নগরীর পাহাড়তলী থেকে গত ২ এপ্রিল উদ্ধার হওয়া যুবতীর গলিত লাশের পরিচয় মিলেছে। ধরা পড়েছে খুনিও। হত্যার শিকার হতভাগ্য যুবতীর নাম মিমি আকতার (২৮)। খুনী তারই প্রেমিক পল্লব বর্মন (৩৪)। দু’জনেরই গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর এলাকার কালামপুর গ্রামে। খুনী পল্লব বর্মন কালামপুর গ্রামের জয়দেব বর্মনের ছেলে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মার্চ নগরীর পাহাড়তলী জোলাপাড়া মাধবী ভবনের ভাড়া বাসায় মিমি নামে ওই যুবতী খুনের শিকার হন। এরপর প্রেমিক পল্লব মিমির নিথর দেহ ফেলে বাসার বাইরে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। প্রায় ১ মাস পর গত ১ এপ্রিল দিবাগত রাত ৮টার দিকে পাহাড়তলীর ওই বাসা থেকে দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পাহাড়তলী থানা পুলিশ মিমির গলিত লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধার করলেও প্রথমে লাশের পরিচয় চিহ্নিত করতে পারেনি পাহাড়তলী থানা পুলিশ। এরপর পাহাড়তলী থানার এসআই সুবীর বিক্রম দে বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ক্লুলেস ওই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডি। লাশ উদ্ধার করা কক্ষ থেকে একটি ছোট্ট আলামতের সূত্র ধরে মৃতের বাবাকে খুঁজে বের করে পুলিশ। দাফনের প্রায় ২৬দিন পর ২৬ এপ্রিল পাহাড়তলী থানার পুলিশের কাছে থাকা ভিকটিমের কাপড় দেখে মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন তার পিতা। পরিচয় উদ্ধার হয় ভিকটিমেরও (মিমি)। গত ৯ মে সিআইডির এলআইসি টিম ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে পল্লবকে গ্রেপ্তার করে। ওইদিনই পল্লবকে চট্টগ্রামে এনে আদালতে উপস্থাপন করে সিআইডি। ওইদিনই আদালতের আদেশে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সিআইডি চট্টগ্রাম বিভাগের একটি টিম। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সারোয়ার জাহানের খাস কামরায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় পল্লব বর্মন।
পল্লবকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এক সন্তানের জননী মিমির স্বামী ৭ বছর ধরে প্রবাসে থাকেন। বিয়ের মাত্র ২১ দিনের মাথায় স্বামী প্রবাসে চলে যান। এরপর মিমির কোল জুড়ে আসে এক পুত্র সন্তান। সন্তানের বয়স ৬ বছর হতে চললেও প্রবাসী স্বামী এখনো ফিরেননি বিদেশ থেকে। এদিকে স্বামীর সাথে কথা বলার জন্য মোবাইলে ফ্লেঙি লোড নেয়ার জন্য যেতেন পাশের দোকানি পল্লব বর্মনের মুদি দোকানে। সেই সুবাদে ধীরে ধীরে পল্লব বর্মনের (৩৪) সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়।
আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে পল্লব জানিয়েছে, প্রায় দুই বছর প্রেমের পর সংসার পাতার মোহে পল্লব মিমিকে নিয়ে চলে আসেন চট্টগ্রামে। গত ১ মার্চ নগরীর পাহাড়তলী আবদুল আলী নগরের জোলা পাড়ার মাধবী ভবনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেন পল্লব। এর আগে বেশ কয়েকদিন তারা কঙবাজার ও সেন্টমার্টিন বেড়াতে যান। পাহাড়তলীর বাসা উঠার পর পল্লব যোগাযোগ করেন তার আগের স্ত্রীর সাথে। তার আগের স্ত্রী থাকার বিষয়টি জানার পর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে মিমি। আগের স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করার বিষয়টি জানতে পেরে পল্লবের উপর রাগ করে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেন মিমি। এরপর মিমি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে পাহাড়তলীতে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসাও নেন। একটু সুস্থতাবোধ করলে মিমি পুনরায় পল্লবের সাথে ঝগড়া শুরু করে। দুইদিন পর ৩ মার্চ সন্ধ্যায় বেলের শরবতের সাথে কীটনাশক মিশিয়ে মিমিকে খাইয়ে দেয় সে। একপর্যায়ে মিমি নিস্তেজ হয়ে পড়লে টাকাপয়সা, মোবাইল, কাপড়চোপড় নিয়ে বাইরে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায় পল্লব। প্রথমে ঢাকা আবদুল্লাহপুর গিয়ে মিমির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ফেলে দেয়। পরে ময়মনসিংহের ভালুকায় এক আত্মীয়ের বাসায় চলে যায় পল্লব। গত ৯ মে সেখান থেকে গ্রেপ্তার হয় পল্লব।
এ বিষয়ে সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন. ‘এটি একটি ক্লুলেস মামলা। লাশ উদ্ধারের পর লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। কিভাবে খুনের শিকার হয়েছেন সেটাও জানা সম্ভব ছিল না। তবে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা লাশের পরিচয় শনাক্ত করি। পাশাপাশি সিআইডির এলআইসি ভালুকা থেকে পল্লবকে গ্রেপ্তার করে। আমরা পল্লবকে চট্টগ্রামে এনে আদালতে উপস্থাপন করি। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদেই সে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এতে করে দেড় মাসের মাথায় একটি ক্লুলেস মামলার ফলাফল বেরিয়ে এসেছে। আমরা দ্রুতই মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করতে পারবো।’