ভুত বিভাজন আছে, ঢাকা থেকে পত্রিকা বের হলে সেটি ‘জাতীয় পত্রিকা’, আর ঢাকার বাইরে থেকে প্রকাশিত হলে সেটা ‘মফস্বল পত্রিকা’। আমার কাছে এটি একটি বৈষম্যমূলক ধারণা। আমি আবার এটাকে জাতীয় ও বিজাতীয় পত্রিকা বলি। তিনি বলেন, আমাকে অনেকে বলেন, আজাদী ঢাকা থেকে বের না করলে তো জাতীয় পত্রিকা হওয়া যাবে না। আমি বলি, আমি চাইলে আগামীকাল থেকেই আজাদী ঢাকা থেকে বের করতে পারব, সে সক্ষমতা আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। কিন্তু সেটা আমি করব না। কারণ, আমার বাবা দৈনিক আজাদী বের করেছিলেন চট্টগ্রামের মানুষের সুখদুঃখ, আশাআকাক্সখা এবং সমস্যার কথা সরকারের সামনে তুলে ধরার জন্য, ঢাকায় বসে জাতীয় স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য নয়।

এম এ মালেক বলেন, আমার বাবা ইলেক্ট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ওনি যখন পাশ করেন তখন চট্টগ্রামে ইলেক্ট্রিসিটির কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সেজন্য বাবাকে রেঙ্গুনে গিয়ে চাকরি নিতে হয়। সেখান থেকে পি কে সেন ওনাকে নিয়ে আসেন। চট্টগ্রামবাসী বাবার হাত ধরেই বিদ্যুৎ পেয়েছে, এটার জন্যও গর্ববোধ করি।

ওয়াহিদ মালেক বলেন, আজকে উদ্বোধন হওয়া ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তন শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি আমাদের মুক্ত চিন্তা, সাংবাদিকতা ও গঠনমূলক আলোচনার প্রতীক। আমার দাদা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ছিলেন সত্যনিষ্ঠ, নির্ভীক ও দেশপ্রেমিক। তার নামে হওয়া এই মিলনায়তন আগামী প্রজন্মের সাংবাদিকদের অনুপ্রেরণার কেন্দ্র হয়ে ওঠবে। এখানে অনুষ্ঠিত হবে সংবাদ সংম্মেলন, আলোচনা সভা, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি। যা সমাজে আলোকিত চিন্তার বিকাশ ঘটাবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই মিলনায়তন হবে সত্য ও সাহসের আলোকবর্তিকা।

ওসমান গণি মনসুর বলেন, আজাদীর সাথে চট্টগ্রামের যোগসূত্র ছিল। আমি গর্ববোধ করি, প্রথম দিন থেকেই আজাদী আমার বাসায় দেখতে পেয়েছি। বর্তমানে প্রতিদিন ৭/৮টা পত্রিকা পড়ি, কিন্তু প্রথম যে পত্রিকা পড়ি সেটা হচ্ছে আজাদী।

জাহিদুল করিম কচি বলেন, আজকের এই চমৎকার আয়োজন সম্ভব হয়েছে আজাদী পরিবারের কারণে। ক্লাবের নিচ তলায় ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তন ছিল, সেটা অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। আমরা বলার পর আজাদী পরিবার এটা (নতুন মিলনায়তন) সংস্কার করে দিয়েছেন। এজন্য চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এবং সব সাংবাদিকের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত, কালের কণ্ঠের ব্যুরো প্রধান মুস্তফা নঈম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সিএমইউজের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার, এ্যাবের সভাপতি জানে আলম সেলিম, বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি মিয়া মোহাম্মদ আরিফ। প্রেস ক্লাবের অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য গোলাম মওলা মুরাদের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আজাদীর নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকার নিজেই ভোট ব্যাহত করার অবস্থা তৈরি করছে : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধউখিয়ায় ১০ হাজার মানুষ পেল সুপেয় পানি