প্রিয়ম গ্রেপ্তার, নজরদারিতে আরো কয়েকজন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ

নগরীর চেরাগী এলাকায় আজাদী গলির পেছনে দুই কিশোর গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আসকার বিন তারেক ওরফে ইভান খুনের ঘটনায় প্রিয়ম বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার (২৭ এপ্রিল) রাতে নগরীর সিআরবি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিএমপির সহকারী কমিশনার কোতোয়ালী মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, দুই গ্রুপের মারামারির মধ্যে ইভান প্রতিপক্ষ গ্রুপের শোভনের পায়ে ছুরিকাঘাত করে। এর পরপরই ইভান ও তার বন্ধুদের ঘিরে ফেলে প্রিয়ম, রুবেল, প্রান্ত, ধ্রুব, শচীনসহ অন্যান্যরা। উভয় পক্ষই অন্তত ৬/৭ টা ছুরি ব্যবহার করে। প্রাথমিকভাবে ছুরিকাঘাতে এক গ্রুপের ইভান ও অপর গ্রুপের শোভন আহত হওয়ার তথ্য পেলেও পুলিশ জানতে পেরেছে আরো অন্তত তিন চারজন আহত হয়েছে। এর মধ্যে তেরটি সেলাই নিয়ে বাসায় আরো একজন আছে বলেও তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। সবাই পুলিশের কঠোর নজরদারিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। গ্রেপ্তারকৃত প্রিয়ম বিশ্বাস (২৫) চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী গ্রামের বুড়ির দোকান মহাজন বাড়ির রানা বিশ্বাসের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা বিচারাধীন আছে।
কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবির আজাদীকে বলেন, গ্রেপ্তার প্রিয়ম বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে ঘটনার দুই ঘণ্টার মধ্যে শোভন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওসি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া আসামি শোভনও ছুরিকাহত, পায়ে ৭টি সেলাই পড়েছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে রিমান্ডে নেওয়া যাচ্ছে না। আমাদের ৪টি টিম অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। ডিবি পুলিশও মাঠে আছে।

পুলিশের তদন্তে এসেছে, ২১ এপ্রিল কাজীর দেউড়ি অবদান হোটেলে ধ্রুবকে মারধর াএবং চেয়ার ছুঁড়ে মেরেছিল ইভান। পরদিন সেন্টমেরীস স্কুলের সামনে ইভানের বন্ধু অমিতকে প্রতিপক্ষ গ্রুপের ছেলেরা মারধর করে এবং মাথা ফাটিয়ে দেয়। তখন ইভান এসে বলে, ‘তুই হাসপাতালে যা, এরপর থানায় যা, আমি দেখে নিচ্ছি’। এ কথা বলেই সে তার সঙ্গীদের নিয়ে আন্দরকিল্লা এবং পরে রাজাপুকুর লেন দিয়ে চেরাগী এলাকায় এসে ধ্রুব, শোভনদের দেখতে পায়। তাদের মধ্যে মারামারির এক পর্যায়ে ইভান ছুরিকাঘাত করে শোভনকে। এ সময় শোভন ইভানকে লাথি মেরে চিৎকার শুরু করলে তার পক্ষের লোকজন এগিয়ে আসে। এরপর সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। উভয় গ্রুপ ছুরি হাতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তবে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বেশি দেখে ইভানের সাথে থাকা ছেলেরা পালিয়ে যায়। ইভান একা হয়ে পড়ে। এ সময় গ্রেপ্তারকৃত প্রিয়ম এবং রুবেল দত্ত ইভানকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। মোহান ও সৌরভ ইভানকে ছুরিকাঘাত করে।
পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্রিয়ম ভাবতে পারেনি, পুলিশ তার পেছনে লেগেছে। প্রথম দিকে টেনশনে থাকলেও ইভানের বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ তারেক বাদি হয়ে যে মামলা করেছে, সেখানে তার নাম না দেখে সে আশ্বস্ত হয়। এ জন্য সে নগর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া বা ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ রাখার প্রয়োজন মনে করেনি। কিন্তু ফুটেজ দেখে পুলিশ তাকে চিহ্নিত করে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে তাকে অনুসরণ করতে করতে বুধবার রাতে সিআরবি এলাকায় পেয়ে যায় এবং গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রিয়ম পুলিশকে জানিয়েছে, ঘটনার দিন তাদের গ্রুপের ইফতার পার্টি ছিল। পার্টি শেষে চেরাগী মোড়স্থ সাধু মিষ্টান্ন ভান্ডারের পাশে দাঁড়িয়ে তারা কয়েকজন সিগারেট খাচ্ছিল। এর মধ্যে ভেতর থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তারা আজাদী গলির পেছনে ছুটে যায় এবং সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে আহত ইভানকে সে ও আরো কয়েকজন ধরাধরি করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইভানকে মৃত ঘোষণা করলে ইভানের লাশ ফেলে তারা পালিয়ে যায়।
সিএমপির সহকারী কমিশনার মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ছুরিকাঘাতের পর প্রিয়মসহ কয়েকজন রক্তাক্ত ইভানকে ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছিল। তদন্তে আমরা তথ্য পেয়েছি, ইভানকে ছুরিকাঘাতকারী করে মোহানের কথিত বড় ভাই হচ্ছে প্রিয়ম। ঘটনার দিন প্রিয়ম পাঞ্জাবি পরা ছিল। ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ভিডিও দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, প্রিয়ম হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকজনকে কোপাতে দেখে আরেকজনের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধমানুষ ছুটছে গ্রামে