প্রাথমিক শিক্ষা : ভাষা শিক্ষাদানে পঠন-দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশল

ফয়েজুন্নেসা মিলি | শুক্রবার , ৪ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

এই ভাষাতে প্রথম বোলে

ডাকনু মায়ে মা মা বলে’

তাই এই ভাষাতেই বলি আমি আমার মনের কথা। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কোন ভাষার কথা বলছি। এই ভাষাতেই আমরা মনের ভাব প্রকাশ করি। মাতৃভাষা বাংলা। এটা আমাদের রাষ্ট্রভাষা। রাষ্ট্রের সব কাজেই এই ভাষা ব্যবহৃত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত, ব্যবসায়, বাণিজ্যে সব ক্ষেত্রে এই ভাষার ব্যবহার। তাই এই ভাষা শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে পরিবার এবং শিক্ষক উভয়েরই সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। নতুবা কখনোই সম্ভব নয়। শিশু জন্মের পর পরি যখন আধো আধো বোলে কথা বলে তখন থেকেই শিখে মাতৃভাষার ব্যবহার। পরিবার শিশুর শিখনের একটা ক্ষেত্র। শিশুদের সাথে সবসময় প্রমিত উচ্চারণে কথা বলা উচিত। যাতে যে কোনো শিশু সঠিক উচ্চারণে শব্দ, বাক্য এগুলো বলতে পারে। অপরদিকে প্রাথমিক স্তরটা হলো শিশুদের আনুষ্ঠানিকভাবে শেখার প্রথম স্তর। এই স্তরে পাঠদানে ও শিক্ষকদের যথেষ্ট সচেতন হয়ে পাঠদান করতে হবে। প্রথমত বাংলা বর্ণমালা স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ যদি শিশু সঠিক উচ্চারণে শিখে তাহলে তার উচ্চারণ ও বানান ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের সবল পাঠক তৈরিতে সকল শিক্ষক আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে। তবে আমাদের শিক্ষকদেরকে কথা বলায় আঞ্চলিকতা পরিহার করতে হবে। শিশু যখন পরিচিত জিনিস বা বস্তু দর্শনের সাহায্যে শিখে সে শিখন বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়। আবার অনেক সময় শিশু হাতে কলমে শেখে, দেখে শেখে শুনে শেখে অনেক ভাবেই শিখে।

প্রাথমিক শিক্ষা নতুন কারিকুলামে নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জনের জন্য শিখনের ক্ষেত্র নির্বাচন করা হয়েছে ১০ টি। সেগুলো হল যথাক্রমে ) ভাষা ও যোগাযোগ ২) গণিত ও যুক্তি ৩) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ৪) ডিজিটাল প্রযুক্তি ৫) পরিবেশ ও জলবায়ু ৬) সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব ৭) জীবন ও জীবিকা ৮) মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষা ৯) শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ১০) শিল্প ও সংস্কৃতি।

ভাষা শিক্ষাদানে শিখন ক্ষেত্রে ১ম টি বেশি কার্যকর। এই শিখনের ক্ষেত্রগুলো থেকে শিশুর বয়স, সামর্থ্য ও চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক যদি সঠিক পাঠদান কৌশল নির্বাচন করে পাঠদান করেন সে ক্ষেত্র শিশু অবশ্যই আনন্দের সাথে শিখবে, শিখন দীর্ঘস্থায়ী হবে সৃষ্টি হবে স্বাধীন পাঠক।

শিশুকে স্বাধীন পাঠক হিসাবে গড়ে তুলতে হলে ভাষা শিক্ষাদানে পঠন দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। তাই কিছু কৌশল যদি পাঠদান ও পাঠদানের বাইরে নিয়মিত চর্চা করি তবে পঠন দক্ষতা অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে।

পঠন দক্ষতা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা যায় এমন কৌশলগুলো হল:

) প্রাথমিকে প্রথমে ধ্বনি ও বর্ণের ব্যবহার যথাযথভাবে শেখাতে হবে।

) যুক্ত বর্ণ, ফলা চিহ্ন, যতিচিহ্নের ব্যবহার শিখাতে হবে এবং প্রায়োগিক দিক মূল্যায়ন করতে হবে।

) শব্দ জ্ঞান বাড়ানোর কৌশলগুলো পাঠদানে ব্যবহার করতে হবে।

) বিভিন্ন ধরণের সৃজনশীল কৌশল (জিগশো পাজল, গল্প বলা, মাইন্ড ম্যাপিং, পোস্ট বঙ, স্নোবল, শব্দ সিড়ি তৈরি, ) ইত্যাদি প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা যাবে। এতে শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।

যে শিখনে আনন্দ থাকে সে শিখন দীর্ঘস্থায়ী হয়।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের পঠন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কিছু সহায়ক কৌশল হলো:

) নিয়মিত পড়া: নিয়মিত পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। এটি পাঠের স্বাভাবিকতা বাড়াবে এবং মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করবে।

) বিভিন্ন ধরনের বই পড়া: বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার চেষ্টা করুন, যেমন উপন্যাস, তথ্যবই, প্রবন্ধ ইত্যাদি। এটি শিক্ষার্থীদের শব্দভাণ্ডার ও বোঝার দক্ষতা বাড়াবে।

) নোট তৈরি করা: পাঠের সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করতে হবে। এটি মনে রাখতে ও পরবর্তী সময় ফিরে দেখার জন্য সহায়ক হবে।

) পাঠ বিশ্লেষণ: পড়া শেষে পাঠের মূল ভাবনা, চরিত্র বিশ্লেষণ করতে হবে।

) বইয়ের সৃজনশীল আলোচনা: বন্ধু বা সহপাঠীদের সাথে বই নিয়ে আলোচনা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এটি পাঠ্য বিষয় বুঝতে এবং গভীরভাবে চিন্তা করতে সহায়তা করে।

) পাঠের আগে ও পরে রিভিউ: বই পড়ার আগে সারাংশ ও শেষে পর্যালোচনা করা উপকারী হতে পারে, যা বইয়ের বিষয়বস্তু ভালোভাবে উপলব্ধিতে সাহায্য করে।

) গবেষণা ও অ্যানালাইসিস: শিক্ষার্থী যে বইটি পড়ছে তার বিষয়বস্তু সম্পর্কিত কিছু গবেষণা করার মানসিকতা থাকতে হবে। এটি বোঝার ক্ষেত্রে আরও সাহায্য করতে পারে।

এই কৌশলগুলি অনুসরণ করলে শিক্ষার্থী পঠন দক্ষতা ধীরে ধীরে উন্নত হবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে পাঠদানে শিক্ষকের যদি আন্তরিকতা না থাকে তবে শিক্ষার্থী কখনোই স্বাধীন পাঠক হবে না। তাই স্বাধীন পাঠক তৈরি শিক্ষকের আন্তরিকতা ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, এয়াকুবদণ্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলেবাননে সর্বাত্মক যুদ্ধের শঙ্কা : অস্থির বিশ্ব
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ২.৮৮ কোটি টাকা